কথায় বলে, আম পাকে জাম পাকে, মামাবাড়ির পেলা পাকে। এই কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফলটি দুই হাতের তালুতে রেখে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নরম করে এরপর খেতে হয়। না হলে পাকা ফলও কষাটে ও শক্ত লাগে। না টিপলে ফল সুস্বাদু হয় না। এই জন্য অনেক এলাকায় পেলা গোটাকে টিপা ফল বলেও ডাকে।
দেশের অপ্রচলিত এবং প্রায় হারিয়ে যাওয়া এক বুনোফলের নাম পেলা গোটা বা টিপা ফল। এক সময় বাড়ির পাশে বুনো ঝোপঝাড়ে, অগভীর বনে পেলা গোটার গাছ দেখা যেতো। তীক্ষè কাঁটায় ভরা এ গাছের ফল খেতে ছেলেমেয়েরা গাছতলায় ছুটে যেতো। বাঁশের লম্বা শলা দিয়ে ফল পেড়ে খেত। বড়রা এই ফল খুব একটা খেতেন না। সেইসব গাছ এখন আর চোখে পড়ে না। নানা কারণে গ্রাম থেকে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়েছে এই ফলের গাছ। এ কারণে পেলা গোটা এখন অনেকের কাছেই এখন অচেনা। তবে বর্তমানে দেশের পার্বত্য ও উপক‚লীয় অঞ্চলসহ কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রাজশাহী ও নরসিংদীতে পেলাগোটার গাছ কিছুু দেখা যায়।
পার্বত্য অঞ্চলে ফলটির নাম পাইন্যাগোলা, সিলেটে এর নাম লুকলুকি, রাজশাহীতে পেলাগোটা, নরসিংদীতে টিপা ফল, বরিশালে এর নাম পায়না বা পানিয়ালা। অঞ্চলভেদে এই ফলের একাধিক নাম থাকলেও এর ইংরেজী নাম ওহফরধহ চষঁস বা ঈড়ভভবব চষঁস. বৈজ্ঞানিক নাম ঋষধপড়ঁৎঃরধ ঔধহমড়সধং. এটি নিচু ভ‚মি এবং পাহাড়ি এলাকার বৃষ্টিবহুল অঞ্চলের ‘উইলো’ পরিবারভুক্ত বৃক্ষ।
আমাদের দেশের কোথাও পেলাগোটার চাষ হয় না। শুধু পেলাগোটাই নয় আমাদের নিজস্ব ফলগুলো নিয়ে উন্নততর কোনো গবেষণা হয় না বললেই চলে। ফলে ভিনদেশী ফলের আধিক্যে আমাদের দেশি ফলগুলো বাজারমুখী হওয়ারই সুযোগ পায় না। অথচ বিদেশি অনেক ফল থেকে তুলনামূলকভাবে আমাদের ফলগুলো বেশি পুষ্টিকর।
পেলাগোটা ফলগাছ খুব বেশি বড় হয় না, মাঝারি আকারের বৃক্ষ। গাছের উচ্চতা ৬ থেকে ১০ মিটার। গাছ ছোট থাকতে গোড়ায় অনেক কাঁটা হয়। বড় হলে কাঁটা থাকে না। পাতা হালকা সবুজ, চকচকে, সরু ডিম্বাকার ও অগ্রভাগ সুচালো। ফুল ছোট, সাদাটে সবুজ ও সুগন্ধযুক্ত। ফল গোলাকার মারবেলের মতো। কাঁচা ফলের রঙ সবুজ। পাকার সঙ্গে সঙ্গে খোসার রঙ বদলে বাদামী হতে শুরু করে। শেষে পেকে কালচে বেগুনি হয়ে যায়। গাছে মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসে। ফল পাকে জুলাই-আগস্ট মাসে।
পাকা ফলের শাঁস নরম, সুস্বাদুযুক্ত, হালকা খয়েরি, বীজযুক্ত ও স্বাদে টক-মিষ্টি। পাকা ফল দিয়ে চাটনি রান্না করেও খাওয়া যায়। বীজ থেকে চারা হয়। পেলা ফল সাধারণত পাকা অবস্থায় সরাসরি চিবিয়েও খাওয়া যায়। তবে পাকা ফল দুই হাতের তালুর মধ্যে রেখে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নরম করে খেলে মিষ্টি ও স্বাদ বেড়ে যায়।