পর্যায় সারণিতে বর্তমানে ১১৮টি মৌল আছে। এগুলোর মধ্যে ৯২টি পৃথিবীতে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়। বাকি ২৬টি মৌল তৈরি করতে হয় ল্যাবে। এই ৯২টি মৌলের মধ্যে পৃথিবীতে কোন মৌলটি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়? আমরা বেঁচে থাকার জন্য যে খাবার খাই কিংবা মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য যা যা করি, তার সবকিছুতে আছে এসব মৌলের গুরুত্ব।কিন্তু কোন মৌলটা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়, সে প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে আরও একটা প্রশ্ন করতে হবে। সবচেয়ে বেশি কি পৃথিবীর ভূত্বকে, নাকি বায়ুমণ্ডলে। দুটির উত্তর আলাদা। সে জন্য এ লেখায় ভূত্বকের ও বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে প্রাচুর্যপূর্ণ ৫টি করে মৌল নিয়ে আলোচনা করা যাক। শুরুতেই দেখি পৃথিবীর ভূত্বকে কোন পাঁচটি মৌল সবচেয়ে বেশি আছে।
১. অক্সিজেন – ৪৬ ভাগ
পৃথিবীর ভূত্বকের মোট ভরের প্রায় অর্ধেক রয়েছে অক্সিজেন। মানবদেহের রাসায়নিক গঠনের প্রধান ভূমিকাও পালন করে অক্সিজেন। অক্সিজেন ছাড়া তো বেঁচে থাকাই সম্ভব নয়। ফলে এ মৌলটা বেশি থাকাই স্বাভাবিক।
২. সিলিকন – ২৭ ভাগ
ভূত্বকে এরপরেই সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় সিলিকন। রূপান্তরিত শিলা থেকে সমুদ্রের বালি—সব জায়গায় আছে সিলিকনের উপস্থিতি। সিলিকন চিপ ও কোয়ার্টজ স্ফটিক তৈরির জন্যও এ মৌল বিখ্যাত। অক্সিজেনের সঙ্গে মিলে সিলিকন যে কাঠামো তৈরি করে, তা পৃথিবীর জীবনের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩. অ্যালুমিনিয়াম – ৮ ভাগ
বর্তমানে বাসাবাড়ির সব জায়গায় অ্যালুমিনিয়ামের দেখা মেলে। ওজনে হালকা হওয়ায় এর ব্যবহার আরও বেশি। বিশ্বব্যাপী শিল্পের জন্য অ্যালুমিনিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪. আয়রন – ৫ ভাগ
শুধু পৃথিবীর কোর বা কেন্দ্রের জন্য নয়, আয়রন বা লোহা মানবজাতির জন্যও খুব দরকারি। লোহার ব্যবহার ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। আয়রন থেকে হেমাটাইট ও ম্যাগনেটাইটের মতো অক্সাইড গঠিত হয়। এসব যৌগের কারণে মাটিতে লালচে রঙের শিলা তৈরি হয়। এমনকি পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রে অনেকটাই থাকে লোহা।
৫. ক্যালসিয়াম – ৫ ভাগ
ক্যালসাইট ও জিপসামের মতো খনিজ গঠন করে ক্যালসিয়াম। চুনাপাথর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ক্যালসিয়াম। এছাড়া মানুষ ও উদ্ভিদ—উভয়ের জন্যই প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম থেকে।
এবার দেখা যাক, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কোন ৫টি মৌল সবচেয়ে বেশি আছে।
১. নাইট্রোজেন – ৭৮ ভাগ
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় নাইট্রোজেন গ্যাস। এটি তুলনামূলক নিষ্ক্রিয় গ্যাস। মানে সহজে নাইট্রোজেন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। স্থিতিশীল বায়ুমণ্ডল বজায় রাখার চেষ্টা করে। তবে জীবনের জন্য নাইট্রোজেন অপরিহার্য। কারণ, এটি ডিএনএ ও প্রোটিনের একটা মূল অংশ গঠন করে।
২. অক্সিজেন – ২১ ভাগ
আমাদের সবচেয়ে পরিচিত মৌল অক্সিজেন। নিত্যদিনের সঙ্গী। ভূত্বকেও এই মৌলটি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়।
৩. আর্গন – ০.৯৩ ভাগ
বায়ুমণ্ডলে আর্গন গ্যাস খুব কম থাকা সত্ত্বেও এই তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। পৃথিবীতে এর ব্যবহার কম হলেও বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক গঠনে এর ভূমিকা অপরিহার্য।
৪. কার্বন ডাই-অক্সাইড – ০.০৪ ভাগ
এই মৌলটিও বায়ুমণ্ডলে কমই পাওয়া যায়। কিন্তু এর গুরুত্ব অনেক। উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণের প্রধান উপাদান এই মৌলটি। তা ছাড়া গ্রহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও কার্বন ডাই-অক্সাইডের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
৫. নিয়ন – ০.০০১৮ ভাগ
নিয়নও একটা নিষ্ক্রিয় গ্যাস। আমাদের প্রিয় অনেক জিনিস আলোকিত করতে রয়েছে নিয়নে ভূমিকা। বায়ুমণ্ডলে এর উপস্থিতি অনেক কম হলেও গুরুত্ব বিবেচনায় এটা মৌলদের মধ্যে সুপারস্টার।