বর্তমানে স্মার্টফোন প্রায় সব ঘরেই আছে। বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ সবার হাতেই দিনের কোনো না কোনো সময় স্মার্টফোন যাচ্ছে। সবাই নিজের অজান্তেই ডুবে যাচ্ছে রিলস কিংবা শর্টস এর নেশায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই কন্টেন্টগুলো আকর্ষণীয় ও সংক্ষিপ্ত হওয়ায় সবার আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যা মানুষকে আরও ভিডিও দেখতে উদ্বুদ্ধ করছে। ফলে কখন যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে যাচ্ছে, তা কেউ টেরই পাচ্ছে না। যা আমাদের সাময়িক আনন্দ দিলে মানসিক, শারীরিক, আর্থিক ও দ্বিনি ক্ষতি সাধন করছে।
নিম্নে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর রিলস কিংবা শর্টস ভিডিওর কিছু ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরা হলো।
সময় নষ্ট হয় : মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য দুনিয়াতে এসেছি। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই আমাদের অনন্তকালের প্রস্তুতি নিতে হবে। কিয়ামতের দিন মানুষকে তার গোটা জীবনের হিসাব দিতে হবে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের রিলস আসক্তি মানুষের সেই মূল্যবান সময়গুলো হেলায় কাটাতে উৎসাহী করে। অথচ হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এমন দুটি নিয়ামত আছে, যে দুটোতে অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হচ্ছে, সুস্থতা আর অবসর।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪১২) রিলস আমাদের এই দুটি নিয়ামতের ব্যাপারেই উদাসীন করে রাখে। দুনিয়াবী দিক থেকেও সময় মহামূল্যবান। এর অপব্যবহার মানুষের জন্য নানাবিধ অকল্যাণ বয়ে আনে।
ইবাদত থেকে বঞ্চিত হয় : রিলস আসক্তিতে ডুব দিলে মানুষের সময়জ্ঞান হারিয়ে যায়। ফলে কারো কারো ক্ষেত্রে নামাজের জামাত হারানো কিংবা গোটা নামাজের ওয়াক্ত হারানোর ঘটনা ঘটে, যা খুবই দুর্ভাগ্যের। এর পরিণতি জাহান্নাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নবী ও হেদায়েতপ্রাপ্তদের পর এলো এমন এক অপদার্থ বংশধর, যারা নামাজ বিনষ্ট করল এবং প্রবৃত্তির পূজারি হলো। সুতরাং তারা জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। তবে যারা এরপর তাওবা করে নিয়েছে, ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তারাই তো জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোনো ধরনের জুলুম করা হবে না।’ (মারইয়াম, আয়াত : ৫৯-৬০)
মনোযোগ কমে যায় : রিলসের ছোট ভিডিওগুলোর দ্রুত পরিবর্তনশীল কনটেন্ট মস্তিষ্ককে দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করে। এতে শিক্ষায় মনোযোগের ঘাটতি এবং কর্মক্ষেত্রে ফলপ্রসূতা কমে যায়। ইবাদতেও মনোযোগ থাকে না। অথচ ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য মনোযোগ শর্ত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ খুশু খুজুর সহিত ইবাদতকারীদের সুনাম করেছেন। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জেনে রেখো! আল্লাহ গাফিল ও অমনোযোগী মনের দোয়া কবুল করেন না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৯)
মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা বাড়ে : রিলসে অনেক সময় অন্যান্য মানুষের জীবন, সাফল্য বা ভ্রমণ দেখে নিজের জীবনকে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। এই তুলনা মানসিক চাপ এবং বিষণ্নতা সৃষ্টি করতে পারে, যা আত্মবিশ্বাসের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মানুষ হতাশায় ভুগতে পারে। পাশাপাশি মানুষকে আল্লাহর শোকর করা থেকে বিরত রাখে। অথচ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, স্মরণ কর, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর (শোকর কর) তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের জন্য (আমার নিয়ামাত) বৃদ্ধি করে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও (তবে জেনে রেখ, অকৃতজ্ঞদের জন্য) আমার শাস্তি অবশ্যই কঠিন। (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৭)
ঘুমের সমস্যা : অনেকেই রাতে ঘুমানোর আগে রিলস দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে ঘুমের আগে স্ক্রিনের অতিরিক্ত ব্যবহার মস্তিষ্কের বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটায়, যা অনিদ্রার দিকে নিয়ে যেতে পারে। এর প্রভাব দৈনন্দিন কাজকর্মে যেমন পড়ে- ইবাদতেও পড়ে।
সম্পর্কের অবনতি : রিলস আসক্তি পারিবারিক বা সামাজিক সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে, কারণ সময়ের অভাব এবং আসক্তির কারণে মানুষ পরস্পরের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে ফেলে। অথচ আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাও ইসলামের অংশ। পবিত্র কোরআর ইরশাদ হয়েছে, ‘(তারাই বিবেকবান) আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে আদেশ দিয়েছেন, যারা তা অক্ষুণ্ন রাখে এবং তাদের প্রতিপালককে ভয় করে আর ভয় করে কঠোর হিসাবকে।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ২১)
মহান আল্লাহ এই ভয়াবহ আসক্তি থেকে আমাদের হেফাজত করুন। আমিন।