আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই লালা ঝরার ঘটনা ঘটেছে। মুখে অতিরিক্ত লালা উৎপাদন হলে ঘুমের মধ্যে অনেকের লালা ঝরতে দেখা যায়। লালা একটি স্বচ্ছ তরল যা লালা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় এবং পরিপাকে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখে। লালা খাদ্যকে সিক্ত হতে, পিণ্ডের মত হতে এবং এর এনজাইমের দ্বারা খাবারকে ভাংতে সাহায্য করে।
প্রিয় কোন খাবার বা টক খাবারের কথা মনে আসলেই মুখে লালা চলে আসে, তাই না? কিন্তু অনেক বেশি লালার নিঃসরণ আমাদের শরীরের আভ্যন্তরীণ কোন কারণকেই নির্দেশ করে। চলুন তাহলে জেনে নিই চিকিৎসকদের মতে, মুখের অতিরিক্ত লালা নিঃসরণের কারণগুলোর বিষয়ে।
কেন লালা ঝরে?আসলে মুখের অতিরিক্ত লালা ঘুমের সময় বেরিয়ে আসে। এটি অস্বাভাবিক নয়। অবশ্য বড়দের এমনটা ঘটলে তা অস্বস্তি কর হয়ে ওঠে। ঘুমানোর সময় খাবার বা পানীয় গেলার পেশিগুলো দেহের অন্যান্য পেশির মতোই নিষ্ক্রিয় থাকে। এ কারণে মুখের এই কোণা সেই কোণা থেকে লালা বেরিয়ে আসতে পারে।
কারণ, তখন পেশি এদের ধরে রাখা বা নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় থাকে না।এটা অনেক সময়ই স্বাভাবিক ঘটনা হলেও মাঝে মাঝে অসুখের লক্ষণও প্রকাশ করে। নিউরোলজি, ঘুম সমস্যা কিংবা অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যার
কারণে এমনটা ঘটে। স্ট্রোক, সেরেব্রাল পালসি কিংবা মাল্টিপল স্কেলেরোসিস (এমএস)-এ আক্রান্ত হলে ঘুমের মধ্যে মুখ থেকে লালা ঝরতে পারে। আরো কিছু কারণ আছে এমনটা ঘটার।সমাধান কি–
১. সাইনাস পরিষ্কার করুনসর্দি বা সংক্রমণ ের কারণে নাসারন্ধ্র বন্ধ থাকলে ঘুমের সময় লালা ঝরার সম্ভাবনা দেখা দেয়। নাকের পথে নিয়মিত সমস্যা থাকলে এ ঝামেলায় পড়বেন। যাদের নাসারন্ধ্র জন্মগত
কারণেই স্বাভাবিকের চেয়ে সরু, তাদের লালা ঝরার সমস্যা প্রতিনিয়ত থাকে। আর ঘুমের সময় সুস্থ মানুষও যদি মুখ খুলে শ্বাস নেন, তবে একই অবস্থায় পড়বেন।
প্রতিদিন স্যালাইন দ্রবণ নিয়ে নেটি পট বা অন্য কিছু দিয়ে নাক ধোয়ার জন্য ব্যাবহার করুন। এতে সাইনাস সিক্ত থাকবে এবং দ্বিগুণ হয়ে ঠাণ্ডা বা অ্যালার্জির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবে।এর জন্য দুই গ্লাস পানিতে ১
টেবিল চামুচ লবণ মিশিয়ে গরম করুন।যখন পানি মোটামুটি ঠাণ্ডা হয়ে আসবে তখন একটি সরু মুখের পাত্রে মিশ্রণটি নিন।এবার পাত্রের সরু মুখটি দিয়ে নাকের এক ছিদ্র দিয়ে পানি ঢুকান যাতে নাকের অপর ছিদ্র দিয়ে পানি বের হয়ে যেতে পারে।সাবধানে করতে হবে যাতে গলার ভিতরে পানি চলে না যায়।
২. ঘুমের ভঙ্গি পরিবর্তন করুনএটাকে সবচেয়ে সাধারণ কারণ বলা যায়। ঘুমের ভঙ্গিমার কারণে মুখের লালা অতি সহজে বেরিয়ে আসার সুযোগ পায়। চিত হয়ে সোজা ভঙ্গীতে ঘুমালে এমন হওয়ার কথা না। আবার কাত হয়ে ঘুমালে কিংবা উপুড় হয়ে ঘুমালে লালা ঝরার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ অবস্থায় সাধারণত মুখ নিয়ে নিঃশ্বাস নিতে হয়। তখন মুখ হা হয়ে থাকে। কাজেই লালা বেরিয়ে আসা অনেক সহজ।
৩. আপনার স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে কিনা দেখুনএ রোগ থাকলে ঘুমের সময় দেহ শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে দেয়। বাধ্য হয়ে মুখ দিয়ে জোরপূর্বক শ্বাস গ্রহণ করতে হয়। তাই এমন ঘটনায় স্লিপ অ্যাপনিয়া নেপথ্যে থাকতেই পারে। আর স্লিপ অ্যাপনিয়া এক ভয়াবহ রোগ হয়ে দেখা দেয়।
৪. অতিরিক্ত ওজন কমানঅতিরিক্ত ওজন আপনার ঘুমের উপর বাজে প্রভাব ফেলে । এর মধ্যে মুখ দিয়ে লালা ঝরা অন্যতম।
৫. বিশেষ ডিভাইস ব্যবহার করুনঅনেকে ম্যানডিবুলার ডিভাইস ব্যবহার করেন। এটা এমন এক যন্ত্র যা মুখে লাগিয়ে ঘুমাতে হয়। এটা ঘুমের সময় মুখ বন্ধ রাখে এবং ঘুমকে আরামদায়ক করে। সমস্যাটা স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণে ঘটলে সিপিএপি মেশিন বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। এই যন্ত্র কেবল লালা ঝরানোই বন্ধ করবে না, ঘুমকে গভীরে নিয়ে যাবে। আপনি সঠিক পদ্ধতিতে এবং সুষ্ঠুভাবে ঘুমাচ্ছেন- তা নিশ্চিত করবে সিপিএপি মেশিন।
৬. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিশেষ কোনো রোগের চিকিৎসা নিতে থাকলে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ (বিশেষ করে ক্লোজাপাইন) এবং আলঝেইমার্স রোগে ব্যবহৃত ওষুধের প্রভাবে লালা ঝরে।
৭. উঁচু বালিশে ঘুমানউঁচু বালিশে ঘুমালে আপনার মাথা উঁচু হয়ে থাকবে যা লালা ঝরা প্রতিরোধ করবে। তবে এতটা উঁচু করবেন না যেন ঘুমের অসুবিধা হয়। আরামদায়ক অবস্থান তৈরি করুন।
৮. সার্জারির কথা ভাবুনসত্যিকার অর্থে বিশেষজ্ঞই ভালো বুঝবেন রোগীকে কি ধরনের চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন। তবে প্রাথমিকভাবে ঘুমের ভঙ্গিমা বদলাতে বলা হয়।অনেকেই আরো সাহসী চিকিৎসা নিতে চান। সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ সঠিক মাত্রার বোটোক্স ইঞ্জেকশন দিয়ে থাকেন। আর সমস্যা গুরুতর হলে শেষ পর্যন্ত সার্জারির পথ তো খোলা আছেই।