সালাত বা নামাজ হলো ঈমানের পরে ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল। এর মাধ্যমে বান্দার সঙ্গে তার রবের বিশেষ সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। তাই নামাজ অবস্থায় বান্দার শরীর, কাপড় ও স্থান পরিপূর্ণ পাক-পবিত্র থাকা অত্যাবশ্যক। পবিত্রতা নামাজ আদায়ের পূর্বশর্ত।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমার ঘর পাক-সাফ রাখো তাওয়াফকারী, রুকু-সিজদা ও দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারীদের জন্য।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ২৬)
নামাজের স্থান পবিত্র করার নির্দেশসংবলিত বহু প্রমাণ আছে। নিম্নে নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়ার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো :
জমি শুকালে বা তাতে বৃষ্টি পড়লেও পবিত্র হয়
জমি ও ছাদ ইত্যাদিতে নাপাকি পড়ার পরে তা রোদে বা বাতাসে শুকিয়ে নাপাকির চিহ্ন দূর হয়ে গেলে তা পাক হয়ে যাবে। আয়েশা (রা.), ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়া (রহ.), ইমাম মুহাম্মাদ (বাকের রহ.) প্রমুখ থেকে বর্ণিত, ‘জমিনের পবিত্রতা হলো তা শুকিয়ে যাওয়া।
’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৬২৪, ফাতহুল কদির ১/১৯৯)
তদ্রূপ নাপাক জমি কুপিয়ে নেওয়ায় নাপাকির চিহ্ন দূর হয়ে গেলেও জমি পাক বলে গণ্য হবে। হাদিস শরিফে এসেছে, জনৈক বেদুইন অজ্ঞতাবশত মসজিদে পেশাব করে দেওয়ায় রাসুলুল্লাহ (সা.) ওই জায়গা খনন করে নিতে বলেছেন। (দেখুন : মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৬৫৯)
অনুরূপ নাপাক জমিতে বৃষ্টি পড়ে নাপাকির চিহ্ন দূর হয়ে গেলেও পাক হয়ে যাবে। হ্যাঁ, সর্বাবস্থায়ই নাপাকির চিহ্ন অবশিষ্ট থাকলে জমি পাক হবে না।
(ফাতাওয়া কাজিখান ১/২৩, আদ্দুররুল মুখতার ১/৩১১)
প্রস্রাবে ভেজা নাপাক জুতা নিয়ে শুকনা জমির ওপর চলার কারণে যদি জমি ভিজে যায়, তাহলে জমি নাপাক হবে, অন্যথায় নাপাক হবে না। (রদ্দুল মুহতার ৬/৭৩৩)
পাকা মেঝে ভেজা কাপড় দিয়ে মুছলেই পবিত্র হয়ে যায়
পাকা বা টাইলস বিছানো মেঝেতে শিশুরা প্রস্রাব করলে জায়গাটি ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলার দ্বারা প্রস্রাবের চিহ্ন ও দুর্গন্ধ দূর হয়ে গেলে পাক হয়ে যাবে, তাতে নামাজ পড়াও বৈধ হবে। পানি ঢেলে ধোয়া আবশ্যক নয়। (আদ্দুররুল মুখতার ১/৩১১, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ৫/২৮৪)
নাপাক মেঝে শুকিয়ে পাক হওয়ার পর তাতে পানি পড়লে পুনরায় নাপাক হবে না, বরং পাক-ই গণ্য হবে। তদ্রূপ অজুর পরে ভিজা পায়ে তাতে হেঁটে গেলেও পা নাপাক হবে না।
(হালবি কাবির, পৃষ্ঠা ১৫৪, আলবাহরুর রায়েক : ১/৩৯৪)
গোবর দ্বারা লেপনকৃত স্থানে নামাজ পড়া
মাটি মিশ্রিত করে গোবর দ্বারা জমি লেপা হলে এমতাবস্থায় জমি শুকিয়ে গোবরের চিহ্ন ও দুর্গন্ধ দূর হয়ে গেলে তা পাক হয়ে যাবে বিধায় তাতে নামাজ পড়া যাবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/৬২, কাসেমিয়া ৫/৫৭৭)
নাপাক স্থানে বিছানা বিছিয়ে নামাজ পড়া
