পডকাস্ট মূলত দুইটি শব্দ, আইপডের “পড” এবং ব্রডকাস্টের “কাস্ট” থেকে এসেছে। এমটিভির উপস্থাপক অ্যাডাম কেরি এই ধারনা প্রদান করেছিলেন। সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে, পডকাস্ট হচ্ছে এক ধরনের শো বা সিরিজ, যা মোবাইল অথবা কম্পিউটারের সাহায্যে ধারণ করে, যে কোন সময় শোনা যায়।
পডকাস্ট কতো প্রকার এবং কি কি?
পডকাস্ট দুই প্রকার । যথা:
অডিও পডকাস্ট।
ভিডিও পডকাস্ট।
১. অডিও পডকাস্ট কি: অডিও ভিত্তিক সাউন্ড রেকর্ড, যেখানে শুধু ভয়েস থাকে কোন ভিডিও থাকে না। আপনি যদি অডিও নিয়ে কাজ করেন তাহলে, শুধু মাত্র অডিও রেকর্ড করে ওয়েবসাইটে বা অ্যাপে আপলোড করলেই হয়ে যাবে।
২. ভিডিও পডকাস্ট কি: ভিডিও পডকাস্টের ক্ষেত্রে আপনি যে বিষয় নিয়ে কাজ করতে চান তার উপর ধারা বর্ণনা করতে হবে। ইউটিউবে আমরা বিভিন্ন ভিডিও দেখে থাকি, এটাই ভিডিও পডকাস্ট। তবে ইউটিউবের মতো এখানে কোন ধরা বাঁধা নিয়ম নেই।
আপনি ইউটিউবে আপনার চ্যানেলে অনেকগুলো প্লে-লিস্ট বানিয়ে বিভিন্ন বিষয় বা কন্টেন্ট নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। কিন্তু পডকাস্টে আপনি সেই সুবিধাটি পাবেন না। এখানে আপনাকে যেকোনো একটা বিষয় বা ক্যাটাগরি নিয়ে ভিডিও আপলোড করতে হবে। এখানে আপনি ইউটিউবের মতো সাবস্ক্রাইবার বাটন দিতে পারবেন, যার যতো সাবস্ক্রাইবার হবে তার শ্রোতার সংখ্যাও ততো বেশি হবে।
পডকাস্ট বনাম রেডিও
রেডিও এর সাথে পডকাস্টের কিছু কিছু মিল রয়েছে আবার কিছু কিছু জায়গায় অমিলও রয়েছে।
সাদৃশ্য: আমরা রেডিও তে শুধুমাত্র শুনে থাকি; কোন কিছু দেখতে পাই না। ঠিকে তেমনি অডিও পডকাস্টেও আমরা শুধু শুনতে পাই; কিন্তু কিছু দেখতে পাই না।
পার্থক্য: রেডিও তে প্রোগ্রামের পরিবর্তন অর্থাৎ প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন কন্টেন্ট সম্প্রচার হয়। কিন্তু পডকাস্টে শুধু মাত্র একটা বিষয় নিয়েই কাজ করতে পারবেন। তাই ,আপনাকে ভেবে চিন্তে শুধুমাত্র একটা কন্টেন্ট নিয়ে এগিয়ে চলতে হবে।
পডকাস্টের গ্রাহক
২০০৯ সালে পডকাস্টের গ্রাহক ছিলো ২৫ মিলিয়ন। ২০১৪ সালে এসে এর গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৫ মিলিয়ন। ২০১৮ সালে এসে এর গ্রাহক হয় ১৫০ মিলিয়ন এর মতো। মানে মাত্র ৪ বছরের ব্যবধানে এর গ্রাহক সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে। প্রতিনিয়ত এর গ্রাহক সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে।
পডকাস্টের জনপ্রিয়তার কারণ
ধরুন আপনার সামান্য জর সর্দি হয়েছে। এখন আপনি পডকাস্টের সাহায্যে মাত্র ২০ সেকেন্ডেই এর সমাধান পেয়ে যাবেন। প্রতিটি পডকাস্ট সাধারণত ২ থেকে ৩ মিনিটের হয়ে থাকে। এর সাইজ ২ এমবির মতো ডাটার প্রয়োজন হয়। আপনার কাছে স্মার্ট-ফোন না থাকলেও আপনি এটি শুনতে পারবে।
