কানে ব্যথা শুধু যে আঘাতের ফলেই হতে পারে তা কিন্তু নয়! আবার জীবাণুর প্রভাবে নয় বরং পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণেই আচমকা কানের পর্দা ফাটতে পারে। যেমন-
* কানের কোনো অসুখ যেমন- কানের মধ্যে ক্রনিক সাপোরেটিভ অটাইটিস মিডিয়া হলে। * কোনো কিছু দিয়ে কান খোঁচালে। যেমন- কটন বাড। * কানে কিছু প্রবেশ করলে এবং অদক্ষ হাতে তা বের করার চেষ্টা করলে। * দুর্ঘটনা বা আঘাতে কান ক্ষতিগ্রস্ত হলে। * হঠাৎ কানে বাতাসের চাপ বেড়ে গেলে। যেমন- থাপ্পড় মারা, বোমা বিস্ফোরণ, অতি উচ্চ শব্দের শব্দ ইত্যাদি কারণে।
* পানিতে ডাইভিং বা সাঁতার কাটার সময় হঠাৎ পানির বাড়তি চাপের কারণে পর্দায় চাপ পড়লে। * কানের অন্য অপারেশনের সময়ও কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হলে। * যাদের কানের পর্দা আগে থেকেই দু’র্বল বা ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের ক্ষেত্রে নাক চেপে কানে বাতাস দিয়ে চাপ দিলেও পর্দা ফাটতে পারে। * সাধারণত একজন চিকিৎসকের কাছে পরীক্ষা না করানো পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে বলা যায় না ওপরের কোনো কারণে কানের পর্দা আসলেই ফেটেছে কি না।
কানের পর্দা ফাটলে নিচের উপসর্গগুলো দেখা দেয়-* কানে তীব্র ব্যথা। * কান থেকে পরিষ্কার বা র’ক্ত মিশ্রিত পানি বের হওয়া। * কানে কম শোনা। * কানে শোঁ শোঁ বা মেশিন চলার মতো শব্দ। * মাথা ঘোরানো। কানের পর্দা ছিদ্র হলে করণীয়
* চিকিৎসার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে আক্রান্ত কানে পানি ঢোকানো যাবে না। * কান পরিষ্কার করার চেষ্টা না করাই ভালো। * কানে জমাট র’ক্ত থাকলে সেগুলোও নাড়াচাড়া না করা উচিত। * প্রাথমিকভাবে কানে কোনো ধরনের ড্রপ দেয়া যাবে না। এ ধরনের সমস্যার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। নিজ থেকে কিছু করতে যাবেন না। তাতে আরো বেশি ক্ষতি হতে পারে।
বীজে এত পুষ্টিগুণ? ডায়েটে রাখুন : শরীর সুস্থ রাখতে শারীরিক কসরতের পাশাপাশি সঠিক খাওয়াদাওয়াটাও ভীষণ জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিমে সময় কাটানোর পাশাপাশি প্রতিদিনের ডায়েটে পুষ্টিগুণ বাড়াতে খেতে হবে নানা প্রকার বীজ। শুধু খাবারের স্বাদ বাড়াতেই নয়, এই সব বীজ শরীরের জন্যেও দারুণ উপকারী।
উপকারী বীজের মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাক্স বা তিসি, শিয়া, পাম্মকিন বা কুমড়োর বীজ, সানফ্লাওয়ার বীজ, এডিবল—বীজ। অফিসে খিদে পেলে স্ন্যাক্স হিসেবে খেতেই পারেন এসব বীজ। এদের বেশিরভাগই অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট, প্রোটিন, ফাইবার, কপার, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম ও ক্যালশিয়ামে ভরপুর। যা, লিভার সুরক্ষা, বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণসহ মেদ, র’ক্তে শর্করার পরিমাণ, হৃদরোগের আশঙ্কা ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে এবং ক্যানসার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও হাড় ও দাঁত সুস্থ রাখতেও কার্যকরী এসব বীজ।
কিছু বীজ ও তার উপকারীতা জেনে নেয়া যাক : ফ্ল্যাক্স সিড বা তিসির বীজ: এক সময় খাবার রান্নায় ব্যবহার হত তিসির তেলে। তিসি বা ফ্ল্যাক্স সিড ভাল মানের ফ্যাট, অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট, প্রোটিন ও ফাইবারে ভরপুর। এটি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। হার্টকে সুস্থ রাখে। এছাড়াও র’ক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে তিসি। ফ্ল্যাক্স সিড খেতে গেলে বীজ শুকনো খোলায় ভেজে নেওয়া জরুরি। আটা-ময়দা মাখার সময়ে ফ্ল্যাক্স গুঁড়ো অল্প পরিমাণে মিশিয়ে রুটি তৈরি করতে পারেন। আবার সকালে খালি পেটে এক চা চামচ তিসির গুঁড়ো এমনিও খেয়ে নিতে পারেন।
