দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিরাপত্তা ঝুঁকি তথা বিকৃত পোস্ট, বাজে মন্তব্য, ছবি বিকৃতির ঘটনা বাড়ছে। এসব চিহ্নিত করা গেলেও কোনোভাবেই ঝুঁকি কমানো যাচ্ছে না। এসব ঝুঁকি চিহ্নিত করার পাশাপাশি তা প্রতিরোধের উপায় খোঁজা হচ্ছে। চিহ্নিত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে অন্যের আইডি কব্জা করা, ভুয়া আইডি, স্প্যাম, ম্যালওয়্যার ও ট্রল কনটেন্ট।
এসব বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, সাইবার দুনিয়ায় নিরাপদ থাকতে সুরক্ষিত ডাটা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অ্যাপস ব্যবহার করতে হবে। তিনি জানান, ৭৫ শতাংশ অ্যাপস থেকে তথ্য চুরি হয়। যেসব অ্যাপসের সোর্স থাকে না, সেগুলো অরক্ষিত। মোবাইলের নিরাপত্তা ভেঙে হ্যাকাররা অ্যাপসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর সব তথ্য চুরি করে। ফলে অ্যাপস ব্যবহারের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারেও সচেতন হতে হবে। কোনও প্ররোচনা বা ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নভাবে (অন্যের আইডি কব্জা করা, ভুয়া আইডি, স্প্যাম, ম্যালওয়্যার ও ট্রল কনটেন্ট) ব্যবহাকারীকে বিপদে ফেলা হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী পলক এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা চিহ্নিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে সচেতন আছি এবং প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের ‘অ্যাকশন’ গ্রহণ করছি।
সাইবার দুনিয়ায় মানুষের প্রবেশ ও যাতায়াত অবাধ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ডাটার (ইন্টারনেট) ব্যবহার দেখলেই এসব তথ্যের সত্যতা বুঝতে পারি। তিনি জানান, প্রতি বছর দেশে গড়ে ৪৪ শতাংশ করে ডাটার ব্যবহার বাড়ছে।
জুনাইদ আহমেদ পলক আরও জানান, সাইবার হুমকির ধরন দিন দিন পরিবর্তন হচ্ছে। প্রথম দিকে সাইবার জগতে অন্যকে বিরক্ত করা স্রেফ কৌতূহল বশত হলেও পরবর্তীতে তা প্রতিশোধ, আর্থিকভাবে অনিষ্ট সাধন, রাজনৈতিক হয়রানি, গোয়েন্দাগিরিতে গিয়ে ঠেকেছে; যা বর্তমানে দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে উঠেছে। প্রতিমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, হ্যাকাররা শুরুর দিকে ছোটখাটো কাজ করলেও ধীরে ধীরে ভেতরের তথ্য চুরি বা সংগ্রহ, হ্যাকার ও ক্র্যাকারদের সংঘটিত অপরাধ, হ্যাক্টিভিজম, টার্গেটেড অ্যাটাকে গিয়ে বর্তমানে তা জীবনহানি বা সম্পদ ধ্বংসের পর্যায়ে চলে গেছে। ফলে বিষয়গুলো নিয়ে সরকার যথেষ্ট সচেতন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এসব ভয়ঙ্কর বিষয় আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে কিছু প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ২০১৬ প্রণয়ন, ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি গঠন, নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা তৈরি, ন্যাশনাল ডাটা সেন্টারের জন্য সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা, ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবস্থা প্রণয়ন, কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম গঠন, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেল গঠন, সরকারের ২২টি সংস্থার অবকাঠামো নিরাপত্তা ঝুঁকি চিহ্নিত করা, সাইবার জিম প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।
সাইবার নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে সাইবার আক্রমণের উল্লেখযোগ্য উত্থান, প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধি, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সাইবার ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ গ্রহণ, সাইবার নিরাপত্তার যথাযথ শাসন, যা আছে তা নিয়ে সাইবার হুমকি মোকাবিলা, ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামোগুলোতে নিরাপত্তা বিধান করা, প্রযুক্তিভিত্তিক গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানো, তথ্য নিরাপত্তা দক্ষতার ঘাটতি, নিরাপত্তা কার্যকারিতা এবং ঝুঁকি মূল্যায়ন কৌশল পরিমাপ করা সহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমরা আমাদের সীমিত সম্পদ দিয়ে তা মোকাবিলার চেষ্টা করছি।
জানা গেছে, সরকারের আইসিটি বিভাগ তথ্যের সুরক্ষার জন্য ক্লাউড স্টোরেজের কথা ভাবছে। যদিও বেশ আগেই এ বিভাগ থেকে ঘোষণা এসেছিল যে ক্লাউডে যাচ্ছে সরকার। ঘোষণা বাস্তবায়নে কাজও শুরু হয়ে গেছে। আইসিটি বিভাগ এখন মোবাইল এবং সামাজিক যোগাযোগ দুই মাধ্যমকেই ক্লাউডে ট্রান্সমিশন করার কথা ভাবছে। কাজ শুরু করেছে বিগ ডাটা নিয়েও। অগ্রসর প্রযুক্তি (অ্যাডভান্স টেকনোলজি) তথা অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) নিয়েও অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে বাংলাদেশ। দেশে এরই মধ্যে আইওটি ল্যাবও গড়ে তোলা হয়েছে। এসবই আগামী দিনে আমাদের সাইবার স্পেসে সুরক্ষা দেবে।