স্টিফেন হকিংয়ের বিখ্যাত ‘ব্ল্যাকহোল ইনফরমেশন প্যারাডক্স’-এর সম্ভাব্য সমাধান বের করেছেন একদল বিজ্ঞানী। যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন গবেষকের লেখা এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি গত ৬ মার্চ, সোমবার ফিজিক্স লেটারস বি জার্নালে প্রকাশিত হয়।
ব্ল্যাকহোল ইনফরমেশন প্যারাডক্স হলো পদার্থবিজ্ঞানের দুটি মৌলিক বিষয়—তথ্যের সংরক্ষণশীলতা ও ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্বের মধ্যকার দ্বন্দ। তথ্যের সংরক্ষণশীলতার সূত্র বলে, মহাবিশ্বের কোনো তথ্য পুরোপুরি হারিয়ে যাওয়া সম্ভব না। আবার ব্ল্যাকহোলের ঘটনা দিগন্ত পার হলে কোনো কিছুই ফিরে আসে না, মিশে যায় সিঙ্গুলারিটিতে।
১৯৭৪ সালে স্টিফেন হকিং আবিষ্কার করেন, ব্ল্যাকহোল থেকে একধরনের তথ্যবিহীন বিকিরণ নির্গত হয়। এ বিকিরণকে হকিং রেডিয়েশন বা হকিং বিকিরণ বলে। হকিং বিকিরণের কারণে একসময় সম্পূর্ণ ব্ল্যাকহোল নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। এর অর্থ, ব্ল্যাকহোলে মিশে যাওয়া তথ্যেরও নিঃশেষ হয়ে যাওয়া। হকিংয়ের এই আবিষ্কারের ফলে জন্ম হয় প্যারাডক্সটির।
নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ব্ল্যাকহোলে কোনো তথ্য আসলে হারিয়ে যায় না। এসব তথ্য ব্ল্যাকহোল থেকে বিশেষ অবস্থায় বেরিয়ে আসে এবং এর চারপাশে থাকে। তথ্যগুলোর এই বিশেষ অবস্থাকে বলা হয় কোয়ান্টাম হেয়ার বা কোয়ান্টাম লোম। গবেষক দলটির দাবি, এসব তথ্য সংগ্রহ করাও সম্ভব হতে পারে। এখান থেকে জানা যেতে পারে ব্ল্যাকহোল সম্পর্কিত অজানা নানা তথ্য।
গবেষণাটির নেতৃত্ব দেন যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যলয়ের স্কুল অব ম্যাথমেটিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক জেভিয়ার ক্যালমেট। গত বছর তিনি ও তাঁর দল ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের কোয়ান্টাম হেয়ার থাকার বিষয়টি প্রমাণ করেন। এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্র তখন প্রকাশিত হয়েছিল। কিছু প্রশ্ন ছিল সেই গবেষণায়। জেভিয়ার ক্যালমেটের দাবি, সর্বশেষ এ গবেষণায় সেসব প্রশ্নের উত্তর মিলেছে। ক্ষয়প্রাপ্ত ব্ল্যাকহোল থেকে তথ্য বেরিয়ে আসার ভৌত প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেছেন তাঁরা।
তাঁদের মতে, হকিং বিকিরণ নন-থার্মাল হলে, তা ব্ল্যাকহোল থেকে তথ্য বাইরে নিয়ে আসতে পারবে। তাত্ত্বিকভাবে সঠিক মনে হলেও এটি এখনো যাচাই করা সম্ভব নয়। কারণ, হকিং বিকিরণ এখনো সম্পূর্ণ তাত্ত্বিক বিষয়। তবে তাঁদের এই সমাধানটি সঠিক হলে পদার্থবিজ্ঞানের জটিল অনেক রহস্যের জট খুলবে। ব্ল্যাকহোল ও পুরো মহাবিশ্বকে আরও গভীরভাবে বুঝতে পারবে মানবজাতি।