ফ্রিল্যান্সিং মূলত কাজের এমন একটি ধরন- যেখানে আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানের অধীন না থেকে নিজের মতো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, কোনো ব্যক্তি যখন নিজের দক্ষতাকে কাজ লাগিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের অধীন না থেকে কাজ করেন- তখন ওই কাজকে বলা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। আর যে ব্যক্তি ফ্রিল্যান্স কাজ করেন, তিনিই হচ্ছেন একজন ফ্রিল্যান্সার। আমাদের আজকের আয়োজন ফ্রিল্যান্সিংয়ের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে। ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন- আজহারুল ইসলাম অভি
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজগুলো ঘর থেকেই করা যায়। তবে অনেক সময় ক্লায়েন্টের অফিসে গিয়েও কাজ করার প্রয়োজন হতে পারে। মাঝে মধ্যে অনেকেই জানতে চান ফিল্যান্সিং করতে কী কী প্রয়োজন?
ফ্রিল্যান্সিং করতে কী কী প্রয়োজন, এটি নিয়ে তর্কের শেষ নেই। তবে প্রথমে যে বিষয়টি আপনার থাকতে হবে, এ ক্ষেত্রে তা হচ্ছে দক্ষতা। আপনার দক্ষতা থাকার মানে হচ্ছে, আপনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রথম ধাপটি অতিক্রম করতে পেরেছেন। এর পর ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য কিছু সাধারণ উপাদান প্রয়োজন হয়। সেগুলো হলো- কম্পিউটার বা ল্যাপটপ অথবা মোবাইল (কাজের ধরনের ওপর ভিত্তি করে), ইন্টারনেট কানেকশন কিংবা মডেম, কাজের দক্ষতা, কাজে লাগানোর মতো সময় ও ফ্রিল্যান্সিং করার সেরা ওয়েবসাইটগুলো। নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা থাকলে ফ্রিল্যান্সার হওয়া খুবই সহজ। তবে ফ্রিল্যান্সিং করার আগে আপনি কোন বিষয়ে দক্ষ, তা ভালোভাবে জানতে হবে। সহজে কাজ পাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস রয়েছে অনলাইনে। এসব মার্কেটপ্লেসে বিভিন্ন মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক কাজের সুযোগ রয়েছে। ফলে চাইলেই যে কোনো বিষয়ে দক্ষ ব্যক্তিরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করতে পারেন। নিচে জনপ্রিয় কয়েকটি ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসের নাম ও কাজের ধরন সংক্ষেপে দেওয়া হলো।
ফাইভার : ৫ ডলার থেকে শুরু করে বিশাল অঙ্কের ফ্রিল্যান্সিং গিগ পাওয়া যায় ফাইভারে। মূলত কনটেন্ট রাইটিং, গ্রাফিক্স বা লোগো ডিজাইন প্রভৃতি ক্যাটাগরির ফ্রিল্যান্সিং কাজ ফাইভারে বেশ জনপ্রিয়। ফাইভারে ফ্রিল্যান্সাররা গিগ পোস্ট করে ও বায়াররা তাদের পছন্দের ফ্রিল্যান্সারকে হায়ার করতে পারেন। ফাইভারে পেমেন্ট হয় কাজভিত্তিক। পেপাল, পাওনিয়ার ও ব্যাংক ট্র্যান্সফারের মাধ্যমে ফাইভার থেকে অর্জিত অর্থ তোলা যায়।
আপওয়ার্ক : কাজভিত্তিক ও ঘণ্টাভিত্তিক পেমেন্ট- উভয় ধরনের কাজই পাওয়া যায় আপওয়ার্কে। আপওয়ার্কে ফ্রিল্যান্সার যিনি খুঁজছেন, তিনি কাজ পোস্ট করেন। এর পর ফ্রিল্যান্সাররা পোস্ট করা কাজের জন্য রিকোয়েস্ট পাঠান। পরে সেই বায়ার তার পছন্দের ফ্রিল্যান্সার বেছে নেন। আপওয়ার্ক থেকে টাকা তোলা যাবে পেপাল, পাওনিয়ার ও ব্যাংক ট্র্যান্সফারের মাধ্যমে।
ফ্রিল্যান্সার ডটকম : ফ্রিল্যান্সার ডটকমে পাওয়া যায় কাজভিত্তিক ও ঘণ্টাভিত্তিক- উভয় ধরনের কাজই। বিশাল সংখ্যার কাজ ও ফ্রিল্যান্সার নিয়ে গঠিত এ সাইটটি। পেপাল, স্ক্রিল, পাওনিয়ার ও ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে তোলা যাবে ফ্রিল্যান্সার ডটকমে অর্জিত অর্থ।
অর্থ উত্তোলন : আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিংয়ে অর্জিত অর্থ বিভিন্ন উপায়ে দেশে নিয়ে আসতে পারেন একজন ফ্রিল্যান্সার। সরাসরি স্থানীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কিংবা পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারেন। এই পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে মার্কেটপ্লেস থেকে অর্থ উত্তোলন করতে চাইলে মার্কেটপ্লেসে তা ঠিক করে দিতে হবে।
আবার মার্কেটপ্লেসের বাইরে সরাসরি কোনো ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট অথবা স্থানীয় ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আপনি সরাসরি ক্লায়েন্টের কাছ থেকে টাকা আনা যায়। আর তা করতে হলে প্রথমে ক্লায়েন্টের কাছে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য পাঠাতে হবে। এ ছাড়া অবশ্য আরও অনেক বিকল্প আছে। তবে জনপ্রিয় মাধ্যমগুলোর মধ্যে এগুলো বেশি ব্যবহৃত।
অর্থ উত্তোলনে অসুবিধা : অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বর্তমানে আউটসোর্সিংয়ের অর্থ উত্তোলন করা গেলেও উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, ব্যাংকগুলো এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সেবা বা সার্ভিস দিতে পারছে না। তা ছাড়া আউটসোর্সিং করা উপার্জিত অর্থ উত্তোলন করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। বাংলাদেশের টাকার সঙ্গে ডলারের দামে পার্থক্য থাকায় অনেককেই বিভিন্ন সমস্যার শিকার হতে হয়।
আবার অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাব এবং বাংলাদেশে সেই মাধ্যমের সহজলভ্যতা না থাকার কারণে অনেকেই এর দ্বারা বিপাকে পড়ে থাকেন। বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সিং সাইটের কাজের অর্থের বিনিময় হয় পেপালের মাধ্যমে; কিন্তু বাংলাদেশে পেপাল ব্যবহার করা যায় না, যার কারণে অনেক সময় বায়ার অর্থ লেনদেন করতে বাধার সম্মুখীন হয়।