২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক স্তরের (১ম, ২য় ও ৩য় শ্রেণীর) ২০টি প্যাকেজে ৯৮টি লটের মধ্যে ৮৮টি লটের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১৪৮ কোটি টাকা। এই বইয়ের মধ্যে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও দু’টি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সভায় কমিটির সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, সব শিক্ষার্থীর কাছে তাদের কাক্সিক্ষত পাঠ্যপুস্তক যথাসময়ে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের (১ম, ২য় ও ৩য় শ্রেণীর) ২০টি প্যাকেজে ৯৮টি লটে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে ২৫২টি দরপত্র জমা পড়ে। এর মধ্যে ২০৯টি দরপত্র রেসপনসিভ হয়। টিইসি কর্তৃক ৯৮টি লটের বিপরীতে ৮৮টি লটে সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান ৪ কোটি ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৪৬টি বই সরবরাহ করবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৪৭ কোটি ৯৭ লাখ ৫৯ হাজার ৫৩৭ টাকা। প্রতিটি বই মুদ্রণ, কাগজসহ বাঁধাই ও সরবরাহ বাবদ খরচ হবে ৩৬.৭৬ টাকা।
৮৮টি লটের মধ্যে ৭০টি লটের সর্বনিম্ন দরদাতা ৭০টি দেশীয় প্রতিষ্ঠান এবং অবশিষ্ট ১৮টি লটের জন্য ২টি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। ৯৮টি লটের অবশিষ্ট ১০টি লটের জন্য রেসপনসিভ দরদাতা না থাকায় পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হবে।
এ ছাড়াও দেশের কৃষি খাতে ব্যবহারের জন্য এক লাখ ৮০ হাজার টন বিভিন্ন ধরনের সার ক্রয়প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
সভায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশের কাছ থেকে তৃতীয় লটে ৩০ হাজার মে. টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এই সার ক্রয় করা হবে।
সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাফকো, বাংলাদেশ থেকে ৫.৪০ লাখ মে. টন ইউরিয়া সার ক্রয়ের সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তৃতীয় লটে ৩০ হাজার মে. টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের জন্য প্রাইস অফার পাঠানোর অনুরোধ করা হলে কাফকো, বাংলাদেশ প্রাইস অফার পাঠায়। কাফকোর সাথে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে তৃতীয় লটে ৩০ হাজার মে. টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মে. টন ৩২৫.২৫ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ৯৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশী মুদ্রায় ১১৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইউরিয়া সার ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩২ লাখ মে. টন। তার মধ্যে কাফকো, বাংলাদেশ থেকে ৫.৪০ লাখ মে. টন ক্রয় করা হবে। প্রতি লটে ক্রয় করা হবে ৩০ হাজার মে.টন।
সভায় টেবিলে তিনটি ক্রয়প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় এক লাখ ১০ হাজার মে. টন সার আমদানি করা হবে। এর মধ্যে জেএসসি ফরেন ইকোনমিক করপোরেশন ‘প্রোডিংটন’ রাশিয়া ও বিএডিসির সাথে চুক্তির আওতায় ৩০ হাজার মে.টন এমওপি সার আমদানিতে প্রতি মে.টনের দাম ২৮৫ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১০২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
সভায় রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কানাডা থেকে ৪০ হাজার মে.টন এমওপি সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতি মে. টনের দাম ২৮৫ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১৩৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
সভায় রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে মরক্কো থেকে ৪০ হাজার মে.টন ডিপিএ সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় প্রতি মে.টনের দাম ৫৮৫ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ২৮০ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
জানা গেছে, অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় পাসপোর্টসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব উত্থাপনের কথা থাকলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে নেয়ায় বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে সূত্র জানায়।