সম্প্রতি বিস্ময়কর ত্রয়ী নক্ষত্র ব্যবস্থা বা ট্রিপল স্টার সিস্টেম আবিষ্কার করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক একটি দল। এর আগে এমন বিপুল ভরের ত্রয়ী নক্ষত্র সিস্টেম শনাক্ত হয়নি বলে দাবি করছেন গবেষকেরা। গত জুনে রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল জার্নাল-এ এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়।
ত্রয়ী নক্ষত্র ব্যবস্থাটি টিআইসি ৪৭০৭১০৩২৭ নামে পরিচিত। নাসার ট্রানজিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট বা টেস পর্যবেক্ষণকেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে গবেষকরা এটি শনাক্ত করেছেন। ত্রয়ী নক্ষত্র সিস্টেমের দুইটি নক্ষত্র একে অপরকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করে। অর্থাৎ সেটা আচরণ করে বাইনারী নক্ষত্রের মতো। আর তৃতীয় নক্ষত্রটি বাইনারী দুই নক্ষত্রকে এক বস্তু হিসেবে বিবেচনা করে পরস্পরকে কেন্দ্র করে ঘোরে।
সংখ্যায় তুলনামূলক কম হলেও ত্রয়ী নক্ষত্র সিস্টেম মহাকাশে একেবারে বিরল নয়। নাসার মতে, মহাবিশ্বের প্রায় ১০ শতাংশ নক্ষত্র সিস্টেমই ত্রয়ী নক্ষত্র সিস্টেম। গত বছর সেপ্টেম্বরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো ত্রয়ী নক্ষত্র সিস্টেমকে প্রদক্ষিণ করে এমন এক্সোপ্লানেট বা বহিসৌরগ্রহ আবিষ্কার করেছিলেন। অর্থাৎ ত্রয়ী নক্ষত্র সিস্টেমেও সাধারণ একক বা বাইনারী নক্ষত্র সিস্টেমের মতো গ্রহ-উপগ্রহ আছে।
টিআইসি ৪৭০৭১০৩২৭ আকার এবং ভরের দিক থেকে অন্যাসব পরিচিত ত্রয়ী নক্ষত্র সিস্টেম থেকে আলাদা। নক্ষত্রগুলো খুবই ভারী হওয়ায় এদের চারপাশের মহাকর্ষ বলও স্বাভাবিক নক্ষত্র সিস্টেমের তুলনায় অনেক বেশি।
গবেষকদলটির প্রধান ও ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিলস বোর ইনস্টিটিউটের জ্যোতির্বিজ্ঞানী আলেজান্দ্রো ভিগনা-গোমেজ বলেন, ‘টিআইসি ৪৭০৭১০৩২৭ সিস্টেমটির বাইনারি নক্ষত্র দুইটির সম্মিলিত ভর সূর্যের প্রায় ১২ গুণ। একে-অপরকে প্রদক্ষিণ করতে এদের এক দিনের কিছুটা বেশি সময় লাগে।
তৃতীয় নক্ষত্রটি এই দুইটি সম্মিলিত আকারেরও অনেক বিশাল। ভর সূর্যের প্রায় ১৬ গুণ। এটি প্রায় প্রতি ৫২ দিনে বাইনারি নক্ষত্রজোড়াকে একবার প্রদক্ষিণ করে। আকারের কথা বিবেচনা করে এরা বেশ দ্রুত একে-অপরকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।’
ত্রয়ী নক্ষত্র সিস্টেমটি কীভাবে গঠিত হয়েছিলো তা সঠিকভাবে এখনই বলার সুযোগ নেই। তবে, এর গঠনের তিনটি সম্ভাব্য উপায়ের কথা জানিয়েছেন গবেষকদলটি। প্রথমত, বাইরের বড় নক্ষত্রটি থেকে পরে ধীরে ধীড়ে ছোট নক্ষত্রগুলোর জন্ম হতে পারে। এজন্য নক্ষত্র থেকে নতুন নক্ষত্র গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস বের হয়ে যেতে হবে। কিন্তু এমনটা ঘটার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য।
দ্বিতীয় উপায়টি হতে পারে, তিনটি তারা আলাদাভাবে গঠিত হয়েছিল। ধীরে ধীরে মহাকর্ষের টানে কাছাকাছি চলে আসে। একটা সময় কক্ষপথে বাঁধা পড়ে একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘুরতে শুরু করে। তবে এটাও খুব ক্ষীণ সম্ভাবনার ব্যপার। কারণ, এমনটা হলে বাইরের বিশাল নক্ষত্রটিই কেন্দ্রে থাকতো।
গবেষকদলটির মতে তৃতীয় উপায়টি হলো, ত্রয়ী নক্ষত্র সিস্টেমটিতে তিনটি নয়, নক্ষত্র ছিলো মোট চারটি। দু’টি বাইনারি বা ২ জোড়া নক্ষত্রের মাধ্যমে নক্ষত্র সিস্টেমটি গঠিত হয়েছিলো। একটি বাইনারী নক্ষত্র সিস্টেম ছিলো কেন্দ্রে। যা এখনও কেন্দ্রেই আছে। বাকি আরেকজোড়া বা আরেকটি বাইনারি নক্ষত্র সিস্টেম ছিলো কেন্দ্রের বাইরে। বাইরের বাইনারী সিস্টেমটি একটা সময় একত্রিত হয়ে বিশাল নক্ষত্রটি তৈরি করে। গবেষক দলটি দেখেছেন, কম্পিউটার সিমুলেশন তৃতীয় ব্যাখ্যাকেই সমর্থন করছে।
আসলে কী ঘটেছে তা জানার জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন। গবেষকদলটি এরকম বিশালাকার এবং জটিল নক্ষত্র সিস্টেম আরও খুঁজে বের করে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যেতে চান। নক্ষত্রের জন্ম বা বিবর্তন নিয়ে অনেক অজানা রহস্যের সমাধান মিলবে তাতে। এমনটাই আশা বিজ্ঞানীদের।