দিনে কিংবা রাতে, টাকা পাঠানো থেকে শুরু করে বিল জমা দেয়া অথবা কেনাকাটা – অনলাইন ব্যাংকিং সবকিছুই সহজ করে দিয়েছে। ই-ব্যাংকিং বা ইন্টারনেট ব্যাংকিং নামেও সুপরিচিত এই অনলাইন আদান-প্রদান ব্যবস্থা কমবেশি সবার জীবনে যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা। কিন্তু, প্রদীপের নিচেই অন্ধকারের মতো হ্যাকারদের দৌরাত্ম্য এখানেও আশঙ্কার ছায়া ফেলেছে সম্প্রতি। অনলাইন ব্যাংকিং ঝুঁকি এড়াতে এবারের আলোচনায় তুলে ধরা হলো কার্যকর কিছু টিপস:
ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার – কোনো অবস্থাতেই না
আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের পিন, এক্সপায়ারি ডেট বা গোপন সংখ্যা ইত্যাদি কখনোই কারো সাথে শেয়ার করবেন না। যত কাছের বা বিশ্বস্ত মানুষই হোক না কেন, নিজের কার্ড কখনো অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দিবেন না। পরিবারের সদস্য কারো প্রয়োজন হলে সাপ্লিমেন্টারি কার্ড তুলে ব্যবহার করতে দিন। এছাড়াও, বিল প্রদান বা যে কারণেই হোক না কেন আপনার অনলাইন ব্যাংকিং পাসওয়ার্ড কখনো কাউকে জানাবেন না।
অ্যাকাউন্ট নিরাপত্তায় কঠিন পাসওয়ার্ডের বিকল্প নেই
অন কিংবা অফলাইন – অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তায় কঠিন পাসওয়ার্ডের কোনো বিকল্প নেই। তাই, পাসওয়ার্ড সেট করার সময় নিচের বিষয়গুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন:
পাসওয়ার্ড হতে হবে নূন্যতম ৬ অংকের
বড় ও ছোট হাতের এ, বি, সি, ডি; একটি বা দুটি চিহ্ন ও ১, ২, ৩, ৪ ইত্যাদির সংমিশ্রণই হচ্ছে আদর্শ পাসওয়ার্ড।
একই পাসওয়ার্ড একটির বেশি অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করবেন না, পুরনো পাসওয়ার্ড কখনো আবার ব্যবহার করবেন না।
ব্যক্তিগত তথ্য যেমন নাম বা নামের অংশবিশেষ, ফোন নম্বর, জন্মতারিখ, প্রিয় কারো নাম কিংবা ডিকশনারিতে আছে এমন কোনো শব্দ পাসোয়ার্ডে রাখবেন না।
অনলাইন ট্রানজেকশন করলে পিসিতে ইন্টারনেট সিকিউরিটি মাস্ট।
আপনি যদি মাঝে মাঝেও বাসা কিংবা অফিসের কম্পিউটার থেকে অনলাইন ট্রানজেকশন কিংবা শপিং করে থাকেন তবে অবশ্যই ভালো মানের একটি ইন্টারনেট সিকিউরিটি ব্যবহার করা আবশ্যক। ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস নয়, বাজার থেকে দেখে-শুনে যাচাই করে ভালো মানের যেকোনো অ্যান্টিভাইরাসের লাইসেন্সড ভার্সন ক্রয় করুন। অ্যান্টিভাইরাস বাছাই করার ক্ষেত্রে অবশ্যই জেনে নিবেন এটি অ্যান্টি স্প্যাম ও অ্যান্টি ফিশিং সেবা দেয় কি না?
এমবি বাঁচাতে অটো-আপডেট বন্ধ রাখা মানে বিপদ ডেকে আনা
সামান্য কিছু মেগাবাইট বাঁচাতে অনেকেই পিসি ও মোবাইলে অটো-আপডেট বন্ধ করে রাখে, এটি বাড়তি বিপদ ডেকে আনে। মাইক্রোসফট, অ্যাপল এবং গুগলসহ সব অপারেটিং সিস্টেম নির্মাতাই নিয়মিত বিরতিতে স্ব স্ব সিস্টেমের হালনাগাদ প্রকাশ করে। আপনার ডিভাইসের নিরাপত্তার জন্যই এসব হালনাগাদ আবশ্যক। উদাহরণস্বরূপ সাম্প্রতিক সময়ে কেবল সেসব কম্পিউটার র্যানসমওয়্যার ‘ওয়ানাক্রাই’ শিকার হয়েছে যাদের পিসিতে মাইক্রোসফটের দেয়া হালনাগাদ ইনস্টলড ছিল না।
পাবলিক পিসি হলে ব্যবহারের পর ক্যাশ মুছে ফেলা
সাধারণত কম্পিউটারে ব্রাউজ বা যা কিছুই করা হোক না কেন, সব ডিভাইসেই তার একটি বিবরণ রক্ষিত হয়ে থাকে। একে ক্যাশ বলা হয়। আপনি যদি পাবলিক কোনো কম্পিউটার থেকে অনলাইন ট্রানজেকশন করে থাকেন বা এমন যদি হয় বাসার কম্পিউটারটি আপনি ছাড়াও অনেকে ব্যবহার করেন, তবে অবশ্যই প্রতিবার ব্যবহারশেষে ব্রাউজারের ক্যাশ মুছে ফেলা আবশ্যক।
ফোনে বা ইমেইলে ব্যাংকিং তথ্য – না, না, না
হ্যাকাররা প্রায়ই দেখা যায় ব্যাংকের নামে মেইল অ্যাড্রেস খুলে প্রতারণামূলক মেইল করে থাকে। ব্যাংকের নামে বা এমন কোনো সন্দেহজনক ইমেইল পেয়ে থাকলে অবশ্যই ইগনোর করুন। যেকোনো মেইল খোলার আগে সেন্ডারের নামের উপর মাউস নিলে কোনো মাস্কিং আছে কি না বা সত্যিকারের ইমেইল আইডিটি কী তা জানা যাবে (এজন্য কোনো ক্লিক করার দরকার নেই, কেবল মাউসের কার্সরটি ‘ফ্রম’ চিহ্নিত ঘরের উপর নিলেই হবে)। এছাড়াও, হ্যাকাররা সম্প্রতি ফোন করে ব্যাংকের গ্রাহকসেবা কেন্দ্রের কথা বলেও বিভিন্ন প্রতারণা করে থাকে। এমন কোনো ফোন পেলেও তা ইগনোর করা ভালো। ব্যাংকের কথা বলে কেউ অ্যাকাউন্ট নম্বর, পাসওয়ার্ড বা ট্রানজেকশন বিষয়ে কিছু বলতে চাইলে তাঁকে আপনার কাছে আসতে বলুন অথবা নিজেই ব্রাঞ্চে গিয়ে কথা বলবেন বলে জানান।
মোবাইল ও ইমেইল নোটিফিকেশন চালু রাখুন সবসময়
সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকেই এখন নোটিফিকেশন সিস্টেম চালু রয়েছে। অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হলে, চেক বা এটিএম যেকোনো মাধ্যমে উঠানো হলে কিংবা কোনো বিল দেয়া হলে অর্থাৎ যাবতীয় লেনদেন করামাত্র তাৎক্ষণিক ব্যবহারকারীর ইমেইল ও মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে তা জানিয়ে দেয়া হয়। আপনার অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে তাই অবশ্যই নোটিফিকেশন চালু রাখুন।
অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা
উল্লিখিত ব্যবস্থাসমূহের পাশাপাশি বাড়তি সচেতনতা হিসাবে আরও যা যা করতে পারেন-
ভ্রমণে থাকাকালীন বা নিজের ডিভাইস ছাড়া অনলাইন ট্রানজেকশন না করাই ভালো
নিজের কম্পিউটার বা মোবাইল কখনো লক না করে ফেলে রাখবেন না বা দূরে যাবেন না
ব্যাংকিংশেষে অবশ্যই লগ আউট করে নিতে হবে, পাসওয়ার্ড রিমাইন্ডার থাকলে অফ করে দিতে হবে
অনলাইন ট্রানজেকশনের কাজে যে ব্রাউজারই ব্যবহার করেন না কেন, তা আপডেটেড রাখুন