যখন রসুল (সা.)-কে হত্যা করার নির্দেশ করা হলো, তখন আবু জাহল রাজি হয়নি, আবু লাহাব রাজি হয়নি। যখন কোনো কাফের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করতে রাজি হয়নি, তখন ওমর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করতে রাজি হয়ে যান, কিন্তু আল্লাহপাক তাঁকে ইমানের দৌলতে ধন্য করেছেন। প্রথমে তিনি পবিত্র কোরআনের তেলাওয়াত তাঁর বোনের মুখে শুনেছেন। ওই তেলাওয়াতের তাছিরের বরকতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর দিলের মধ্যে যত শিরক ছিল, কুফর ছিল, নবীবিদ্বেষ ছিল, তা সব ধুয়ে দিয়ে নবীর মহব্বতে পূর্ণ করেছিলেন। কোরআন এত বড় বরকতময় ও প্রভাব সৃষ্টিকারী জিনিস।
‘যারা ইমান আনয়ন এবং নেক আমল করল, সত্বরই আল্লাহপাক তাকে মহব্বতের বস্তুতে পরিণত করে দেবেন।’ ইমান এবং নেক আমল এ দুটি জিনিস যে কোনো ব্যক্তির মধ্যে আসবে, পৃথিবীর সব সৃষ্টি-জীবের অন্তরে আল্লাহপাক তাঁর মহব্বত ঢেলে দেবেন। সে মানুষ হোক বা জানোয়ার হোক, দানব হোক, প্রাণী হোক, বাতাস হোক বা পানি হোক। আল্লাহ নিজেও মহব্বত করবেন, উপরন্তু অন্যান্য সৃষ্টির অন্তরে মহব্বত ঢেলে দেবেন। বুখারি শরিফের হাদিসে বলা হয়েছে)- ‘যখন আল্লাহপাক কোনো বান্দাকে মহব্বত করেন, তখন ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-কে ডাকেন। ডেকে বলেন, আমি এ বান্দাকে মহব্বত করি, অতএব হে জিবরাইল! তুমিও তাকে মহব্বত কর। জিবরাইল আসমানের ফেরেশতাদের ডেকে ডেকে বলেন, এ লোকটাকে আল্লাহতায়ালা মহব্বত করেন আল্লাহর নির্দেশে আমিও তাকে মহব্বত করি। সুতরাং হে আসমানের ফেরেশতা! তোমরাও তাকে মহব্বত কর। অতঃপর আসমানের ফেরেশতাদের মাধ্যমে আল্লাহপাক পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে ওই লোকের মহব্বত ঢেলে দেন। সে সৃষ্টি যেভাবেই থাক, যে স্থানেই থাক, জঙ্গলে থাক, লোকালয়ে থাক সবাই তাকে মহব্বত করে। ফলে পৃথিবীর কোনো সৃষ্টি তাকে কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। পৃথিবীতে এমন হাজার ইতিহাস আছে। আল্লাহপাক আমাদের সঠিকভাবে ইমান আনয়ন ও নেক আমল করার তৌফিক দান করুন!
ইমাম গাজ্জালী (রহ.) বলেন, আমরা সাধারণত মনে করি, নেক আমল হলো শুধু নামাজ পড়া, রোজা রাখা, হজ করা, জাকাত দেওয়া, সালাম দেওয়া, আজান দেওয়া, ইকামত দেওয়া। এসব নেক আমল তো আমরা করছি। রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে নামাজ পড়বে, হালাল জবাই খাবে, বাইতুল্লাহকে কেবলা বানাবে, আল্লাহ ও রসুল তার অভিভাবক হয়ে যাবেন। পৃথিবীর কোনো শক্তি তার ওপর হাত তুললে ধ্বংস হয়ে যাবে।’ আমরা নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, হজ করি, জাকাত দিই, ইমানও আছে, সব আছে। আর আল্লাহ বলেছেন, যদি নামাজ পড়, রোজা রাখ, তবে পৃথিবীর কোনো শক্তি তোমাদের ধ্বংস করতে পারবে না। কিন্তু আমরা নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, জাকাত দিই, এরপরও আমরা বিধর্মীদের হাতে গ্রাস হয়ে যাচ্ছি। শুধু কাফেরদের হাতেই নয়, মুসলমানদের হাতেও, এর কারণ কী? ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, নেক আমল কাকে বলে বুঝতে চেষ্টা কর।
শুধু নামাজ নেক আমল নয়, শুধু রোজা নেক আমল নয়, যতক্ষণ তার মধ্যে দুটি জিনিস না আসে। নামাজের মধ্যে যখন দুটি জিনিস পাওয়া যাবে, রোজার মধ্যে দুটি জিনিস পাওয়া যাবে, সদকার মধ্যে দুটি জিনিস পাওয়া যাবে, ইকামতের মধ্যে দুটি জিনিস পাওয়া যাবে, তবেই এটা নেক আমল হবে। দুটির যে কোনো একটি বাদ পড়লে কাজটি নেক থাকবে না। তার একটা হলো ‘ইখলাস’। আল্লাহপাক হাশরের ময়দানে দানবীরকে ডেকে জিজ্ঞাসা করবেন, আমি যে দুনিয়ায় তোমাকে জীবন দিলাম সে জীবনে তুমি কী করেছ? সে বলবে হে আল্লাহ! টাকাপয়সা দিয়ে মাদরাসা বানিয়ে দিয়েছি, মসজিদ বানিয়ে দিয়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি তা এজন্য বানিয়েছিলে যেন মানুষ তোমাকে দানবীর বলে। দুনিয়াতে মানুষ তোমাকে দানবীর বলেছে, এখন তুমি জাহান্নামে যাও। অনুরূপভাবে কারিকে ডাকবেন, আলেমকে ডাকবেন, কী করেছ? তারা বলবে, অনেক বড় আলেম হয়ে ওয়াজ করেছি, হাজার হাজার মানুষের সম্মুখে কোরআন তেলাওয়াত করেছি। আল্লাহপাক বলবেন, এসব তো এ জন্য করেছিলে যাতে মানুষ তোমাকে বড় আলেম বলে, বড় কারি বলে, বড় বক্তা বলে, মুহতামিম বলে, শাইখুল হাদিস বলে। দুনিয়াতে মানুষ তোমাকে এসব বলেছে, এখন জাহান্নামে যাও। কী বোঝা গেল এর দ্বারা? কাজ তো সব ভালোই। কিন্তু কোন জিনিসের অভাবে এ নেক কাজগুলো কাজে লাগেনি? সেটার নাম সহজ ভাষায় ইখলাস। আমলের মধ্যে যতক্ষণ ইখলাস না থাকবে ততক্ষণ আমল পরিশুদ্ধ হবে না।