হালুয়াঘাটে এত পানি আমার সাতাত্তুর বছর বয়সে দেখিনি। তিরাশি, অষ্টআশি, আটানব্বয়েও পাহাড়ি ঢলে বন্যা হয়েছে তবে এবারের বন্যা সবচেয়ে ভয়াবহ। শতকরা নব্বইটি বাড়ি ঘরে বন্যার পানি উঠেছে বলে জানিয়েছেন কৈচাপুর ইউনিয়নের গাঙ্গিনারপাড় গ্রামের মইজ উদ্দিন।
দর্শারপাড় গ্রামের সাইমা সুলতানা শাবনুর জানায়, ‘বড় হওয়ার পর এই প্রথম এত বড় বন্যা আমাদের হালুয়াঘাটে দেখলাম। এই বন্যায় আমাদের উঠান, রান্না-ঘর, বাড়ির পিছন, পুকুর সব পানির নিচে। বড় ঘরের সিঁড়ির কানায় কানায় পানি। সাবমারসেবল মটারের স্লাবের ওপরে আব্বা মাটির চুলা বসিয়েছে। আজ সকালে ঘর থেকে বিষাক্ত সাপ বের করে পানিতে ছেড়ে দিয়েছে। তাই সাপের ভয়ে কাপড় দিয়ে বেড়া দিলাম যেনো বিষাক্ত কোনো কিছু বারান্দা দিয়ে না ঢুকে।‘
পাগলপাড়া গ্রামের আলহাজ্ব মোখলেছুর রহমান মাস্টার জানায়, ‘হঠাৎ পানি এসে ঘরের ভিতর কোমর পানি হয়ে গেছে। আলমিরাতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রাদি ভিজে গেছে। ঘরে থাকা ধান চাল নষ্ট হয়ে গেছে।‘
আচকিপাড়া গ্রামের লিবিংস্টোন জানায়, ‘ভূবনকুড়া গ্রামে প্রায় ২০ থেকে ২৫টি বাড়ি বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ফসলি ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গবাদী-পশু, হাঁস, মুরগীসহ পশু পাখির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অগনিত ফিসারীর মাছ ভেসে গেছে। ধুপাজুড়িসহ বেশকয়েকটি গ্রামের রাস্তা ভেঙে যাতায়াতের দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।‘
আইলাতলী গ্রামের দ্বীন ইসলাম জানায়, ‘বোরাঘাট নদীর পানি উপচে গিয়ে বাড়ি ঘরে উঠে যায়। নদীর পাড়ের অনেক বাড়ি-ঘর ভেঙে গেছে। একজনের পাঁচটি ফিসারী ডুবে গিয়ে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও গ্রামের প্রায় সকল পুকুর তলিয়ে গিয়ে মানুষ ব্যাপক ক্ষতি সম্মুখীন হয়েছে।‘
সরেজমিনে মনিকুড়া গ্রামের বাঘাইতলা রোডে দেখা গেছে অনেক পরিবার রাস্তার পাশে দোকানে আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নিয়েছে। স্কুল-কলেজগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে হাজারো মানুষ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এরশাদুল আহমেদ জানান, ‘উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ১৮ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। ৭৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৫ হাজার টন চাল, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় কর্তৃক শুকনো খাবার ১২০০ পেকেট, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ত্রাণ শাখা থেকে ৭০০ পেকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।‘