ঘরে বসে আয় করার জন্য বর্তমান সময়ের সব চেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ফ্রিল্যান্সিং। মূলত এটি স্বাধীন পেশা এবং উচ্চ আয়ের মাধ্যম হওয়ার কারণে তরুণ সমাজের মধ্যে বেশ আলোড়ন তৈরি করেছে।
ফ্রিল্যান্সিং হলো এমন একটি কাজ যেখানে কোনও ব্যক্তি নিজের কাজ করতে অন্যদের বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে কোনও নির্দিষ্ট প্রকল্পে যোগদান করে এবং নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে তারা সেবা প্রদান করে। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন, কাজের পরিমাণ ও সময়ের নির্ধারণ করতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং সাধারণতো অনলাইনে প্ল্যাটফর্মগুলোতে হয় এবং এটি আপনাকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কাজ করার সুযোগ দেয়, যেমন লেখা, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিও সম্পাদনা ইত্যাদি।
তবে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে হলে প্রয়োজনীয় স্কিলের পাশাপাশি বেশকিছু বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে। এগুলো হলো-
আত্মবিশ্বাস হারানো যাবে না
সফল ফ্রিল্যান্সার হতে চাইলে নিজের ভেতরে আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। কখনও আত্মবিশ্বাস হারানো যাবে না। আমাকে দিয়ে হবে না। আমি পারব না এই রকম চিন্তা করা যাবে না। একটা কথা মনে রাখতে হবে, আমরা কেউ আসলে কোনো কিছু মায়ের পেট থেকে শিখে বা অভিজ্ঞতা নিয়ে আসি না। তাই কোনো সময় হতাশ হওয়া যাবে না। আমি পারব এইরকম আত্মবিশ্বাস সব সময় নিজের মধ্যে রাখতে হবে। প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখার মানসিকতা নিজের মধ্যে রাখতে হবে।
শেখার সময় একাধিক বিষয়ে আগ্রহী হওয়া যাবে না
ফ্রিল্যান্সিংয়ে একটি নিদিষ্ট বিষয়ে অনেক দক্ষ হতে হবে। কোনো বিষয়ে অল্প স্কিল বা অল্প জানা দিয়ে হবে না। তাছাড়া শেখার সময় একাধিক বিষয়ে কাজ শেখা যাবে না। এতে হযবরল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
যেমন আজ ডিজিটাল মার্কেটিং শিখলেন, কালকে আবার প্রোগ্রামিং শিখতে শুরু করলেন-এমন অবস্থা হলে কোনো দিন সফল হতে পারবেন না। আপনাকে যে কোনো একটি বিষয়ে শিখতে হবে এবং সেই সেক্টরে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
শেখার আগেই আয়ের চিন্তা করা যাবে না
মাসে লাখ লাখ টাকা অনলাইন থেকে আয় করব এমন ভেবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা যাবে না। নতুন যারা এখন ফ্রিল্যান্সিং করতে আসে তাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ এখন স্কিল অর্জন করার আগেই আয়ের চিন্তা করে। যা এই সেক্টরে ব্যর্থ হওয়ার জন্য একটা বড় কারণ।
কাজ শেখার শুরুতেই এরকম ইচ্ছা থাকলে সমস্যা। কাজ শেখার ওপর আপনার আগ্রহ এবং নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে ধৈর্যের সঙ্গে ফ্রিলান্সিং যাত্রা শুরু করতে হবে। আর একটা সময় পর যখন নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে ফেলবেন, তখন দেখবেন আয় আপনার হচ্ছে এবং প্রতি মাসে সেটা বেড়েই চলছে।
মাঝ পথে থেমে যাওয়া যাবে না
নতুন অবস্থায় যারা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চান তারা একটা কাজ কয়েক মাস শেখার পর কাজটা বেশ কঠিন মনে করে মাঝ পথে হাল ছেড়ে দেন। এই কাজ কোনোভাবেই করা যাবে না।
কারণ শুরুতে যেকোনো কাজ কঠিন বলে মনে হতে পারে। তবে কঠোর পরিশ্রমের করলে ধীরে ধীরে কাজটি আপনার কাছে সহজ হয়ে যাবে।
কাউকে সরাসরি কপি করবেন না
যারা নতুন অবস্থায় ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে তারা অনেক সময় আশপাশের মানুষকে বা তার কোনো বড় ভাই বা বন্ধুকে দেখে শুরু করে। আপনি কারও কাছ থেকে আইডিয়া নিতে পারেন কিন্তু সরাসরি কাউকে কপি করা যাবে না। এতে আপনার সৃজনশীলতা ও নিজস্বতা হারাবে।
অলসতা করা যাবে না
ফ্রিল্যান্সিং শুরুর দিকে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। রাত-দিন এক করে কাজ শিখতে হবে এবং কাজ করতে হবে। আর ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে সে সব বায়ার কাজ করায় এদের বেশির ভাগ মূলত অন্য দেশের, তাই তাদের দেশের সময়ের সঙ্গে আমাদের সময়ে বেশ পার্থক্য রয়েছে। তাই আপনাকে রাত জাগার অভ্যাস করতে হবে। শুরুর দিকে হয়তো একটু বেশি রাত জাগতে হবে, আর এই বাস্তবতাকে আপনার মেনে নিতে হবে।
অন্যের কথায় কান দেবেন না
আপনি যখন নতুন কিছু শুরু করতে যাবেন তখন আশপাশে থেকে নানা মানুষ নানা ধরনের কথা বলতে পারে। কেউ হযেোত পজিটিভ কিছু বলবে, তবে নেগেটিভ কথা বলার মানুষ বেশি হবে। কে কি বলল সেই কথায় একদম কান দেয়া যাবে না।
আপনি যে লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছেন সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাবেন। কারও কথায় কান দিয়ে নিজের লক্ষ্য থেকে সরে যাবেন না। নিজের ওপর প্রবল আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে।
টাকা অপচয় করা যাবে না
আপনি যখন ইনকাম শুরু করবেন তখন কিন্তু সেই টাকা অপচয় করা যাবে না। অনেকেই এই ভুলটা করে থাকে। ইনকাম একবার শুরু হলে সেই টাকা সব খরচ করে ফেলে। টাকা জমানো বা ইনভেস্টমেন্টের ব্যাপারে কোনো প্ল্যানই করে না।
সফল ফ্রিল্যান্সার হতে হলে সব সময় শিখনের মধ্যে থাকতে হবে। নানা স্কিল অর্জন করতে হবে, না হলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বেন।