ইলেকট্রিক গাড়ির চাহিদা বেড়ে চলায় উপযুক্ত ব্যাটারির প্রয়োজনও বাড়ছে৷ ‘ক্রিটিকাল’ উপাদানের প্রাচুর্যের কারণে সুইডেনের এক কোম্পানি উচ্চ মানের শক্তিশালী ব্যাটারি তৈরির কাজে অগ্রগতি করছে। ইউরোপের উত্তরের দেশ সুইডেনের প্রকৃতি স্বর্গরাজ্যের মতো। হাইটেক দেশটি একই সঙ্গে ইলেকট্রোমোবিলিটি ও গাড়ির ব্যাটারি তৈরির কারণেও বিখ্যাত।
ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারির জন্য প্রয়োজনীয় অনেক ‘ক্রিটিকাল’ বা জরুরি উপাদানের বড় ভাণ্ডার সে দেশে রয়েছে। ফলে নর্থভোল্ট নামের ব্যাটারি কোম্পানি বিশাল সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে।
এমা নেয়ারেনহাইম নর্থভোল্ট কোম্পানির পরিবেশ বিভাগের প্রধান৷ বলা বাহুল্য, তাঁর নিজের গাড়িটিও বিদ্যুতশক্তিতে চলে। তাঁর কোম্পানি ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য যে ব্যাটারি সেল তৈরি করে, সেগুলির বৈশিষ্ট্য কী? এমা বলেন, ‘আমরা ব্যাটারিগুলো পাশাপাশি রেখে প্রথমে ছোট ইউনিট হিসেবে মডিউল প্রস্তুত করি। তারপর মডিউলগুলো জুড়ে এক প্রণালী সৃষ্টি করি। তাতে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি যোগ করা হয়৷ ব্যাটারি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হয়। সেই কনট্রোল প্যানেল আদর্শ চার্জিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা স্থির করে এবং কীভাবে, কোন গতিতে চার্জিং হবে, সেই সিদ্ধান্তও নেয়।’
সুইডেনের উত্তরে ইতোমধ্যেই একটি বিশালাকার ‘গিগাফ্যাক্টরি’ তৈরি হয়ে গেছে, যেটির আয়তন প্রায় ২০০ ফুটবল মাঠের সমান৷ সেখানে বছরে ১০ লাখ ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারি তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে তৈরি দূষণমুক্ত ‘ক্লিন রুম’-এ উৎপাদন প্রক্রিয়া চলে৷ প্রত্যেক গাড়ি কোম্পানির জন্য আলাদা করে ব্যাটারি সেল প্রস্তুত করা হয়।
গাড়ির নিজস্ব অন-বোর্ড কম্পিউটার ব্যাটারি সেলগুলির যতটা সম্ভব সমান ব্যবহার নিশ্চিত করে। তাছাড়া আধ ঘণ্টার মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি চার্জিং সম্ভব করে এই যন্ত্র।
নর্থভোল্টের প্রধান বিনিয়োহকারীদের মধ্যে জার্মানির বিএমডাব্লিউ ও ফলক্সভাগেন কোম্পানিও রয়েছে। একইসঙ্গে এই কোম্পানিগুলি নর্থস্ট্রিমের গ্রাহকও বটে। এমা নেয়ারেনহাইম বলেন, ‘ইউরোপের প্রিমিয়াম কোম্পানিগুলো আমাদের গ্রাহক। তারা খানদানি ব্র্যান্ড। আমরা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি তৈরি করি বলে আমাদের এমন গাড়ির প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে হয়, যেগুলো ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার গতিবেগে চলতে পারে।’
স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলিতে ‘ক্রিটিকাল’ উপাদানের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে৷ প্রতিযোগিতার বাজারে সেটা নর্থভোল্টের জন্য বড় সুবিধা বটে৷ ব্যাটারি উৎপাদনের জন্য এই কোম্পানির বিশাল পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম, কোবাল্ট ও নিকেলের চাহিদা রয়েছে৷ পুরানো ব্যাটারিও রিসাইকেল করা হয়৷ সেগুলি টুকরো টুকরো করে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান উদ্ধার করা পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য জরুরি।
সেইসঙ্গে কারখানাগুলোকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি দিয়ে তৈরি বৈদ্যুৎ ব্যবহার করতে হয়৷ একমাত্র এভাবেই ‘গ্রিন কার ব্যাটারি’ উৎপাদন করা সম্ভব।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ড ও পর্তুগালেও কোম্পানির শাখা রয়েছে। সব জায়গাতেই রিসাইকেল করা উপাদানের উপর নির্ভর করা হয়। রিসাইক্লিং উৎপাদন প্রক্রিয়া আরো আদর্শ করে তোলার লক্ষ্যে ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করছেন।
এমা নেয়ারেনহাইম বলেন, ‘আমরা এখানে এমন প্রক্রিয়া সৃষ্টি করছি, যা আমরা জার্মানি বা পোল্যান্ডে আমাদের যে কোনো হাবেও প্রয়োগ করতে পারি। বাতিল হয়ে যাওয়া ব্যাটারিগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিসচার্জ করে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। যেমনটা দেখলাম, শেষে ব্যাটারির কাঁচামাল অবশিষ্ট থাকে।’
https://bangla-bnb.saturnwp.link/%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%97%e0%a6%a4-%e0%a6%b8%e0%a6%ac%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%9b%e0%a7%81-%e0%a6%b8%e0%a7%8b%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b2/
সুইডেনের উত্তরে গিগাফ্যাক্টরিরও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে জার্মানিতেও কাজ শুরু হচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে তিন হাজার কর্মীসহ একটি প্লান্ট চালু হবে। বেড়ে চলা চাহিদা মেটাতে সাড়ে ৪‘শ কোটি ইউরো অংকের বিনিয়োগ করা হচ্ছে