শিয়া সিড: র’ক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে বিশেষ কার্যকর এই বীজ। কোনও ক্রনিক ইনফ্ল্যামেশন থাকলে, সেটিও কমাতে সাহায্য করে। বিপাক ক্রিয়াও নিয়ন্ত্রণ করে শিয়া সিড। শরীরের মেদ কমাতেও এই বীজ বেশ উপকরী। শিয়া সিড ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টি অক্সিড্যান্টেও ফাইবার, প্রোটিন, ক্যালশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ়, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাসে ভরপুর। শিয়া সিডও হৃদরোগের আশঙ্কা কমায়। পাশাপাশি হাড়ও ভালো রাখে। সারা রাত খানিকটা জলে এক টেবিল চামচ এই বীজ নিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। ওটস কিংবা স্মুদিতে ভিজিয়েও খেতে পারেন। সুস্বাদু করতে পুডিং, মাফিনেও দিতে পারেন এই বীজ।
তিল: সাদা তিলে থাকে ক্যালশিয়াম অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট জাতীয় উপাদান। লিভারকে যে কোনো রকম ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম তিল। হজম বাড়াতে, দাঁত ও হাড়ের দেখভাল করতেও তিলের জুড়ি মেলা ভার। তিলের বীজ রোস্ট করে স্যালাডের সঙ্গে খেতে পারেন। বাড়িতে চাইনিজ পদ বানালেও উপর থেকে ছড়িয়ে দিতে পারেন রোস্টেড তিল। এ ছাড়াও তিলের তেল একই রকম ভাবে স্বাস্থ্যরক্ষায় সহায়ক। স্যালাডের ড্রেসিংয়েও তিল তেল ব্যববার করা হয়।
পাম্পকিন বা কুমড়োর বীজ: বিশেষ কিছু ধরনের ক্যানসারেরও আশঙ্কা কমায় এই বীজ। কুমড়োর বীজে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে, আয়রন, জিঙ্ক, কপার ইত্যাদি। নিয়মিত কুমড়োর বীজ খেলে প্রস্টেট গ্ল্যান্ড ভালো থাকে। আবার অনিদ্রার হাত থেকেও মুক্তি দেয় কুমড়ো বীজ। শরবতের উপরে ছড়িয়ে খেতে পারেন কুমড়ো বীজ। আবার এক বাটি ফল কেটে তার মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে পারেন রোস্টেড পাম্পকিন সিড। ওটস কিংবা কর্নফ্লেক্সর সঙ্গেও ভালো লাগে এই বীজ।
সূর্যমুখীর বীজ: কিছু ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে এই বীজ। এ ছাড়াও হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে, র’ক্তে চিনির পরিমাণ কমিয়ে সমতা আনতে সাহায্য করে। ভালো মানের প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন বি ওয়ান এবং ই, ম্যাগনেশিয়াম, কপার থাকে সূর্যমুখীর বীজে। শুকনো খোলায় ভেজে এই জাতীয় বীজ স্ন্যাক্স হিসেবে খাওয়া যায়। আবার চাইলে স্যালাদ করেও খাওয়া যায়। অল্প পরিমাণে এই বীজ খেলে সহজেই পেট ভরা থাকে।
মৌরি: এতে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, কপার, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল। নিউরোলজিক্যাল ডিজিজ বা স্নায়ুরোগ সারাতে, সংক্রমণ কমাতে সহায়ক মৌরি। ভালো মানের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকায় মৌরির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। পেটও ঠান্ডা রাখে মৌরি। সারা রাত মৌরি ভিজিয়ে রেখে পরদিন তা ছেকে খেতে পারেন। মৌরি ভেজানো পানি শরীর সুস্থ রাখে। তবে ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার ধাত থাকলে রোজ মৌরি ভেজানো পানি পান করা ঠিক নয়।
সব ধরনের বীজ আলাদা করে না খেয়ে একসঙ্গে সম পরিমাণ মিশিয়ে জারে রেখে দিতে পারেন। ওটসের সঙ্গে ফল আর এই সব বীজ মিশ্রণ যোগ করে ভোরবেলা খেতে পারেন এক স্বাস্থ্যকর খাবার। এতে পেটেও ভরবে, আর শরীরও পাবে সমস্ত পুষ্টিগুণ। তবে রোজকার ডায়েটে এই সব বীজ যুক্ত করার আগে ডায়াটেশিয়ানের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।