ভালো একটি জীবন-বৃত্তান্ত (CV) আপনাকে ইন্টারভিউ বোর্ড পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে, আর ইন্টারভিউ বোর্ডেই নির্ধারিত হবে আপনি চাকরিটি পাবেন কি-না। চাকরির জন্য নিজের যোগ্যতা প্রমাণের অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ন স্থান হচ্ছে ইন্টারভিউ বোর্ড। ইন্টারভিউ বোর্ডে যাঁরা থাকেন তাঁরা সবসময় এমন সব প্রার্থী বেছে নিতে চান যারা অন্যদের চেয়ে একটু ভিন্ন। যাদের একটা বা দুটো এমন গুণ রয়েছে তা অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম। সুতরাং, আপনার দক্ষতা (Skills), যোগ্যতা (Competences) এবং অভিজ্ঞতাগুলো (Experiences) এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে আপনার সম্ভাব্য নিয়োগকর্তা ঐ পদের জন্য আপনাকেই সকলের চাইতে বেশি উপযুক্ত মনে করেন।
ফ্রেশার অর্থাৎ সদ্য পাশ করা একজন চাকরিপ্রার্থীদের অনেকেরই চাকরির ইন্টারভিউ-ভীতি আছে। যোগ্যতা আছে কিন্তু ভয় পেয়ে বা দ্বিধা গ্রস্ত হয়ে নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেন না। এথেকে উত্তরণের জন্যে ইন্টারভিউ কল পাওয়ার সাথে সাথেই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। আর এই ইন্টারভিউ-এর প্রস্তুতি এবং ইন্টারভিউ দক্ষতা বাড়াতে কিছু কৌশল নিয়েই সাজানো হয়েছে লেখাটি-
ইন্টারভিউ কল
আপনি যে অবস্থায় যেখানেই থাকুন না কেন, আপনার কাছে যখন ইন্টারভিউ এর জন্যে কল আসবে তখন ঘাবড়ে যাবেন না বা উত্তেজিত হবেন না। তাকে ধন্যবাদ দিয়ে ইন্টারভিউ এর সময়, ঠিকানা, ইত্যাদি বিস্তারিত জেনে নিন। যদি আপনি বাইরে থাকেন আর ঠিকানা লিখতে সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে ক্ষুদে বার্তায় বিস্তারিত পাঠানোর অনুরোধ করতে পারেন। ফোন রাখার আগে উনাকে নিশ্চিত করুন আপনি অংশ গ্রহন করছেন। তারপর শুরু করুন প্রস্তুতি। আপনার জন্যে কি কি জানা প্রয়োজন, কি কি কাগজপত্র গোছাতে হবে, ইন্টারভিউয়ের দিন সকালে কি পরিধান করে ইন্টারভিউ দিতে যাবেন সে সব বিষয়গুলো নিয়ে প্রথমেই একটি তালিকা তৈরী করে ফেলুন ।
কোম্পানি সম্পর্কে জানুন
যে প্রতিষ্ঠানে আপনি ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন, সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিন। আপনি যে পদের জন্য আবেদন করেছেন সেই পদের কাজগুলো কি তা আগে থেকেই জেনে নিন। তাতে প্রস্তুতি নিতে সহজ হবে এবং আত্মবিশ্বাস আরো দৃঢ় হবে। সাধারণত ইন্টারভিউয়াররা আপনাকে যাচাই করে দেখতে চায় আপনি ওই কাজগুলো করতে পারবেন কিনা বা সেগুলো সম্পর্কে আপনার স্বচ্ছ ধারনা আছে কিনা। এক্ষেত্রে ঐ ধরনের পদে চাকরি করে এরকম কোন ব্যক্তির সাথে কথা বলে ধারণা নিতে পারেন।
প্রাথমিক পরিচর্যা (Basic Grooming)
প্রাথমিক পরিচর্যা বলতে ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে স্মার্টলি উপস্থাপন করার জন্য নিজেকে তৈরী করা। এর জন্য পরিধেয় পোশাক থেকে শুরু করে চুলের কাট সবকিছুতে একটি পেশাদরিত্বের ছাপ আনতে হবে। চুল ভাল করে আঁচড়ে নিন। সম্ভব হলে চুল ছোট রাখুন। অবশ্যই শেইভ করবেন। মেয়েরা চুল ভাল করে বেঁধে নিন। ছেলেরা স্যুট-টাই পরে যেতে পারেন। জিনসের প্যান্ট পরবেন না। ব্যাগের বদলে ব্যাকপ্যাক নেবেন না। সাথে কয়েক কপি সিভি রাখুন। মেয়েরা শাড়ি অথবা সালোয়ার কামিজ পরতে পারেন। সেক্ষেত্রে, অশোভন পোশাক, অপ্রয়োজনীয় অলংকার, ভারি সাজসজ্জা পরিহার করুন। অবশ্যই সঙ্গে কলম নেবেন।
সময়ানুবর্তিতা
আপনার ইন্টারভিউ যদি সকালে থাকে তাহলে আগের রাতে সকল কাগজপত্র এবং পোষাক পরিচ্ছদ গুছিয়ে রাখুন। যানযটের বাস্তবতা মেনে নিয়ে আপনার ইন্টারভিউ শুরুর পাঁচ মিনিট আগে ঘর্মাক্ত অবস্থায় উপস্থিত না হয়ে তিরিশ মিনিট আগেই পৌঁছাতে চেষ্টা করুন। হাতে সময় থাকলে সেখানে পৌঁছানোর পর একটু ফ্রেশ হয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিন।
আপনার সম্পর্কে বলুন