নাপাক স্থানে বিছানা বিছিয়ে নামাজ পড়া অবস্থায় বিছানা এমন মোটা হলে যাতে এপাশ-ওপাশ দেখা না যায় এবং নাপাকির প্রভাব বিছানায় প্রকাশ না পায়- তাতে নামাজ শুদ্ধ হবে। আর বেশি পাতলা হলে যার কারণে নাপাকি অনুভূত হয়, তাহলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। (রদ্দুল মুহতার ২/৭৪, কাসেমিয়া ৫/৫৭৮)
সেপটিক ট্যাংক, নাপাক নালা ইত্যাদির ছাদে নামাজ পড়া
সেপটিক ট্যাংক, নাপাক নালা ইত্যাদির ছাদের ওপর নামাজ শুদ্ধ হবে। কেননা ছাদ বা তার উপরিভাগ পাক, যদিও তার নিচে নাপাকির অবস্থান আছে। কোনো কোনো মসজিদের নিচতলায় বা এক পাশে টয়লেট ইত্যাদি থাকে, সেগুলোর ওপরতলায় নামাজের ব্যবস্থা থাকলে তাতে নামাজ পড়তেও কোনো অসুবিধা নেই। (রদ্দুল মুহতার ২/৭৪)
কোনো স্থানের পাক-নাপাক না জানলে করণীয়
কোনো স্থানের পাক-নাপাক জানা না থাকলে তাতে নাপাকির কোনো চিহ্ন স্পষ্ট না হলে জমিটি পবিত্র বলে গণ্য হবে। সন্দেহবশত কোনো জমিকে নাপাক বলা যাবে না। জাবের (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমার জন্য গোটা জমিনকে নামাজের স্থান এবং পবিত্রকারী হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাই আমার উম্মতের যেখানেই নামাজের সময় হবে সেখানেই নামাজ পড়ে নেবে। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৫)
তদ্রূপ নতুন-পুরনো বিছানা-পাটি ইত্যাদিতে নাপাকির চিহ্ন না থাকলেই তাতে নামাজ পড়া যাবে। অহেতুক সন্দেহের প্রয়োজন নেই। (আজিজুল ফাতাওয়া, পৃষ্ঠা ১৯৩)
রাস্তাঘাটের কাদামাটি ও পানির বিধান
কোনো স্থানকে শুধু সন্দেহবশত নাপাক বলা যাবে না। নাপাকির ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত পাক হিসেবেই বিবেচিত হবে। রাস্তাঘাটের আবর্জনাযুক্ত পানি ও কাদায় নাপাকির আলামত পরিলক্ষিত না হলে তা নাপাক বলে গণ্য হবে না এবং উক্ত পানির ছিটা শরীর বা কাপড়ে লাগলেও নাপাক হবে না। তবে নাপাকির চিহ্ন, রং বা দুর্গন্ধ অনুভূত হলে নাপাক বলা হবে। (রদ্দুল মুহতার ১/৩২৪)
মোটা কার্পেট নাপাক হলে পবিত্র করার পদ্ধতি
কার্পেটের কোনো অংশে নাপাক লাগলে শুধু ওই অংশই নাপাক হবে, পুরো কার্পেট নাপাক হবে না। তাই পাক করার জন্য ওই অংশে পানি ঢেলে এমনভাবে রেখে দেবে যাতে পানি সম্পূর্ণ ঝরে যায়। এভাবে তিনবার করলে কার্পেটটি পাক হয়ে যাবে। হ্যাঁ, যদি একবারও এমনভাবে পানি ঢালা হয়, যাতে ওই নাপাকি দূর হওয়ার বিষয়ে ধৌতকারীর প্রবল ধারণা হয়ে যায়, তাহলে একবার ভালোভাবে ধোয়ার দ্বারাও পবিত্র হবে। আর গাঢ় নাপাক যেমন পায়খানা ইত্যাদি লাগলে ওই নাপাকির চিহ্ন ও দুর্গন্ধ দূর করে ফেললেই পাক হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার ১/৩১০)
https://bangla-bnb.saturnwp.link/shisuk-shikhan/
যদি কার্পেটের বিভিন্ন স্থানে ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব পড়ে এবং শুকিয়ে যাওয়ার কারণে প্রস্রাব পড়ার স্থান চিহ্নিত করা অসম্ভব হয়, তখন অনুমান করে কার্পেটের সন্দেহযুক্ত অংশগুলো ধুয়ে ফেললে পুরো কার্পেট পাক হয়ে যাবে। তবে সম্ভব হলে পূর্ণ কার্পেটই ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নেওয়া উত্তম। (রদ্দুল মুহতার ১/৩২৮, আহসানুল ফাতাওয়া ২/৯২)
লেখক : শিক্ষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা