হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার উপরেই নির্ভর করেন এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। হোমিওপ্যাথি ভক্তদের বক্তব্য এটা খুব ধীরে কাজ করে ও সঠিক কাজটা পরিপূর্ণভাবে করে।
তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, হোমিওপ্যাথি ৬৮ টি সমস্যার চিকিৎসা করলে একটিরও সমাধান করতে পারে না। এসব ক্ষেত্রে তার চেয়েও ভালো কাজ করে রোগীর মন রক্ষার জন্য দেওয়া ওষুধগুলো।
অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের এই গবেষণায় প্রধান হিসেবে কাজ করেন বন্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর পল গ্লাসজিও। মোট ১৭৬টি কেস স্টাডি করা হয় এই চিকিৎসা ঠিকমতো কাজ করে কিনা তা জানার জন্য।
এরকম প্রায় ৬৮টি ভিন্নরকম পরিস্থিতিতে মোটেও কার্যকর নয় হোমিওপ্যাথি বরং সেসব ক্ষেত্রে মন রক্ষার জন্য ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ বেশি কার্যকর বলেই দাবি গবেষকদের।
হোমিওপ্যাথি মূলত পানিতে কোনো উপাদান মিশ্রণ করে বানানো হয়। হোমিওপ্যাথি ভক্তরা মনে করে, যতটা উপাদান এই পদ্ধতিতে মিশ্রণ করা হবে ওষুধটির কার্যকারিতা তত বাড়বে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো উপাদানগুলো এত বেশিবার পানিতে মেশানো হয় যে তার আর বিন্দুমাত্র কার্যক্ষমতা থাকে না।
পল গ্লাসজিও বলেন, আমি এই চিকিৎসা সম্পর্কে কিছুই জানিনা এই মনোভাব নিয়েই গবেষণাটা শুরু করেছিলাম। সঙ্গে জানতে আগ্রহী ছিলাম এটা আদৌ কাজ করে কিনা। কিন্তু ৫৭ টি সিস্টেমেটিক রিভিউ দেখার পর আশা হারিয়ে ফেলি। পরবর্তীতে ১৭৬টি কেস স্টাডিই ফলো করি কিন্তু কোনো মনে রাখার মতো প্রভাব দেখি নি।
পল আরও যোগ করেন, তখনই বুঝলাম হোমিওপ্যাথির ডা. জন স্যামুয়েল হ্যানিম্যান কেন ১৮ শতকের ওষুধিবিদ্যা যেমন রক্ত শুদ্ধিকরণ বা অন্য কোনো ভালো বিকল্প বের করার প্রচেষ্টা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। কিন্তু এখন হয়তো হোমিওপ্যাথির সামগ্রিক ব্যর্থতা দেখে তিনি হতাশই হবেন।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান এ্যালোপ্যাথি চিকিৎসাশাস্ত্রে লেখাপড়া করে ডাক্তার হন এবং এ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি অনুযায়ী রোগীদের সেবা প্রদান করতেন। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি তিনি গবেষণা ও চিকিত্সার বইয়ের অনুবাদ করেছেন। গবেষণার এক পর্যায়ে তিনি এ্যালোপ্যাথিতে ক্ষতিকর সাইড এ্যাফেক্টের বিষয় দেখতে পান। এতে তিনি এলোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি পরিত্যাগ করেন। সাইড এ্যাফেক্টের কারণ নির্ণয়ের গবেষণার মাধ্যমে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার সূত্র আবিষ্কার হয়। পেরুভিয়ান কফি বা সিঙ্কোনা গাছের বাকল নিয়ে গবেষণা করতে করতে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা উদ্ভব হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে ১৭৯০ সালে মানবদেহে পরীক্ষামূলক পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু হয়।