দেশের বিরাজমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আবারো নীতি সুদহার (রেপো রেট) ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ থেকে নীতি সুদহার হবে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। রেপো রেটের পাশাপাশি নীতি সুদহার করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) ও সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটিও (এসডিএফ) ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে গতকাল জারীকৃত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত মুদ্রানীতি কমিটির পঞ্চম সভায় মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সংকোচনমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওভারনাইট রেপো নীতি সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৯ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে সাড়ে ৯ শতাংশে নির্ধারণ করা হলো। এছাড়া ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনা অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনার লক্ষ্যে নীতি সুদহার করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা এসএলএফের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুদহার সাড়ে ১০ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১১ শতাংশ এবং নীতি সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা এসডিএফ সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো।
তারল্যের প্রয়োজনে বাণিজ্যিক ব্যাংক যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে, তখন তার সুদহার ঠিক হয় রেপোর মাধ্যমে। আর রিভার্স রেপোর মাধ্যমে বাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে। রেপো রেটকে নীতি সুদহার নামে অভিহিত করা হয়।
দেশে গত দুই অর্থবছর ধরেই ৯ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। যদিও গত অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশের সীমা তুলে নেয়া হয়। একই সঙ্গে দফায় দফায় বাড়ানো হয় নীতি সুদহার। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত অর্থবছরের মধ্যেই ঋণের সুদহার ৯ থেকে বেড়ে প্রায় ১৫ শতাংশে ঠেকে। যদিও সুদহার বৃদ্ধির প্রভাব এখনো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান হয়নি। চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে দেশের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগস্টে এ হার কিছুটা কমে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশে নেমেছে। যদিও অর্থনীতিবিদরা এতদিন বলে আসছিলেন, বিবিএসের তথ্যের চেয়ে দেশের প্রকৃত মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের পুরো মেয়াদেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির মৌলিক সূচকগুলোর বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়েছে।
গভর্নর হিসেবে ড. আহসান এইচ মনসুর যোগদানের পর গত ২৫ আগস্ট নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছিল। গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর জানিয়েছিলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার দুই দফায় বাড়ানো হবে। এক্ষেত্রে তা ১০ শতাংশে উন্নীত করার সম্ভাবনা রয়েছে।