চাকরির ইন্টারভিউ বোর্ডে কয়েকটি সাধারণ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি করা হয়- আপনার সম্পর্কে বলুন। যেহেতু এই প্রশ্নটি সম্পর্কে আপনি অবগত তাই কমপক্ষে দুই মিনিট নিজেকে উপস্থাপন করা যায় আগে থেকেই এমন একটি উত্তর তৈরী রাখুন। কারণ এই উত্তরটি নিজেকে মার্কেটিংয়ের একটি ভালো সুযোগ। মূলত এর মাধ্যমে চাকরিদাতা আপনার সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করেন । আপনার পড়াশোনা, দক্ষতা, যোগ্যতা, চাকরি সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতা ইত্যাদি। আর যদি ফ্রেশার অর্থাৎ সদ্য পাশ করা একজন চাকরিপ্রার্থী হোন তাহলে এক্সট্রা-কারিকুলার বা কো-কারিকুলার কার্যক্রম থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা, নেতৃত্বদানের যোগ্যতা, ট্রেনিং সমূহ উল্লেখ করুন। মোটকথা, নিজের সম্পর্কে একটি পজিটিভ ইম্প্রেশন তৈরী করতে হবে।
জব ডেসক্রিপশনের সাথে যোগ্যতাগুলোর একটি সেতুবন্ধন তৈরী করুন
চাকরির জন্য যখন আবেদন করেছিলেন তখন সিভির সাথে একটি কাভার লেটার (Cover Letter) জমা দিয়েছিলেন। চাকরির বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত জব ডেসক্রিপশন হিসেবে অত্যাবশ্যকীয় যে যোগ্যতা (Competencies) বা দক্ষতা (Skills) চাওয়া হয়েছিল আপনার কাভার লেটার-এ তার স্পষ্ট প্রতিফলন ছিল। সেখানে, আপনার মৌলিক যোগ্যতা (Core competencies), যোগাযোগ স্থাপনে দক্ষতা (Communication skills), নেতৃত্ব দানের দক্ষতা (Leadership skills), দল-ব্যবস্থাপনার দক্ষতা (Team management skills), এবং অভিজ্ঞতাসমূহের উল্লেখ ছিল। যেটি আপনাকে অন্যান্য প্রার্থীদের থেকে আলাদা করে ইন্টারভিউ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।
এখন এই যোগ্যতা এবং দক্ষতাগুলোকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে আপনি অন্যদের থেকে সেরা এটি প্রমাণ হয়। আপনাকে বোঝাতে হবে, এই পদের জন্যে যে দক্ষতা, যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতার দরকার তার সবই আপনার আছে। পাশাপাশি আপনাকে এটিও প্রমাণ করতে হবে কিভাবে এই যোগ্যতা বা দক্ষতাগুলো আপনি অর্জন করলেন। আপনি আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি এক্সট্রা-কারিকুলার বা বিভিন্ন ক্লাব এ্ক্টিভিটিজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ইভেন্ট অর্গানাইজ করার সাথে আপনার সম্পৃক্ততা ছিল। যার মধ্য দিয়ে আপনি নানামুখী দক্ষতা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন।
যাঁরা ডিবেট ক্লাবের সাথে যুক্ত, ভালো বিতার্কিক তার মানে তাঁরা ভালো উপস্থাপন করতে পারেন, তাদের নেগোসিয়েশন স্কিলস ভালো, তারা খুব ভালো যুক্তি উপস্থান করতে পারেন। কোম্পানিগুলো ধরেই নেয় বিতার্কিকরা তাঁদের কোম্পানিকে অ্ন্যদের কাছে স্মার্টলি উপস্থাপন করতে পারবে। আপনি খেলাধুলায় ভালো। তার মানে আপনি টিমে কাজ করতে জানেন, কিভাবে কাজ ভাগ করে নিতে হয় জানেন, কিভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয় জানেন, আপনি পরিশ্রমী, আপনার শারীরিক শক্তি আছে। এই গুণগুলো সকল চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানই আশা করে। আপনি বিজনেস ক্লাবের হয়ে কেইস কম্পিটিশন, বিজনেজ আইডিয়া কম্পিটিশন, লিডারশীপের উপর বিভিন্ন ওয়ার্কশপ আয়োজন করেছেন। বেশকিছু ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে আপনি আপনার বিজনেস আইডিয়ার কারনে পুরস্কারও পেয়েছেন। এখন যদি আপনাকে ২টি বিজনেজ আইডিয়ার কথা জিজ্ঞাসা করা হয় আপনি মুহুর্তে এরকম ১০টি আইডিয়ার সোয়াট (SWOT) এনালিসিস সহ দিয়ে দিতে পারবেন। কারন ক্লাবে এটি ছিল আপনার অন্যতম কাজ।
https://bangla-bnb.saturnwp.link/%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%b2%e0%a6%95%e0%a6%9a%e0%a7%87%e0%a6%87%e0%a6%a8-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%af%e0%a7%81%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%aa%e0%a7%8d/
এভাবে আপনি নিজেকে তৈরী করেছেন। কাজ করতে করতেই আপানার মাঝে যোগ্যতা এবং দক্ষতাগুলো অর্জিত হয়েছে। এখন নিজেকে ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে ভালোভাবে উপস্থাপন করার জন্য প্রস্তুত করুন। তাহলে আপনার আত্মবিশ্বাস অনেক গুন বেড়ে যাবে।