সুপার শপ উন্মুক্ত। সেখানে অনেক রকম পণ্য ক্যাটাগরি অনুযায়ী সাজানো থাকে। ক্রেতা নিজে তার প্রয়োজন এবং পছন্দমত পণ্য বাছাই করে। পাড়ার দোকানে কিন্তু এমনটা হয় না। দোকানের বাইরে থেকে ক্রেতা বিক্রেতাকে যে পণ্যটা লাগবে সেটার নাম বলে এবং দোকানি তাকে পণ্যটি বের করে দেন।
আবার সুপার শপে ক্রেতা ডিসকাউন্ট বা অফারের খপ্পরে পরে যায়। ফলে কিনতে কিনতে এক সময় হিসাবের বাইরে চলে যেতে হয়। সুপার শপে বিল বাড়তি আসার দায় যেমন ক্রেতার নিজের। বিল কমানোর উপায়গুলোও ক্রেতার নিজের হাতে। সমাধানেও মূল কাজ করবে একটি সাইকোলজিক্যাল ব্যাপার; যা হলো সেলফ কন্ট্রোল তথা আত্মসংযম।
পরিকল্পনা করা
সুপার শপে যাওয়ার আগে প্রথম কাজ হলো পরিকল্পনা করা। পরিকল্পনা করতে হবে প্রয়োজন অনুসারে। কী কী প্রয়োজন, কোন সুপার শপে প্রয়োজনীয় পণ্যটি পাওয়া যাবে, ছাড় আছে কিনা, কতদিনের জন্য পণ্য কিনতে হবে, কতদিন পর আবার সুপার শপে যেতে হবে-এ সবই পরিকল্পনা করে নির্ধারণ করতে হবে।
লিস্ট বানানো
পরিকল্পনা করে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়ার পর সে অনুযায়ী লিস্ট বানাতে হবে। লিস্টটি অবশ্যই লিখিত হতে হবে। লিস্টের বাইরে শপিং করা যাবে না এই মনোভাব রাখতে হবে। লিস্টের পণ্য যেটা নেয়া হবে তার পাশে সাথে সাথে টিক চিহ্ন দিয়ে দিলে এক পণ্য দুইবার নেয়ার মত ভুল হবে না। সঙ্গে টিক চিহ্ন শেষ তো শপিং শেষ এটাও বোঝা যাবে।
পণ্য বাছাইয়ে খুঁতখুঁতে হওয়া
পণ্য বাছাইয়ে খুঁতখুঁতে হলে অপ্রয়োজনীয়, অপছন্দনীয় এবং ক্ষতিকর পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকা যাবে। যেমন- মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেখা, প্যাকেজিং দেখা, কোন দেশের বা কোন ব্রান্ডের পণ্য তা যাচাই করা।
ক্ষুধার্ত অবস্থায় শপিং না করা
ক্ষুধার্ত অবস্থায় মানুষ মোটামুটি যা পায় তাই তার খেতে ইচ্ছা করে। তাই সুপারশপ, যেখানে বিভিন্ন খাবারের সমারোহ সেখানে ক্ষুধার্ত অবস্থায় যাওয়া যাবে না।
অফারের সঠিক ব্যবহার
অফার দেখেই বেশি বেশি পণ্য উঠিয়ে নেয়া যাবে না। প্রথমে হিসাব করে নিতে হবে যে অফারটি কতটুকু কার্যকর। এরপর যতটুকু দরকার ততটুকুই কিনতে হবে। তাহলে বিল বেশি না এসে বরং কমই আসবে।
টাকায় পেমেন্ট দেয়া
লিস্ট বানানোর সাথে আরেকটি কাজ করতে হবে; যা হলো পণ্যগুলোর দামের একটা খসড়া হিসাব। তার থেকে কিছু বাড়তি টাকা নিয়ে শপিংয়ে যেতে হবে এবং বিল টাকাতেই দেয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে। কার্ড থাকলে তা বাড়িতে রেখে গেলে ভালো। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অনেক অফার থাকলেও সেগুলো ব্যবহার না করাটাই সবশেষে বিল কমিয়ে আনবে।
নির্দিষ্ট সুপার শপে যাওয়া
একটি নির্দিষ্ট সুপার শপে যেতে যেতে কোথায় কী আছে ধারণা হয়ে যায়। তখন অযথা ঘুরাঘুরির প্রয়োজন থাকে না। লিস্ট অনুযায়ী সেই বিভাগে গিয়ে পণ্য নিয়ে চলে আসা যায়।
প্রতি ইউনিট দাম পরীক্ষা করা
ধরা যাক আপনার সন্তানের প্রতিদিনের নাস্তার জন্য কোন বিশেষ পণ্য প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আপনি বড় বাক্সটি কিনলে লাভবান হবেন, কারণ দাম সেই সময়ে বেশি মনে হলেও ছোট বাক্সের তুলনায় পাউন্ড প্রতি সস্তায় পেয়ে যাবেন। এজন্য ইউনিটের দাম দেখতে হবে যা আপনাকে পরিমাণের উপর ভিত্তি করে খরচ দেখায়।
নিজের ব্যাগ নিয়ে আসা
সুপার শপে ছোট বড় বাস্কেট বা ট্রলির অপশন থাকলেও নিজের ব্যাগ নিয়ে গেলে এবং সেই ব্যাগ ভর্তি হয়ে গেলে শপিং শেষ হয়ে যাবার সিগনাল পাওয়া যাবে। অনেক সুপারশপ ব্যাগের জন্য টাকা রাখে সেটিও বাঁচানো সম্ভব হবে।
ফাইনাল চেক
একদম শপিং শেষে চেক করতে হবে যে লিস্টের কিছু বাদ পড়ে গেলো কিনা, বেশি নেয়া হলো কিনা, আবেগে লিস্টের বাইরে কিছু নিয়ে নিলেও আবার ভাবা যাবে এই ফাইনাল চেকের মাধ্যমে।
দ্রব্যমূল্যের চড়াই-উতরাইয়ের এই সময়টাতে সক্ষমতা থাকলেও অপ্রয়োজনীয় খরচ থেকে বিরত থাকা উচিত। হিসেবি হয়ে অপচয় রোধ করতে পারলে খারাপ কি!