পৃথিবীর চেয়ে ৩ থেকে ৪ গুণ শক্তিশালী মহাকর্ষ বলের গ্রহে সাধারণ মানুষ চলাফেরা করতে পারবেন। এ জন্য অবশ্য ব্যায়াম করে পেশি শক্তিশালী করতে হবে আগে। পুরোদস্তুর ক্রীড়াবিদদের মতো গড়ে নিতে হবে শরীরকে। তবে অধ্যাপক পোলজাক আশা করেন, তাঁদের এই কাজ বাসযোগ্য বহিঃসৌরগ্রহ বা এক্সোপ্ল্যানেট নিখুঁতভাবে খুঁজতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, এখন আমরা জানি, মহাকর্ষ বলের মান অনেক বেশি, এমন বাসযোগ্য গ্রহে পা ফেলার স্বপ্ন দেখা অর্থহীন।
পৃথিবীর চেয়ে বড় প্রচুর পাথুরে গ্রহ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা দূর নক্ষত্রের বাসযোগ্য অঞ্চলে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এগুলোকে বলেন সুপার-আর্থ বা অতিপৃথিবী। এসব ভিনগ্রহে সরাসরি না গিয়ে গ্রহপৃষ্ঠের মহাকর্ষ বলের মান কত, তা নিখুঁতভাবে জানা কঠিন।
গ্রহ যেহেতু নানা পদার্থের মিশ্রণে তৈরি, তাই গ্রহের ঘনত্ব নানারকম হতে পারে। আর ঘনত্ব বা গ্রহের ভরের ওপরে নির্ভর করে এর পৃষ্ঠের মহাকর্ষ বল কেমন হবে, কীভাবে কাজ করবে। ঘনত্বের হিসেবে সামান্য এদিক-ওদিক হলেই মহাকর্ষ বলের মান সঠিকভাবে বের করা যায় না। আর মহাকর্ষ বল ভগ্নাংশ পরিমাণ বাড়লেও ওজন বেড়ে যায় অনেকখানি।
ঘনত্বের সঙ্গে আয়তনের নিবিড় সম্পর্ক আছে। আয়তনের তুলনায় বস্তুতে কী পরিমাণ ভর আছে, সেটাই হলো ঘনত্ব। একই ঘনত্বের গ্রহ সামান্য বড় হলেই এর ভর অনেক অনেক বেড়ে যায়। বেড়ে যায় গ্রহের মহাকর্ষ বল। বুঝতেই পারছেন, গ্রহে না গিয়ে সেই গ্রহের মহাকর্ষ বলের পরিমাণ বের করা কত কঠিন। অনেকগুলো বিষয় জড়িত এর সঙ্গে। সবগুলোর একবারে সঠিক তথ্য না পেলে নিখুঁতভাবে মহাকর্ষ বল জানা সম্ভব নয়। আলোকবর্ষের মতো দূরত্ব থেকে তাই গ্রহের মহাকর্ষ বল বের করা প্রায় অসম্ভব।
নাসার তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা ৫ হাজার ৪১৯টি এক্সোপ্ল্যানেট সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। নিশ্চিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে আরও ৯ হাজার ৬৩১টি গ্রহের অস্তিত্ব। ২০১৮ সালে এই গবেষণাপত্র প্রকাশের সময় নিশ্চিত এক্সোপ্ল্যানেটের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬০৫টি। এর মধ্যে মাত্র ৫৯৪টি গ্রহের ব্যাসার্ধ ও ভর জানা ছিল। অর্থাৎ এ গ্রহগুলোর মহাকর্ষ বল জানার সুযোগ ছিল।
অধ্যাপক পোলজাকের হিসেব অনুযায়ী, এর ৪২২টির মহাকর্ষ বলের মান ছিল পৃথিবী থেকে সাড়ে ৩ গুণের নিচে। অর্থাৎ এগুলোতে মানুষ চলাফেরা করতে পারবে বলেই মনে হয়। বিয়নসনের মতো শক্তিশালী মানুষের জন্য অবশ্য এই তালিকায় আরও ৩৫টি গ্রহ যোগ করা যায়। তবে সেসব গ্রহ বাকিদের জন্য কোনো কাজে আসবে না।