প্রতিবছরই নতুন মডেলের স্মার্টফোন বাজারজাত করেছে শীর্ষ প্রযুক্তি পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তার মানে এই নয় যে নির্মাতাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতি বছর স্মার্টফোন পাল্টাতে হবে ব্যবহারকারীকে। একটু যত্নের সঙ্গে ব্যবহার করেই দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য ডিভাইসটির আয়ু বাড়ানো যেতে পারে।
পুরনো ডিভাইসের কার্যক্ষমতা ধরে রেখে আয়ু বাড়ানোর সহজ কয়েকটি কৌশল বাতলে দিয়েছে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট সিনেট। নিজের ডিভাইসটি পরিষ্কার করে রাখা বা ভালো কভার ব্যবহারের মত সহজ কাজগুলো দিয়েই এর আয়ু বাড়ানো যেতে পারে।
এড়ানো যাবে না সফটওয়্যার আপডেট : ফোনের গতি ধরে রাখার এবং সফটওয়্যার জটিলতা এড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেম এবং অন্যান্য অ্যাপ নিয়মিত আপডেট রাখা।
এই আপডেটগুলোর পেছনে যেমন বেশি সময় খরচ হয় না, তেমনি সফটওয়্যার বাগ ও নিরাপত্তা ত্রুটির মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো এড়ানো যায় সহজে। পাশাপাশি ডিভাইসে যোগ হয় নতুন ফিচার, ডিভাইসের পারফর্মেন্সও বজায় থাকে।
স্বয়ংক্রিয় অ্যাপ আপডেট মেলে অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস উভয় প্ল্যাটফর্মে। উভয় প্ল্যাটফর্মেই সাধারণত এটি ডিফল্ট ফিচার হিসাবে চালু থাকে। তারপরও নিশ্চিত হতে চাইলে অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্মের ক্ষেত্রে প্রথমে যেতে হবে ‘সেটিংস’-এ। ‘অটো-আপডেট’ ফিচার বন্ধ থাকলে চালু করে নিতে হবে ‘সেটিংস’ থেকেই।
আইফোনের বেলাতেও পদক্ষেপগুলো প্রায় একই। প্রথমে যেতে হবে ফোনের ‘সেটিংস’-এ, তারপর অ্যাপ স্টোরে। ‘অ্যাপ আপডেট’ অপশনটি ‘অন’ না থাকলে চালু করে নিতে হবে সেটি।
আর সিস্টেম আপডেটের বেলায় অ্যান্ড্রয়েডের নিয়মিত নোটিফিকেশনের জন্য অপেক্ষা করতে পারেন ব্যবহারকারী। কোনো কারণে নোটিফিকেশন চোখ এড়িয়ে গেলে ফোনের ‘সেটিংস’ অ্যাপে খুঁজে নিতে হবে ‘সফটওয়্যার আপডেট’ অপশনটি। এই অপশনটি ব্যবহার করে আপডেট করে নিতে হবে ফোনের অপারেটিং সিস্টেম।
আইওএস প্ল্যাটফর্মেও সিস্টেম আপডেট করা যায় দুই ভাবে। ‘অটোমেটিক আপডেট’ চালু করে রাখতে পারেন ব্যবহারকারী। এক্ষেত্রে অ্যাপল সফটওয়্যার আপডেট উন্মুক্ত করার দু-এক দিন পর আইফোন সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাউনলোড করে রাখবে এবং ফোন ব্যবহৃত হচ্ছে না এমন সময়ে আপডেট ইনস্টল করবে।
অথবা আইফোনের ‘সেটিংস’ অ্যাপ থেকে ‘জেনারেল’ অপশনে গিয়ে ‘সফটওয়্যার আপডেট’-এ ট্যাপ করতে হবে। ইনস্টল করা হয়নি এমন কোনো সিস্টেম অ্যাপডেট থাকলে ধাপে ধাপে ইনস্টল করার প্রক্রিয়া বাতলে দেবে ফোন।
খেয়াল রাখতে হবে যে, স্মার্টফোন একটি আধুনিক ডিভাইস হলেও এর স্টোরেজ ও মেমোরির সীমা আছে। অব্যবহৃত অ্যাপগুলো নিয়মিত মুছে দিলে ফোনের স্টোরেজ বাঁচবে। আর ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকে এমন অ্যাপ কমে এলে গতি বাড়বে ফোনের, দীর্ঘায়ু হবে ফোনের ব্যাটারি।
আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড উভয় প্ল্যাটফর্মেই অব্যবহৃত অ্যাপ মুছে দেওয়া একেবারেই সহজ কাজ। উভয় প্ল্যাটফর্মেই অ্যাপের আইকনে ট্যাপ করে ধরে রাখলেই ড্রপ ডাউন বা পপ-আপ হিসেবে স্ক্রিনে চলে আসবে ‘রিমুভ অ্যাপ’ বা ‘আনইনস্টল’ অপশনটি।
ভালো কেইস ব্যবহার করুন : স্মার্টফোনের সঙ্গে আলাদা কেইস ব্যবহারের পক্ষে নন ব্যবহারকারীদের একটি অংশ। তবে, হাত থেকে পড়ে ফোনের ক্ষতি হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে হরহামেশাই। তাই গাঁটের পয়সা খরচ করে কেনা ডিভাইসটির জন্য ভালো মানের একটি কেইস ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
এক্ষেত্রে বিলাসবহুল দামের কেইস ব্যবহার করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ডিভাইসটিকে আঘাত বা আকস্মিক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে পারবে এমন মানসম্মত কেইস ব্যবহার করলেই চলবে।
স্ক্রিন ও পোর্ট পরিষ্কার রাখুন : কেইস ব্যবহার করলেও দৈনন্দিন ব্যবহারে ধুলা-বালি জমে স্মার্টফোনের স্ক্রিন ও পোর্টে। বিশেষ করে চার্জিং পোর্ট, মাইক্রোফোন, স্পিকার গ্রিল আর হেডফোন জ্যাকের মতো জায়গাগুলোতে ধুলা জমে সবচেয়ে বেশি। ডিভাইসের এই জায়গাগুলো পরিষ্কার করতে টুথপিক ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
স্ক্রিন পরিষ্কারের সেরা উপাকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় মাইক্রোফাইবার কাপড়। এ ছাড়াও, ব্যবহার করা যেতে পারে অ্যালকোহল ওয়াইপ। তবে, এক্ষেত্রেও খেয়াল রাখতে হবে যে স্ক্রিন পরিষ্কারে ব্যবহৃত বস্তুটি যেন বেশি ভেজা না হয়।
গরম হয়ে গেলে ফোন ব্যবহার নয় : ফোনের ব্যাটারি বেশি হরম হয়ে যায় এমন পরিস্থিতি এড়াতে পারলে আয়ু বাড়বে ডিভাইসের। প্রচণ্ড গরমের কোনো দিনে স্মার্টফোন সরাসরি রোদে ফেলে রাখা যাবে না। কোনো কাজ করার সময় বা গেইম খেলার সময় ডিভাইস বেশি গরম গেলে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে ওই পরিস্থিতিগুলো।
ডিভাইস বেশি গরম হলে ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এতে বিরূপ প্রভাব পড়ে ব্যাটারির ওপর। ব্যাটারির স্বাস্থ্য মাথায় রেখে ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে দিন শেষে দীর্ঘায়ু হবে ডিভাইস, উপকৃত হবেন ব্যবহারকারী নিজেই।