বাংলাদেশ থেকে এব বছর হজে যেতে পারবেন এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। কিন্তু নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৫৩ হাজার ১৭৩ জন। দুই দফা সময় বাড়িয়েও নিবন্ধনের তেমন সাড়া মেলেনি। অর্ধেকের বেশি কোটা এখনও পূরণ হয়নি। আবার যারা নিবন্ধন করেছেন ব্যাংকে বাকি টাকা জমা দিয়ে তাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
যাদেরকে ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্যাংকে বাকি টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। সেই শর্ত পূরণ করতে গিয়ে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা আরও কমতে পারে। তখন দেখা যাবে অনেকেই টাকা জমা দেননি। অর্থাৎ নিবন্ধনকারীর সংখ্যা আরও কমতে পারে। কিন্তু কেন? কেন মানুষ হজে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন না।
জানা যায়, হজ নিবন্ধনের সময় শেষ হয়েছে ১৮ জানুযারি। আর আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্যাংকে বাকি টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।
এর আগে, এ বছর হজের নিবন্ধন শুরু হয় গত ১৫ নভেম্বর, যা ১০ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রত্যাশিত সাড়া না মেলায় সময় বাড়ানো হয় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত, পরে সেই সময় ১৮ জানুয়ারি বাড়ানো হয়েছিল। এরপর আর সময় বাড়ানো হয়নি।
তবে কোটা পূরণে এখন নতুন করে সময় বাড়ানো হবে কি না, সে বিষয়েও স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি ধর্ম মন্ত্রণালয়।
কোটা পূরণ না হলে সময় বাড়াতে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হবে কিনা সে বিষয় বিচার বিশ্লেষণ করা হচ্ছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম।
হজের কোটা পূরণ না হলে সৌদি আরব কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক কর্মকর্তা গণমাধ্যেমকে বলেন, গত বছরও কোটা পূরণ হয়নি। যদি এ বছরও কোটা পূরণ না হয়, তাহলে সৌদি সরকার জানতে চাইতে পারে, এক্ষেত্রে কী কী সুবিধা দিতে হবে। তারা তা প্রমোট করতে চাইবে।
২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা মহামারির সময় হজ পালন বন্ধ ছিল। সৌদি আরবে যাওয়ার সুযোগ পাননি বিদেশীরা। তখন হজ পালিত হয় সীমিত পরিসরে। ২০২২ সালে বাংলাদেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। প্যাকেজ-১ এ সর্বমোট খরচ ধরা হয় চার লাখ ২৫ হাজার টাকা, প্যাকেজ-২ এ তিন লাখ ৬০ হাজার এবং প্যাকেজ-৩ এ তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা। হজ পালেনে বেসরকারি প্যাকেজে তিন লাখ ৫৮ হাজার টাকা খরচ ধরা হয়।
কিন্তু ২০২৩ সালে ঘটে অন্যরকম ঘটনা। হঠাৎ খরচ বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে খরচ নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় খরচ ধরা হয় ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা।
যার ফলে, খরচ যোগাতে না পেরে প্রাক-নিবন্ধনকারী অনেকেই আর চূড়ান্ত নিবন্ধন করেননি। সে সময় আটবার সময় বাড়িয়ে এবং একদিনের বিশেষ সুযোগ দিয়েও কোটা পূরণ হয়নি। ঘাটতি থেকে যায় ৬ হাজার ৭০৭ জন ।
এ বছর খরচ কমিয়ে নভেম্বর হজের প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা এবং বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা ব্যয় ধরা হয়।
আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮৩ হাজার ২০০ টাকা কমিয়ে সাধারণ প্যাকেজ ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা এবং বিশেষ প্যাকেজ ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা ঠিক করে হাব। এরপরও অর্ধেকের বেশি কোটা এখনও পূরণ হয়নি। তবে হজে যেতে ইচ্ছুক অনেকেই বলছেন, খরচ কমানো হলেও তা এখনো বেশি।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে হজে যেতে হলে প্রথম ধাপে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে প্রাক-নিবন্ধন করতে হয়। সারা বছরই প্রাক-নিবন্ধন করা যায়। প্রাক-নিবন্ধন সম্পন্ন করলে একটি নম্বর দেওয়া হয়।
ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সেই নম্বর হজের জন্য নির্বাচিত হলে তা এসএমএস ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। নির্বাচিত হলে নিবন্ধন সম্পন্ন করা যায়। নিবন্ধনের জন্য ন্যূনতম দুই লাখ ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। বাকি টাকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়।