শরিয়তের প্রধান চার স্তম্ভের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো হাদিস। হাদিসের ওপর নির্ভর করে ইসলামের বহু গুরুত্বপূর্ণ বিধি-বিধান নির্ধারিত হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিশেষ অবদান রেখেছেন উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)। মহানবী (সা.)-এর স্ত্রী খাদিজা (রা.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি রাসুল (সা.)-এর স্ত্রী হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই মহীয়সী নারী রেখে যান হাদিসশাস্ত্রে অসামান্য অবদান। তাঁর বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার ২১০।
হাদিসশাস্ত্রের প্রসিদ্ধ প্রথম স্তরের কিতাব সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম ও মুআত্তা, দ্বিতীয় স্তরের কিতাব সুনানে নাসায়ি, সুনানে আবু দাউদ ও জামেউত তিরমিজি এবং অন্যান্য প্রসিদ্ধ কিতাব, যেমন- আল মুসতাদরাক, সহিহ ইবনে হিব্বান ও সহিহ ইবনে খুজাইমা-সব জুড়ে আছে মহীয়সী নারী আয়েশা (রা.)-এর অসামান্য অবদান।
ইমাম মালেক (মৃত্যু ১৭৯ হিজরি) রচিত আল মুয়াত্তা গ্রন্থে ১৫১টি হাদিস। ইমাম বুখারি (মৃত্যু ২৫৬ হিজরি) রচিত সহিহ বুখারিতে ৯৮৮টি হাদিস। মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ (মৃত্যু ২৬১ হিজরি) রচিত সহিহ মুসলিমে ৬৬০টি হাদিস। আবু দাউদ, সুলাইমান ইবনুল আশআস (মৃত্যু ২৭৫ হিজরি) রচিত আবু দাউদে ৪৪১টি হাদিস। তিরমিজি, আবু ঈসা মুহাম্মাদ (মৃত্যু ২৭৯ হিজরি) রচিত তিরমিজিতে ৩৭৩টি হাদিস।
নাসায়ি, আহমদ ইবনু শুআইব (মৃত্যু ৩০৩ হিজরি) রচিত সুনানু নাসায়িতে ৬৭৬টি হাদিস। ইবনে মাজাহ কাযবিনি, মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াজিদ (মৃত্যু ২৭৫ হিজরি) রচিত সুনানু ইবনু মাজাহতে ৩৯৩টি হাদিস। ইবনু আবি শাইবা (মৃত্যু ২৩৫ হিজরি) রচিত মুসান্নাফে আবি শাইবাতে ৭৪২টি হাদিস। বায়হাকি (মৃত্যু ৪৫৮ হিজরি) রচিত শুআবুল ঈমানে ৪৪৩টি হাদিস।
ইবনে হিব্বান (মৃত্যু ৩৫৪ হিজরি) রচিত সহিহ ইবনে হিব্বানে ৮৩১টি হাদিস। ইবনে খুজাইমা (মৃত্যু ৩১১ হিজরি) রচিত সহিহ ইবনে খুজাইমাতে ৩১৯টি হাদিস। এবং হাকিম নাইসাপুরী (মৃত্যু ৪০৫ হিজরি) রচিত আল মুসতাদরাকে ৬০৪টি হাদিস বর্ণনা করেন তিনি।
আয়েশা (রা.) যেসব বিষয়ে হাদিস বর্ণনা করেন, তার কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয়বস্তু হলো-
১. ওহির সূচনা ও নবুয়ত প্রাপ্তি ২. তাকদিরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন ৩. কবরের আজাব ৪. কিতাব ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা ৫. উত্তম আমল ৬. জ্ঞানার্জন ৭. অজু আবশ্যক হওয়ার কারণ ৮. প্রাকৃতিক প্রয়োজন ৯. অজুর সুন্নত ১০. মলমূত্র ত্যাগে শিষ্টাচার ১০. গোসলের বিবরণ ১১. ঋতুস্রাব ১২. ইস্তিহাজা ১৩. সালাতের বর্ণনা ১৪, রমজানের তারাবি ১৫, রমজান ১৬, জাকাত ও দান ১৭, ইতিকাফ ১৮. তাওবা ও ইস্তিগফার ১৯. হজের বর্ণনা ২০. কোরবানির বর্ণনা ২১. ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসার বর্ণনা ২২. বিবাহের বর্ণনা ২৩. মহরের বর্ণনা ২৪. প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থার বর্ণনা ২৫. রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বর্ণনা ২৬. শপথ ও মানত ২৭. শিষ্টাচার ও আচার-আচরণের বর্ণনা ২৮. প্রতিবেশীর অধিকার ২৯. পোশাক-পরিচ্ছদ এবং ৩০. রাসুল (সা.)-এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, মুজিজা ও ইন্তেকালের বর্ণনা ইত্যাদি।
এ ছাড়া আয়েশা (রা.)-এর থেকে হাদিস শিক্ষা গ্রহণ করেছেন, তাঁদের সংখ্যা অগণিত। বিভিন্ন সাহাবি, তাবেঈ, তাঁদের আত্মীয়-স্বজন, নিকটজন, নারী গোলামসহ অনেকে তাঁর কাছ থেকে হাদিস শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। ইমাম শামসুদ্দিন জাহাবি (মৃত্যু ৭৪৮ হিজরি/১৩৭৪ খ্রি.) আয়েশা (রা.)-এর থেকে হাদিস শিক্ষা গ্রহণ করেছেন এমন ১৯০ জনের নাম উল্লেখ করেছেন। হাদিসশাস্ত্রে আয়েশা (রা.)-এর অসামান্য অবদান ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সোনালি ইতিহাসে চির অম্লান হয়ে থাকবে, ইনশাআল্লাহ।