বঁটি দেখলেই মনে হয় এই বুঝি হাত কেটে গেল! আর এই ভয়ের চোটে আজকাল বেশিরভাগ মহিলাই ছুরি দিয়ে সবজি কাটতে পছন্দ করেন। ফলে বঁটির ব্যবহার বাঙালি প্রায় ভুলতেই বসেছে এবং অভ্যেস না থাকার ফলে বঁটিতে মাছের আঁশ ছাড়াতে অনেকেই ভরসা পান না।
বড় মাছ কিনলে সাধারণত মাছের দোকানদার আঁশ ছাড়িয়ে দিলেও অনেক ক্রেতাই এখনও ছোট নরম মাছের আঁশ ছাড়ানোর ক্ষেত্রে দোকানদারের উপর ভরসা করতে পারেন না। ফলে সেগুলি আঁশ সুদ্ধুই বাড়িতে নিয়ে আসেন তাঁরা। ব্যস! আর যায় কোথায়! মাছের আঁশ ছাড়ানো নিয়ে শুরু হয়ে যায় কর্তা-গিন্নির লড়াই।
তবে এককালে মাছের আঁশ ছাড়ানোর ক্ষেত্রে বঁটিই একমেবাদ্বিতীয়ম ভরসা হলেও এখন অন্যান্য নানা সহজ উপায়েও মাছের আঁশ ছাড়ানো যায়। আজ আমরা সেগুলি নিয়ে আলোচনা করব।
ভিনিগারে ভরসা
এমন দুর্দান্ত একটি টিপসের কথা শুনে আপনারাও নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন! আজ্ঞে হ্যাঁ, মাত্র অল্প একটুখানি ভিনিগারের সাহায্যে কিন্তু আপনি খুব সহজেই ছাড়িয়ে ফেলতে পারেন আস্ত একটি মাছের আঁশ। তাও বঁটি ছাড়াই! কীভাবে? একটি পাত্রের মধ্যে জল নিন, তার মধ্যে সামান্য একটু ভিনিগার দিয়ে সেই মিশ্রণে মাছটি পাঁচ থেকে ১৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন।
কিংবা ভিনিগার সরাসরি নিয়ে মাছের গায়ে ঘষতেও পারেন। এর ফলে মাছের গায়ের হড়হড়ে ভাব যেমন দূর হয়ে যাবে, তেমনই আঁশগুলিও সহজে আলগা হয়ে আসবে। এবার আপনি কোনও ছুরি নিয়ে আঁশের উলটো দিকে চালালে সহজেই আঁশগুলি উঠে আসবে।
অনেকে কিন্তু ছুরি বা বঁটির বদলে কয়েন দিয়েও মাছের আঁশ তুলতে পছন্দ করেন। সেক্ষেত্রেও কাজটি খুব সহজে হয়ে যায়। এর ফলে হাতে খুব একটা লাগে না, কেটে যাওয়ার সম্ভাবনাও একেবারেই থাকে না।
আটা দিয়ে আঁশ ছাড়ানো?
বড় মাছের আঁশকে কোনওরকমে ম্যানেজ করা গেলেও ছোট মাছের আঁশ ছাড়ানো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। ছোট মাছের আঁশ ছাড়াতে অনেক বেশি সময় লাগে, তার উপর ছোট মাছ নরম হওয়ার ফলে আঁশ ছাড়ানোর ক্ষেত্রে একটু অসাবধান হলেই মাছে চাপ পড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এর জন্যে আপনি মাছের গায়ে সামান্য একটু আটা লাগিয়ে নিতে পারেন। এর ফলে আঁশ ছাড়ানোর সময় মাছ যেমন আপনার হাত থেকে পিছলে যাবে না, তেমনই আঁশ ছাড়ানোর গোটা প্রক্রিয়াটাই খানিকটা সহজ হবে।
বঁটির বদলে ছুরি
মাছ ছোট হোক কী বড়, বঁটির বদলে ছুরি দিয়েই আজকাল মাছ কাটতে পছন্দ করেন অনেকে। তবে সেক্ষেত্রে ছুরি বাছার ক্ষেত্রে ভাল করে দেখে নিতে হবে। মাছ কাটার জন্যে বা আঁশ ছাড়ানোর জন্যে ধারালো ৯-১০ ইঞ্চি মাপের ‘শেফ নাইফ’ ব্যবহার করাই বাঞ্ছনীয়। আর না হলে ছোট ছুরি দিয়েও মাছের আঁশ ছাড়াতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, ছুরিটি ধারালো হওয়া চাই।
আঁশ ছাড়ানোর আগে মাছটিকে নুন, লেবু মেশানো বা ভিনিগার মেশানো জলে খানিকক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন। এতে মাছের আঁশ নরম হবে, ফলে ছাড়ানোও অপেক্ষাকৃত সহজ হবে। এরপর ছুরিটি মাছের লেজ থেকে মাথার দিকে অর্থাৎ আঁশের সজ্জার বিপরীত দিকে টেনে-টেনে মাছের আঁশগুলি ছাড়িয়ে নিন।
তবে এক্ষেত্রে আপনার যদি ছুরি ব্যবহার করার অভ্যেস না থাকে, তাহলে প্রথমে আস্তে-আস্তে আঁশ ছাড়ানোই ভাল। নয়তো হাত কেটে যেতে পারে। এমনিতে ধারালো ছুরি না হলে তাতেও কিন্তু হাত বেকায়দায় কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পরে দেখবেন অভ্যেস হয়ে গেলে এবং হাত সেট হয়ে গেলে আপনি খুব সহজে এবং তাড়াতাড়ি মাছের আঁশ ছাড়াতে পারছেন।
এছাড়া অনেকেই আঁশ ছাড়ানোর জন্য যে-কোনও একটি চামচ ব্যবহার করে থাকেন। তবে সেক্ষেত্রে চামচটি একটু শক্তপোক্ত হতে হবে এবং চামচের কানাটি একটু ধারালো হলে ভাল হয়। এইভাবে অনেকেই একটি কয়েন ব্যবহার করে ঘষে ঘষে মাছের আঁশ ছাড়িয়ে থাকেন। আপনিও এই পদ্ধতিটি কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন।
তাহলে এবার কর্তা বাজার থেকে মাছের আঁশ ছাড়িয়ে না আনলেও কিন্তু চাপ নেবেন না। ভিনিগারে ডুবিয়ে রেখে বা আটা মাখিয়ে খুব সহজেই কিন্তু আপনি ছোট হোক কী বড়, যে-কোনও মাছের আঁশ অতি সহজেই ছাড়িয়ে ফেলতে পারবেন, তাও আবার বঁটির ব্যবহার ছাড়াই। আর বঁটির বদলে আপনার যদি আগে থেকেই ছুরি ব্যবহারের অভ্যেস থাকে? তাহলে তো কথাই নেই! মাছ ছাড়ানো হয়ে যাবে এক নিমেষেই!