ইসলাম মানুষ বিবাহিত জীবনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। বিয়ের উপযোগী নারী ও পুরুষকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে উত্সাহিত করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) সামর্থ্য অর্জনের পর বিয়েতে বিলম্ব করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিয়ের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়েহ করে। কেননা বিয়ে দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ করে। আর যে ব্যক্তি বিয়ের সামর্থ্য রাখে না সে যেন রোজা রাখে। কেননা রোজা কামভাব দমনকারী।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২২৪০)
বিবাহিত নারী-পুরুষ সঙ্গীহারা হলে তারাও বিয়েতে বিলম্ব করবে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা আইয়িম (বিপত্নিক বা বিধবা) তাদের বিয়ে সম্পাদন কোরো এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সত্ তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন; আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩২)
বিয়েতে বিবেচ্য বিষয়
ইসলাম বিয়ে করার সময় প্রধানত চারটি বিষয় বিবেচনা করতে বলেছে। এই চারটি বিষয়ে পাত্র ও পাত্রীর মধ্যে সমতা থাকলে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে। তা হলো—সম্পদ, বংশ মর্যাদা, সৌন্দর্য ও ধার্মিকতা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নারীদের চার কারণে বিয়ে করা হয়, তার মাল সম্পদের জন্য, তার বংশ মর্যাদার জন্য, তার সৌন্দর্যের জন্য এবং তার ধার্মিকতার জন্য। তুমি দ্বিনদারিকে প্রাধান্য দাও। তোমার দুই হাত মাটিমাখা হোক।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩২৩০)
উল্লিখিত বিষয়গুলোতে সমতা রক্ষা করাকে শরিয়তের পরিভাষায় কুফু বলা হয়।
বিয়ের প্রস্তাব কখন প্রত্যাখ্যান করা যায়
ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে যেসব কারণে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা যায় তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো।
১. কুফু না মিললে : যদি পাত্র ও পাত্রীর মধ্যে উল্লিখিত চার বিষয়ে সমতা না থাকে তবে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা যায়। বিশেষ করে যেখানে দ্বিনদারি থাকে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নারীদের চার কারণে বিয়ে করা হয়, তার মাল সম্পদের জন্য, তার বংশ মর্যাদার জন্য, তার সৌন্দর্যের জন্য এবং তার ধার্মিকতার জন্য। তুমি দ্বিনদারিকে প্রাধান্য দাও। তোমার দুই হাত মাটিমাখা হোক।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩২৩০)
২. বয়সের পার্থক্য বেশি হলে : শরিয়তের দৃষ্টিতে যে কোনো বয়সের নারী ও পুরুষ পরস্পরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। তবে পাত্র ও পাত্রীর বয়সের পার্থক্য খুব বেশি হলে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা যায়। হাদিসে এসেছে, আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.) ফাতেমা (রা.)-এর বিয়ের প্রস্তাব পেশ করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সে তো অল্প বয়স্কা। এরপর আলী (রা.) প্রস্তাব দিলে তিনি তাঁর সঙ্গে বিয়ে দিলেন। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩২২১)
হাদিস গবেষকরা বলেন, আলী ও ফাতেমা (রা.)-এর বয়সের পার্থক্য ছিল পাঁচ বছর।
৩. পাত্র নিঃস্ব হলে : পাত্র আর্থিকভাবে নিঃস্ব হলে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা যায়। দীর্ঘ হাদিসে এসেছে, ফাতেমা বিনতে কায়েস (রা.) তালাকপ্রাপ্তা হন। অতঃপর তিনি ইদ্দত শেষ করলে মুয়াবিয়া ও আবু জাহম (রা.) তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। বিষয়টি নবী (সা.)-কে জানালে তিনি বলেন, ‘আবু জাহম এমন ব্যক্তি যার কাঁধ থেকে লাঠি নামে না। আর মুয়াবিয়া তো কপর্দকহীন গরীব মানুষ। তুমি উসামা ইবনু যায়েদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হও।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৫৮৯)
৪. পাত্র মেজাজি হলে : পাত্র যদি অতিরিক্ত মেজাজি হয় তবে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা যায়। যেমনটি উল্লিখিত হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে।
৫. চরিত্রবান না হলে : পাত্র ও পাত্রী যদি সুচরিত্রের অধিকারী না হয়, তবে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যে ব্যক্তির দ্বিনদারি ও নৈতিক চরিত্রে সন্তুষ্ট তোমাদের কাছে সে ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব করলে তার সাথে (তোমাদের কন্যা ও বোনদের) বিয়ে দাও। তা যদি না করো তাহলে পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১০৮৪)
প্রত্যাখ্যান প্রবণতা ভালো নয়
কারো ভেতর যদি অহেতুক বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের প্রবণতা থাকে, তবে তা পরিহারযোগ্য। যেমনটি নবীজি (সা.) উল্লিখিত হাদিসে সতর্ক করে বলেছেন, ‘তাহলে পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।’ (প্রাগুক্ত)
আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।