বর্তমান সময়ে যত দিন এগোচ্ছে ততই বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিত্যনতুন জিনিসপত্র তৈরি করা হচ্ছে। যেগুলির আবিষ্কার রীতিমতো সাড়া ফেলে দিচ্ছে সর্বত্র। এমতাবস্থায়, পুণের প্রিয়দর্শন সহস্ত্রবুদ্ধে “বায়ু” নামের এমনই একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন, যার মাধ্যমে তিনি দু’টি উপায়ে পরিবেশকে রক্ষা করছেন। মূলত, তাঁর তৈরি এই মেশিনটি একটি বায়োগ্যাস ডিভাইস। যা ভেজা বর্জ্য থেকে কার্বোহাইড্রেটকে মিথেন গ্যাসে রূপান্তরিত করে। পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা উপলব্ধি করে তিনি ২০১৫ সালে “বায়ু” নামের ওই যন্ত্রটি তৈরি করেন।
ওই যন্ত্রের দারুণ সফলতার পর আজ তিনি বিভিন্ন ধরণের বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করার জন্য যন্ত্র তৈরি করছেন। এই প্রসঙ্গে প্রিয়দর্শন বলেন, “আজ, আমার সামাজিক উদ্যোগ ‘বায়ু মিত্র’-র মাধ্যমে, আমি রান্নাঘরের বর্জ্য থেকে শুরু করে সব ধরণের বর্জ্যকে শক্তিতে রূপান্তর করতে কাজ করছি।”
নিজস্ব কারখানার বর্জ্য থেকে তৈরি প্রথম বায়োগ্যাস ডিভাইস: ২০১৫ সালে, প্রিয়দর্শন তাঁর বাবার অটো কম্পোনেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিতে কাজ করতেন। যদিও, তিনি সর্বদাই পরিবেশ দূষণের বিষয়টিতে উদ্বিগ্ন থাকতেন। পাশাপাশি, তিনি এমন কিছু করতে চেয়েছিলেন যাতে সাধারণ মানুষও এতে যোগ দিতে পারেন এবং পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করতে পারেন। এমতাবস্থায়, তিনি ডাঃ আনন্দ কারভের সাথে দেখা করেন, যিনি তাঁর সংস্থার মাধ্যমে বায়োগ্যাস নিয়ে কাজ করছিলেন। প্রিয়দর্শন তাঁর নির্দেশ মতো একটি ছোট বায়োগ্যাস ডিভাইস তৈরি করে ফেলেন। ২০১৫ সালে এই মেশিন তৈরির পর তিনি বায়োগ্যাসের ক্ষমতা সম্পর্কে প্রথম উপলব্ধি করেন।
প্রিয়দর্শন জানান, “আমি মনে করতাম এটি গোবর গ্যাস, যা শুধুমাত্র গ্রামাঞ্চলে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই ছোট ডিভাইসটি তৈরি করার পরে, আমি বুঝতে পেরেছি যে এটি শহরাঞ্চলের জন্যও খুব প্রয়োজনীয় হতে পারে।” এমতাবস্থায়, তাঁর কারখানায় ওই ডিভাইসটি পরীক্ষা করার পরে, প্রিয়দর্শন তাঁর বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়দের জন্য এমন আরও বায়োগ্যাস ডিভাইস তৈরি করেছিলেন।
“বায়ু” একই সাথে দু’টি সমস্যা নিয়ে কাজ করে: প্রিয়দর্শন জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে এই ডিভাইসটি তৈরি করার পিছনে তাঁর উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র বর্জ্য সংগঠিত করা। কিন্তু যখন তিনি দেখলেন যে খাবারের বর্জ্যও এর কাজে লাগতে পারে তখন তিনি “বায়ু” নিয়ে আরও গবেষণা করে সেটিকে বেশি কার্যক্ষম করার কথা ভাবেন। তাঁর মতে,“যখনই আমরা কোনো শক্তি তৈরির কথা বলি, আমরা অনুভব করি যে একজন সাধারণ মানুষ তা করতে পারে না। কিন্তু এমন অনেক মাধ্যম ও উপায় আছে যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষও শক্তি তৈরি করতে পারে। খাবারের বর্জ্য প্রতিটি বাড়িতে সবচেয়ে সহজলভ্য জিনিস, এটি যদি শক্তি উৎপন্ন করতে পারে তবে এর চেয়ে ভাল আর কি হতে পারে?”
এই চিন্তা করেই তিনি “বায়ু”কে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা শুরু করেন। প্রিয়দর্শন প্রতিবেশীদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা ভেজা বর্জ্য “বায়ু”-র ডিভাইসে রাখতে বলেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি যখন আমার প্রতিবেশীদের বলেছিলাম যে আপনাদের বাড়ির আবর্জনা আমার কাজে লাগবে, তখন অনেকেই খুশি হয়ে আমাকে আবর্জনা দিতে রাজি হন। তাঁরা বলতেন, আমাদের বর্জ্য কাজে আসছে, আর কি দরকার!” এভাবে তিনি প্রতিবেশীদের কাছ থেকে পাওয়া ভেজা বর্জ্য থেকে রান্নার গ্যাস তৈরি করতে শুরু করেন। এমনকি, তিনি জানান যে, এভাবে প্রতিদিন ছয় থেকে সাত কেজি ভেজা বর্জ্য দিয়ে একটি বাড়িকে এলপিজি মুক্ত করা সম্ভব।
এমতাবস্থায়, প্রিয়দর্শন তাঁর বায়োগ্যাস ডিভাইসটির বড় আকারে ব্যবহার শুরু করতে শহরের সাফাইকর্মীদের সাহায্য নিতে শুরু করেন। তিনি বলেন, “আমি মেথরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছি এবং এখন তাঁরা শহরের কিছু বাড়ি থেকে ভেজা বর্জ্য এনে বায়ুতে ফেলে দেন।”
“বায়ু” কিভাবে কাজ করে: “বায়ু” এমন একটি বায়োগ্যাস সিস্টেম, যার জীবন জীবাণুর মাধ্যমে নিহিত রয়েছে। এই জীবাণুগুলি বায়োগ্যাস তৈরি করে। “বায়ু” জৈব গ্যাসের সাথে তরল সার এবং জৈব ফাইবার সরবরাহ করে, যা গাছপালা ব্যবহার করে। এইভাবে একটি “বায়ু” একাধিক পরিবেশগত সমস্যা দূর করতে কাজ করে। এখনও পর্যন্ত, প্রিয়দর্শন সারা দেশে ৩২০ টি বায়ু ইন্সটল করেছেন। উল্লেখ্য যে, এগুলির ছোট ডিভাইসটি বানাতে খরচ হয় প্রায় ২৩ হাজার টাকা। অপরদিকে, বড়টির ক্ষেত্রে খরচ হয় প্রায় ১ লক্ষ টাকা।