KTM ব্র্যান্ডের বাইক নিয়ে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে বেশ ফ্যাসিনেশন থাকলেও অস্ট্রিয়ান এই ব্র্যান্ডটি আমাদের দেশের বাজারে ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারেনি।
যদি বাইকের লুকস, ফিল, কোয়ালিটি এবং পারফরমেন্স বিচার করেন তাহলে KTM 125 বাইকগুলো একদম টপ লিস্টে থাকবে এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই। বাইকের টায়ার থেকে শুরু করে, সাসপেনশন, ব্রেকিং ইকুইপমেন্টস, বডিপার্টস, কন্সোল, ইঞ্জিন পার্টসের কোয়ালিটি অনেক অনেক ভালো এবং ডিউরেবল। নিম্মমানের কোনো পার্টস KTM এর বাইকগুলোতে নাই। মজার ব্যাপার হলো KTM বাইকের ২০০, ২৫০ এবং ৩৯০ সিসি ভার্সনে যেই ফ্রেম/শ্যাসি ও ফিচার পাবেন, ১২৫ সিসিতেও প্রায় একই ফিচার পাবেন। শুধু ইঞ্জিন ডিসপ্লেসমেন্টে পার্থক্য থাকবে।
প্রিমিয়াম ১২৫ সিসি হিসেবে বাইকের পারফরমেন্সও একদম ঠিকঠাক। অর্থাৎ যেমন হওয়া উচিত ঠিক তেমন। কিছুক্ষেত্রে অন্যান্য প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডগুলোর ১৫০ সিসির বাইকের ঘাম ছুটিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
অনেকেই হয়তো বলতে পারেন বিগত বছরগুলোতে সিসি লিমিটের কারণে KTM-এর উচ্চ সিসির বাইকগুলো আমাদের দেশে প্রবেশ করতে পারেনি। স্রেফ ১২৫ সিসির বাইক বাজারে থাকায় তা ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষনে ব্যর্থ হয়েছে। তবে এর বাইরে মোটামুটি তিনটি বড় কারণ আমার চোখে ধরা পড়েছে।
প্রথমত, KTM125 বাইকের দাম অনেক বেশি। আমাদের দেশে ১২৫ সিসি সেগমেন্টের বাইক কেনার যেসব গ্রাহক রয়েছেন, তাদের সামর্থ্যের বাইরে মূল্য হাকানো হয়েছে KTM125-এর।
সাধারণত আমাদের দেশে যারা ১০০-১২৫ সিসি বাইক কেনে তাদের বাজেট থাকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা। তাদের ১২৫ সিসি বাইক কেনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে-
✅ ডেইলি কমিউটিং,
✅ লো মেইন্টেনেন্স,
✅ হাই মাইলেজ।
এই প্রয়োজন পূরণের জন্য দেড় লাখ টাকার মধ্যে ১২৫ সিসির অনেক বাইক বাজারে রয়েছে। অথচ দেশের বাজারে KTM125 এর দাম চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা। এই দাম কিংবা এর চেয়ে কম দামে বাজারে Honda, Yamaha, Suzuki এর মত সুপরিচিত ব্র্যান্ডের ১৫০সিসি স্পোর্টস বা ন্যাকেড স্পোর্টস বাইক পাওয়া যায়। এগুলোর স্পেয়ার/সার্ভিস এভেইলেবল এবং এফোর্ডেবল তাই সেইফ সাইডে থাকতেই মানুষ KTM125 ট্রাই করতে চায় না।
দ্বিতীয়ত, সারাদেশে KTM এর বাইকের জন্য মাত্র তিনটি সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। প্রযুক্তিগতভাবে অনেক উন্নত হওয়ায়, যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছাড়া অন্যদের পক্ষে এই বাইকের সার্ভিস করা মুশকিল। এর পাশাপাশি স্পেয়ার পার্টসের অভাবের কথাও জানিয়েছেন কয়েক জন। খাড়ার ঘা হিসাবে রয়েছে স্পেয়ার পার্টসের অতিরিক্ত মূল্য। তাই, স্বাভাবিকভাবেই অনেকে শখ করতে KTM এর বাইক কিনতে চাইলেও উটকো যন্ত্রণার ভয়ে এর থেকে দূরে থাকেন তারা।
তৃতীয়ত কারণ ছোট হলেও এর গুরুত্ব কম নয়। আমাদের দেশে অফিসিয়ালি KTM এর বাইক প্রবেশ করেছে ২০২১ সালে। যারা বাইকটি বাজারে এনেছেন তারা সম্ভবত এর প্রচারণা নিয়ে খুব একটা আগ্রহী নন। এ কারণে অনেকে এই ব্র্যান্ডটির অস্তিত্ব সম্পর্কেই জানেন না।
ছেলে মেয়েরটা আর মেয়ে ছেলেরটা খায়? বলতে পারলে আপনি জিনিয়াস
তবে KTM125 বাইকের প্রতিটা ভার্সনেরই যে বিল্ড কোয়ালিটি চমৎকার, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায়ই নেই। ভবিষ্যতে দাম, সার্ভিস ও পার্টসের মতো সমস্যাগুলো দূর করতে পারলে বাংলাদেশে KTM শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবে বলে আশা করা যায়।