সময়টা ২০০৭ সাল, দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন বাংলা গানের পাখি সাবিনা ইয়াসমিন। সকলের সহযোগিতায় ক্যানসার জয় করে গানে নিয়মিত হয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি হঠাৎ করেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন সাবিনা ইয়াসমিন। চিকিৎসা নিচ্ছেন সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালের ন্যাশনাল ক্যানসার সেন্টারে। অনেক দিন ধরেই শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন ৬৯ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি গায়িকা।
শিল্পীর ঘনিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গুরুতর অসুস্থ সাবিনা ইয়াসমিন। নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। উন্নত চিকিৎসা চলছে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালের ন্যাশনাল ক্যানসার সেন্টারে। এরই মধ্যে একটি সার্জারি সম্পন্ন হয়েছে। খুব দ্রুতই দেওয়া হবে রেডিওথেরাপিও।
পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে গানের ভুবনে বিচরণ করছেন সাবিনা ইয়াসমিন। বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র রুনা লায়লা ছাড়া তার সমকক্ষ হয়ে আর কেউ এত লম্বা সময় ধরে আধিপত্য বজায় রাখতে পারেননি। মরমী শিল্পী আব্দুল আলীম থেকে শুরু করে একালের উঠতি গায়কদের সঙ্গেও তিনি একের পর এক গান গেয়েছেন। সুযোগ পেয়েছেন উপমহাদেশের বরেণ্য সুরকার আর ডি বর্মণের সুরে গান গাওয়ার। উপমহাদেশের বিখ্যাত দুই কণ্ঠশিল্পী কিশোর কুমার ও মান্না দে’র সঙ্গেও গান গেয়েছেন সাবিনা ইয়াসমীন।
খ্যাতিমান এই গায়িকা তার মায়াবী কণ্ঠ দিয়ে বাংলা সংগীতকে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন, পুরস্কারও পেয়েছেন দুহাত ভরে। সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেয় একুশে পদক। ১৯৯৬ সালে পান স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার। সেরা কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন রেকর্ড ১৪ বার। বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন ছয়টি। জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন দুবার। ১৯৮৪ সালে বিশ্ব উন্নয়ন সংসদ থেকে সংগীতের ওপর লাভ করেন ডক্টরেট ডিগ্রি।
এ ছাড়া ১৯৯০ সালে শেরে বাংলা স্মৃতি পদক, ১৯৯১ সালে বিএফজেএ পুরস্কার ও উত্তম কুমার পুরস্কার, ১৯৯২ সালে অ্যাস্ট্রোলজি পুরস্কার এবং একই বছর নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে পান ‘বেস্ট সিঙ্গার’ পুরস্কার। ২০১৭ সালে দশম স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-দ্য ডেইলি স্টার জীবনের জয়গান উৎসব থেকে পান আজীবন সম্মাননা।
সাবিনা ইয়াসমিন শেষ প্লেব্যাক করেছেন প্রয়াত চিত্রনায়িকা ও নির্মাতা কবরী পরিচালিত ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবির ‘দুটি চোখে ছিল কিছু নীরব কথা’ শিরোনামের একটি গানে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে গানটিতে কণ্ঠ দেন তিনি। এ ছাড়া কবরীর ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবির চারটি গানে সুরও দেন সাবিনা ইয়াসমীন। এর মাধ্যমে ক্যারিয়ারে প্রথমবার তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।