বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ধাক্কায় স্পেনের দক্ষিণে কমলালেবু চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ পানির অভাব সত্ত্বেও গাছের সুরক্ষায় এবার আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ একগুচ্ছ পদক্ষেপের মাধ্যমে সার্বিক সমাধানসূত্রের আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
স্পেনের কর্দোবা ও সেভিয়া শহরের মাঝে কমলালেবুর বাগিচা রোদের তাপে পুড়ে, শুকিয়ে গেছে৷ আগের বছরের মতো প্রায় ১৬ লাখ টনের ফসল যে এবার পাওয়া যাবে না, চাষিদের কাছে তা এখনই স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ খোসে ফার্নান্দেস দে এরেদিয়া প্লান্টেশনের দিকে চলেছেন৷ সেখানে আর কোনো পানি আসছে না৷
তিনি বলেন, বীজ বপন করে গাছগুলি বড় করেছি৷ এখন সেগুলির এমন অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগছে৷ ১৪ বছরে এমন অবস্থা কখনো দেখিনি৷ এখানে কিছু জায়গায় একেবারেই কোনো কমলালেবু ফলেনি, অন্য জায়গায় কয়েকটি ফল দেখা যাচ্ছে৷ তবে কমলার আকার খুবই ছোট, কয়েকটি এমনকি রস বার করারও উপযুক্ত নয়৷ গাছগুলি পুরোপুরি ফুলেফেঁপে ওঠার কথা৷ কিন্তু সেটা ঘটেনি৷ গাছগুলি দেখাশোনার জন্য হাজার হাজার পরিবারের পানির প্রয়োজন৷ কিন্তু জলাধার প্রায় শুকনা৷ মাত্র দশ শতাংশের মতো পানি অবশিষ্ট রয়েছে৷ বিশেষজ্ঞরা কমপক্ষে পরের বারের খরার জন্য প্রস্তুতি নেবার চেষ্টা চালাচ্ছেন৷
কর্দোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী এমিলিও কামাচো মনে করেন, আমাদের পানির সরবরাহে উন্নতি ঘটাতে হবে৷ অর্থাৎ পানি ধরে রাখার আরো পথ খুঁজতে হবে৷ সেইসঙ্গে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে পানির ব্যবহার আদর্শ করে তুলতে হবে৷ সেই লক্ষ্যে বিশেষ সেন্সরের প্রয়োজন৷ সেই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে সেভিয়ার উত্তরে এক ফিনকা বা খামারে মাটির আর্দ্রতা পরিমাপ করা হচ্ছে৷ সেইসঙ্গে গাছের ব্যাসও মাপা হচ্ছে৷ গাছ কুঁকড়ে গেলে বোঝা যায় পানির প্রয়োজন৷
ফিনকা ন্যাচারাল গ্রিনের সমন্বয়ক খেসুস মার্তিনেস বলেন, এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অন্যান্য খেতের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব হয়েছে৷ কোন গাছের কখন, কতটা পানি প্রয়োজন আমরা তা জানতে পারছি৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলে কৃষিকাজ করতে হলে সেই জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি৷ তবে স্পেনের দক্ষিণে কৃষিকাজ টিকিয়ে রাখার জন্য সেটাই যথেষ্ট হবে না৷
স্পেনের ডাব্লিউডাব্লিউএফ শাখার প্রতিনিধি ফেলিপে ফুয়েন্তেলসাস মনে করেন, আমাদের সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ বন্ধ করতে হবে, আরো ভালোভাবে পানির ব্যবহার করতে হবে৷ তাছাড়া সেচ ছাড়া চাষ করা যায়, এমন গাছের চাষ বাড়াতে হবে৷ সবাই মিলে একটা সমাধানসূত্র পেতে আমাদের নানা রকম পদক্ষেপ নেবার চেষ্টা করে দেখতে হবে৷ আরো কম পানি দিয়ে সেচ ব্যবস্থাও একটা সমাধানসূত্র হতে পারে৷
মালাগা শহরে টিইউপিএল অ্যাগ্রো নামের এক স্টার্টআপ কোম্পানি সেই লক্ষ্যে এক সফটওয়্যার তৈরি করছে৷ এ ক্ষেত্রেও সেন্সরের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করা হচ্ছে৷ তবে সেই তথ্যের বিশ্লেষণই আসল বিষয়৷ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সেটা করা হচ্ছে৷
প্রকল্পের প্রধান আন্তোনিও মানুয়েল আদ্রিয়ান বলেন, এআই এই প্রকল্পের আত্মা৷ সেন্সর, প্রযুক্তি সে সব আগেই আছে৷ কিন্তু এআই-এর প্রয়োগ এই প্রকল্পের মাত্রা বাড়াতে আমাদের সাহায্য করবে৷ এর মাধ্যমে আমরা আরো ফল ভালো রাখতে পারবো৷ বিশেষ করে প্রত্যেক চাষিদের নির্দিষ্ট প্রয়োজন মেটাতে ভিন্নভাবে সাহায্য করতে পারবো৷ সাফল্য অবশ্য কিছুটা প্রচার বা যোগাযোগের উপরও নির্ভর করছে৷ সেটা যত সহজ হবে, ততই ভালো৷ হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে চাষিরা তথ্য ও পরামর্শ পাচ্ছেন৷ প্রয়োজনে তারাও প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন৷ আদ্রিয়ানের মতে, আমাদের ধারণা, আভোকাডো, কমলালেবু, জলপাই ও আঙুরের ক্ষেত্রেও ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পানি সাশ্রয় করা সম্ভব৷ এখন যে খরা চলছে, এআই-এর মাধ্যমেও তা এড়ানো সম্ভব নয়৷ তা সত্ত্বেও এই প্রযুক্তি কম পানি নিয়ে আরো বেশি সময় কাজে লাগাতে সাহায্য করবে৷