বিনোদন ডেস্ক : ১২ মে মুক্তি পাচ্ছে দেবশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় ছবি ‘ফাটাফাটি’। তার আগে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে আড্ডায় অভিনেত্রী। যাঁর আরও এক পরিচয় শুভশ্রীর দিদি হিসাবেও।
টলিপাড়ায় অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের দিদি হিসাবেই তাঁর পরিচিতি। তিনি দেবশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। আদ্যোপান্ত কর্পোরেট চাকুরিরতা হলেও বর্তমানে নতুন ইনিংস শুরু করেছেন। নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রযোজিত এবং অরিত্র মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি ‘ফাটাফাটি’-তে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। বোনের মতো ‘সুপারস্টার’ তকমা আসেনি। তবে তাঁর জীবনেও চড়াই-উতরাইয়ের শেষ নেই। বর্ধমানের মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে থেকে কম বয়সে বিয়ে, বিচ্ছেদ, সন্তান— সব নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি দেবশ্রী।
প্রশ্ন: সাধারণত নায়িকারা কম বয়স থেকেই নিজেদের কেরিয়ার শুরু করেন। সে দিক থেকে নিজের ইনিংসটা কি একটু দেরিতে শুরু করলেন বলে মনে হয়?
দেবশ্রী: আমি কোনও দিন অভিনেত্রী হওয়ার কথা ভাবিনি। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর মতো আত্মবিশ্বাস ছিল না। পরে রাজর্ষি দে-র পরিচালনায় যখন প্রথম ছবিতে অভিনয় করি, সকলের প্রশংসা পাই। তখন একটু একটু করে আত্মবিশ্বাস জন্মায়।
প্রশ্ন: ক্যামেরার সামনে সচেতন হয়ে যাওয়া, আত্মবিশ্বাস না পাওয়ার কারণ কী?
দেবশ্রী: বলা যেতে পারে নিজের চেহারার জন্য মনে হত। এটা আমি ১০ বছর আগের দেবশ্রীর কথা বলছি। পথ চলতে গিয়ে বহু মানুষের সঙ্গে মিশেছি। শুভ (শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়) এই ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছে। এত কিছু দেখে একটাই কথা মনে হয়েছে, নিজেকে ভালবাসতে না পারলে কিছু হবে না। আর তার থেকেও বড় কথা, আমি ফেক নই। আমি মোটা। তাতে আমার কোনও শারীরিক সমস্যা নেই। ছোটবেলায় খারাপ লাগত। খুব ছোট বয়সে বিয়ে হয়েছিল তো। আমার প্রাক্তন স্বামীও অনেক সময় মোটা বলেছেন। পাশে থাকা সুন্দরী মহিলার সঙ্গে তুলনা টেনেছেন। তখন কষ্ট হত। সেই সময়ই আরও বেশি সচেতন হয়ে গিয়েছিলাম নিজেকে নিয়ে।
প্রশ্ন: চেহারা কি কখনও আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলোতে প্রভাব ফেলেছে?
দেবশ্রী: হ্যাঁ, ফেলেছে। আমার প্রাক্তন স্বামী এক বার বলেছিল, “তোমার মা যে সব সময় সুন্দরী সুন্দরী করেন। নিজের চেহারা কখনও আয়নায় দেখেছ? আসল সুন্দরী কাদের বলে আমার সঙ্গে বেরিয়ে দেখবে।” আমি তো তখন ছোট ছিলাম। জীবনটা শাহরুখ খানের সিনেমার মতো ছিল। সব যেন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। বিয়ের সময় অবশ্য আমি খুব রোগা ছিলাম। ছেলে হওয়ার পর আমার ওজন বেড়ে যায়। তার পর নানা কথা শুনতে হত। অবসাদ চলে আসে। তখনও খাওয়াও বেড়ে গিয়েছিল। আমি ডিপ্রেশনেই বেশি খাই।
প্রশ্ন: সেই অবসাদ থেকে নিজেকে বার করলেন কী ভাবে?
দেবশ্রী: আমার আইনি বিচ্ছেদ হয় ২৪ বছর বয়সে। অত ছোট বয়সে এই আইনি ঝামেলার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। কোলে তখন ঋষি। তখন একটাই চিন্তাই মাথায় ছিল, আমার সন্তানকে মানুষ করতে হবে। ও যেন ভাল থাকে। নিজের কষ্টটা তখন ছোট হয়ে যায়। ভগবানকে ধন্যবাদ যে, এত ভাল পরিবার পেয়েছি। যেমন বোন, তেমন মা-বাবা। শুভশ্রী আমায় টেনে তুলেছে সেই ভয়ানক পরিস্থিতি থেকে। তখন ও সদ্য কলকাতায় এসেছে। আমরা একটা বাড়ি ভাড়া করে থাকতাম। আমার স্বামী তখনও আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেছিলেন।
প্রশ্ন: তা হলে তখন কি আবার সংসার শুরু করার কথা ভেবেছিলেন?