কারা আপনার পডকাস্টের শ্রোতা
পডকাস্টের রয়েছে নির্দিষ্ট শ্রোতা। এই শ্রোতাগুলো অভিজাত শ্রেণির হয়ে থাকে। কন্টেন্ট-ভেদে এর শ্রোতার সংখ্যা কম বেশি হয়ে থাকে।
পডকাস্টের জন্য ৪ টি বিষয়ের উপর খেয়াল রাখতে হবে:
পরিষ্কার সাউন্ড
সুন্দর কণ্ঠ
পরিচ্ছন্ন উপস্থাপন
সুন্দর স্ক্রিপ্ট
অডিও পডকাস্টের জন্য আপনার সাউন্ড অবশ্যই সুন্দর হতে হবে। যেহেতু এটি অডিও তাই আপনার চেহারা সুন্দর না হলেও চলবে। কিন্তু আপনার কণ্ঠ সুন্দর হইতেই হবে, নয়তো কেউ শুনবে না। আপনার চেহেরাও সুন্দর না, কিংবা আপনার কণ্ঠও এতো সুন্দর না। তবে আপনার চিন্তা শক্তি অসাধারণ তাহলে, আপনি এমন কাউকে দিয়ে অডিও বানান যার কণ্ঠ মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর।
তাহলে শ্রোতারা শেষ পর্যন্ত আপনার পডকাস্ট শুনবে। চেষ্টা করুন এক পর্বের অডিও না বানিয়ে, সিরিজ বানাতে এতে করে শ্রোতারা পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করবে। সেটা গল্প বা উপন্যাস নিলে অনেক ভালো হবে। এতে করে আপনার বিনোদনের পাশাপাশি রেকর্ডিং হয়ে যাবে।
যে সাইটে পডকাস্ট পাবলিশ করবেন, সেই সাইট সুন্দর করে ডিজাইন করে নিন। ওয়েবসাইট ডিজাইনের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন Omar Faruk ভাইয়ের সাথে।
কেননা শ্রোতার ঘণ্টার পর ঘণ্টা যেই সাইটের মধ্যে ব্যয় করবে, সেটা অবশ্যই সুন্দর হওয়া উচিত। এছাড়া, সাইটের লোডিং স্পীড ভালো হতে হবে। ২জি গতির লোডিং হলে কেউ আপনার সাইটে আসবে না।
পডকাস্ট কিভাবে করবেন?
প্রথমেই বলে রাখি, আপনি যদি এটা একা একা করতে চান তাহলে, এমন বিষয় নির্ধারণ করুন যাতে করে খুব সুন্দর সাবলীলভাবে করতে পারেন। প্রথমে যেমন কথার স্পিড থাকবে শেষে যেনও সেরকমই থাকে।
আর কয়েকজন নিয়ে কাজ করতে চাইলে, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করতে পারেন। সেটা খেলাধুলাও হতে পারে। যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে ঘরের মধ্যেই একটা স্টুডিও দাঁড় করে দিন।
পডকাস্টের জন্য যেসব জিনিস প্রয়োজন
অডিও রেকর্ডার (মোবাইল হলেও চলবে)
ভালো হেড-ফোন (কম দামে, উন্নত সাউন্ড চাইলে “Boya-M1” নিতে পারেন)
সাউন্ড ইডিটর (অডাসিটি, অডবি অডিশন)
ভিডিও ইডিটর (ফিল্মমোরা, ক্যামতেসিয়া, সনি ভেগাস, অডবি প্রিমিয়ার প্রো ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য)
ওয়েবসাইট ( ডোমেইন + হোস্টিং সহ)/ অ্যাপ। অথবা, স্পোটিফাই, Audible বা থার্ড পার্টি অ্যাপে আপনার পডকাস্ট আপলোড করতে পারেন।
পডকাস্ট থেকে আয় করবেন কীভাবে?
১. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
বর্তমানে Amazone Audible অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার মাধ্যমে পডকাস্ট থেকে আয় করার সুযোগ দিচ্ছে। কোন ভিজিটর যখন আপনার লিংকে ক্লিক করে সাবস্ক্রিপশন নিবে তখন আপনি কমিশন পাবেন। এছাড়া, অন্যান্য অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সাইটের ক্ষেত্রে পণ্য কিনলে আপনি কমিশিন পাবেন।
২. বিজ্ঞাপন
পডকাস্ট থেকে আয়
পডকাস্ট থেকে আয়
আপনি যেখানে আপনার পডকাস্ট শেয়ার করবেন, হতে পারে ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপ। সেই ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপে বিজ্ঞাপন দিয়েও টাকা আয় করতে পারবেন। এক্ষেত্রে জনপ্রিয় কিছু অ্যাড মনিটাইজ করার ওয়েবসাইট হলো।
Ad Results Media
Adopter Media
AdvertiseCast
True Native Media
Midroll
Podcorn
৩. স্পন্সরশীপ
আপনার পডকাস্টের শ্রোতা যখন অনেক বেশী হবে, তখন আপনি বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির নিকট থেকে স্পন্সরশীপ পাবেন। এই যেমন ধরুন, রেডিওতে আগে যেমন ভাবে বলা হতো, আপনার শুনছেন, ভূত এফ এম Brought to you bay Airtel এরকম টাইপের।
৪. পণ্য বা সার্ভিস সেল
পডকাস্টের মাধ্যমে আপনি আপনার পণ্য বা সার্ভিস সেল করতে পারবেন। এই যেমন ধরুন, আপনি টেকনোলজি রিলেটেড পডকাস্ট করেন। এক্ষেত্রে আপনার শ্রোতার কিন্তু টেকনোলজি লাভার। আপনি তাদের নিকট বিভিন্ন টেক গ্যাজেট সেল করতে পারবেন।
পডকাস্ট করার মাঝখানে বলতে পারেন, আজকে আমি পডকাস্ট করছি প্রিয় ক্যারিয়ার মাক্রোফোন। আপনার যারা এই মাইক্রোফোনটি কিনতে চাচ্ছেন তারা আমাদের লিংকে ক্লিক করে বা ফোন করে কিনে নিতে পারেন।
৫. সাবস্ক্রিপশন
স্পোটিফাই, অ্যামাজনের অডিওবল এই কৌশল অবলম্বন করে টাকা আয় করে থাকে। আপনি যদি তাদের অ্যাপে আপনার পডকাস্ট আপলোড করেন। সেক্ষেত্রে আপনি এমনিতেই পডকাস্ট করে আয় করতে পারবেন। আর যদি নিজস্ব সাইট বা অ্যাপ থাকে তাহলে, এই স্ট্রাটেজি অনুসরণ করতে পারেন।
৬. ডোনেশন
যখন আপনার উপরের কোন উপায় কাজে না আসবে, তখন আপনি ডোনেশন বা গিফট নিতে পারেন। এটাও পডকাস্ট থেকে আয় করার একটি মাধ্যম।
বাংলাদেশে পডকাস্টের সম্ভাবনা এবং বাজার
২০১৮ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে ২৫৬ মিলিয়ন ডলারের বিজ্ঞাপন বিক্রি করা হয়েছে এই পডকাস্টে। দিন দিন এর পরিমাণ বেড়েই চলছে। আমাদের দেশেও এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উজ্জ্বল। যেহেতু আমরা সবাই প্রচণ্ড ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি, সেহেতু টিভি দেখা বা রেডিও শুনার সময় হয়ে উঠে না আমাদের।
সেজন্য পডকাস্ট দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আমাদের কাছে। কেননা আপনি যদি টিভিতে অথবা কিছু দেখতে চান বা শুনতে চান তাহলে, আপনাকে নির্দিষ্ট সময়ের অপেক্ষা করতেই হবে। কিন্তু, পডকাস্টে আপনি আপনার পছন্দের প্রোগ্রামটি ডাউন-লোড করে রাখতে পারবেন এবং আপনি আপনার অবসর সময়ে সেটি শুনতে পারবেন।
বাংলাদেশে খুব তাড়াতাড়ি কয়েকটা রেডিও চ্যানেলে পডকাস্ট চালু হতে যাচ্ছে। আপাতত ১০০টার মতো কোম্পানি বাংলাদেশে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং এদের বিনিয়োগ প্রক্রিয়াও প্রায় চূড়ান্ত।
এক সময় টিভি ছাড়া ভিডিও দেখার কোন মাধ্যম ছিলো না। কিন্তু এখন সেই জায়গাটা দখল করে নিয়েছে ইউটিউব সহ অন্যান্য মাধ্যম। ঠিক তেমনি আশা করা হয় যে একদিন এই রেডিও এর জায়গাটাও দখল করে নিবে, এই পডকাস্ট। এক সময় বিজ্ঞাপন দাতারা টিভির মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকতেন। এর পর এলো রেডিও ইউটিউবসহ নানা রকম মাধ্যম।
আগামী কিছুদিনের মধ্যে সেই জায়গাটা দখল করে নিবে পডকাস্ট। বিজ্ঞাপন দাতারা পণ্য নিয়ে বসে রয়েছে পডকাস্টে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য। কেননা আপনি অনলাইনে থাকুন আর না থাকুন আপনার বিজ্ঞাপন ঠিকই শোনা যাবে পডকাস্টে। আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে পডকাস্ট হতে যাচ্ছে বিলিয়ন ডলারের মার্কেট-প্লেস।