দেবশ্রী: হ্যাঁ, গিয়েছিলামও। কিন্তু সেই একই সমস্যা। যখন স্বামী থাকার পরেও অন্য কারও কথা ভাবার ইচ্ছে হয়, তখন সেই সম্পর্ক না থাকাই ভাল। আমি পরকীয়াকে মোটেই সমর্থন করি না। আর ঋষির সঙ্গেও ওর বাবার তেমন আত্মার যোগ ছিল না। আমার মনে হয় এত ছোট বয়সে বিয়ে করার জন্য এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
প্রশ্ন: দ্বিতীয় বার বিয়ের পরেও ধাক্কা খেতে হয়েছিল আপনাকে। মাঝে তো বেশ কয়েক বছর একা ছিলেন। তখন কোনও অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল কি?
দেবশ্রী: মেয়েরা একা থাকা মানেই ছেলেরা ভেবে নেয়, হয় সেই মেয়ের শারীরিক চাহিদা আছে কিংবা আর্থিক প্রয়োজন আছে। সেই ফাঁক দিয়ে ওরা ঢোকার চেষ্টা করে। কিন্তু ছেলেরা বোঝে না যে মেয়েরা খুব স্মার্ট। অরগ্যাজ়মের জন্য আমাদের কোনও পুরুষের দরকার নেই। চাহিদা মেটানোর আরও অনেক উপায় আছে।
প্রশ্ন: আপনার বোন শুভশ্রী তো আপনার থেকে অনেক বেশি সফল, কখনও হিংসা হয়েছে?
দেবশ্রী: কখনও নয়। শুভ আমার বোন নয়, ও আমার মেয়ে। ওর সাফল্যে আমি গর্বিত। আমাদের সম্পর্কটা সেই ভাবেই ছোট থেকে তৈরি হয়েছে। দু’জন দু’জনের অনুপ্রেরণা আমরা। আমি ঋষি আর শুভকে ভাই-বোনের মতো বড় করেছি।
প্রশ্ন: আপনার বিবাহিত জীবনের অভিজ্ঞতা সুখের নয়। শুভশ্রীর জীবনের যখন রাজ (চক্রবর্তী) এলেন, তখন বোনের জন্য কি ভয় হয়েছিল?
দেবশ্রী: রাজের মতো মানুষ আমি সত্যিই এখনও দেখিনি। আজ পর্যন্ত কারও সম্পর্কে কোনও খারাপ কথা ওর মুখে শুনিনি। প্রথমে ভাবতাম নিজের ভাবমূর্তি নিয়েই বেশি চিন্তিত। কিন্তু এত বছর পর দেখি, ও মানুষটাই তেমন। রাজের সঙ্গে আমার বাবার দারুণ সমীকরণ।
প্রশ্ন: আপনার ইনস্টাগ্রাম দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, কী এমন কাজ করেন যে এত ভাল দামি পোশাক-আশাক পরে সারা ক্ষণ ছবি পোস্ট করেন?
দেবশ্রী: যাঁরা এই প্রশ্ন করেন তাঁদের আমি বলব, প্রথম বিবাহবিচ্ছেদের পর থেকে আমি চাকরি করি। তার পর বাবার একটা ছোট ব্যবসা আছে, যা নিয়ে কথা বলি না আমি। আর এখন তো একটু কাজ পাচ্ছি টলিপাড়ায়। ইনস্টাগ্রামের জীবনটা আমার আসল জীবন নয়। আমার সমাজমাধ্যমের ছবি দেখে মা বলেছিলেন, “লোকে তো বলে তোর ২৫টা বয়ফ্রেন্ড।” যদিও আমার ছেলে বার বার বলে ডেটে যেতে। তবে দ্বিতীয় বার বিয়েতে ধাক্কা খাওয়ার পর থেকে আমার বিশ্বাসটা নড়ে গিয়েছে।
প্রশ্ন: নতুন ভাবে আবারও জীবন শুরু করতে চান না?
দেবশ্রী: ভরসাযোগ্য মানুষ পেলে হয়তো নিশ্চয়ই আবার নতুন ভাবে কিছু ভাবব। ডেট করব। তবে একাও আমি ভাল আছি। আমাদের যে এই নতুন ছবিটা আসছে সেই ভাষাতেই বলি, ‘একা থাকো আর সম্পর্কে থাকো, ফাটাফাটি থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ’।