স্মার্টফোনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ‘ডিসপ্লে’। ডিসপ্লের ওপর নির্ভর করে ফোনের নকশাও। দেখতে একই মনে হলেও কার্যকারিতা অনুযায়ী ডিসপ্লের মধ্যে রয়েছে ভিন্নতা।
টিএফটি
‘থিন ফিল্ম ট্রানজিস্টর লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে’র সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে ‘টিএফটি’। এতে লিকুইড দুটো গ্লাস প্ল্যাটের মাঝে থাকে। অনেকটা স্যান্ডউইচের মতো। টিএফটি গ্লাসে যতগুলো পিক্সেল প্রদর্শিত হয়, ঠিক ততগুলো ট্রানজিস্টর থাকে। মোবাইল হ্যান্ডসেটের পাশাপাশি টেলিভিশন সেট, কম্পিউটার মনিটরের স্ত্রিন হিসেবেও সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এটি।
সুুবিধা : টিএফটির তেমন কোনো বাড়তি সুুবিধা নেই। তবে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কম দামি স্মার্টফোন ও সাধারণ ফোনে এসব পর্দা ব্যবহার করা হয়।
অসুবিধা : সরাসরি আলো বা সূর্যের আলোতে এই পর্দায় কিছু দেখা যায় না বললেই চলে। বড় আকারের টিএফটি পর্দা মোবাইলের ব্যাটারির অনেক শক্তি নষ্ট করে।
এই পর্দার লিকুইড বিষাক্ত, তাই চামড়ার সংস্পর্শে যেন না আসে সে বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। যদি দুর্ঘটনাক্রমে তা শরীরের কোথাও লেগে যায়, অতিসত্বর সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
আইপিএস
‘ইন-প্লেন সুইচিং’য়ের সংক্ষিপ্ত রূপ ‘আইপিএস’। টিএফটির তুলনায় এটি উন্নতমানের ডিসপ্লে প্রযুক্তি। সর্বোচ্চ রেজুলেশনের (৬৪০ বাই ৯৬০ পিক্সেল) আইপিএস ডিসপ্লেকেই বলা হয় ‘রেটিনা ডিসপ্লে’।
আইফোন ৪-এ এ ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে।
সুবিধা : ছবি ও ভিডিও দেখতে খুব বেশি চার্জের প্রয়োজন হয় না। তাই ব্যাটারির খরচও কম হয়। এতে যেকোনো কোণ থেকে মোটামুটি পরিষ্কার ছবি দেখা যায়।
অসুবিধা : সাধারণ এলসিডি থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি দামের বলে এই ডিসপ্লের স্মার্টফোনের দামও একটু বেশি হয়।
রেজিস্টিভ টাচ স্ক্রিন
মোবাইল ফোনের টাচ স্ক্রিন দুই ধরনের। একটি ‘রেজিস্টিভ’, আরেকটি ‘ক্যাপাসিটিভ’। রেজিস্টিভ টাচ স্ক্রিন দুই স্তরবিশিষ্ট। এই দুই স্তরের মধ্যে থাকে ছোট একটা ফাঁক। যখন প্রথম স্তরে চাপ দেওয়া হয়, তখন তা দ্বিতীয় স্তরে গিয়ে মোবাইলের প্রসেসরে সংকেত পাঠায়। খোলা হাতের পাশাপাশি দস্তানায় ঢাকা আঙুল ব্যবহার করেও এই পর্দায় কাজ করা যায়।
সুবিধা : ধুলাবালি ও পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
অসুবিধা : মাল্টিটাচ সুবিধা নেই। সরাসরি সূর্যের আলোতে ডিসপ্লে দেখতে সমস্যা হয়। এর বাইরের স্তর নাজুক হওয়ায় কোনো ধারালো বস্তুর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ক্যাপাসিটিভ টাচ স্ক্রিন
ক্যাপাসিটিভ টাচ স্ক্রিনে থাকে ‘ইনডিয়াম টিন অক্সাইড’-এর মতো স্বচ্ছ উপাদান। এই পর্দায় মানুষের হাতের স্পর্শ মোবাইলের বিদ্যুায়িত পর্দায় এক ধরনের বাধা সৃষ্টি করে। এই বাধাগুলো খুঁজে বের করে ফোনের প্রসেসর। সেই সূত্র ধরেই স্পর্শের মাধ্যমে সেলফোনগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া যায়।
সুবিধা : ক্যাপাসিটিভ টাচ স্ক্রিনে শুধু হাতের সংস্পর্শে কাজ করা যায়। অতিমাত্রায় সংবেদনশীল রেজিস্টিভ টাচ স্ক্রিনের মতো এতে কোনো রকম চাপের প্রয়োজন পড়ে না। টাইপ করা যায় খুব দ্রুত। রেজিস্টিভ এলসিডি টাচ পর্দার স্পষ্টতা ৭০-৭৫ শতাংশ; কিন্তু ক্যাপাসিটিভের ক্ষেত্রে তা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হয়। এতে রয়েছে উচ্চ সংবেদনশীল প্রযুক্তি ও মাল্টিটাচ-ব্যবস্থা। এ স্ক্রিন ব্যবহার করা হয় উচ্চ দামের স্মার্টফোনগুলোতে।
অসুবিধা : তবে অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হওয়ায় টাইপের সময় সতর্কতা বজায় রাখতে হয়। এটি মানবদেহের সংস্পর্শে চলে, তাই দস্তানা বা অন্য কিছু দিয়ে এ টাচ স্ক্রিনে কাজ করা যায় না। ওপরের স্তর কাচের হওয়ায় যেকোনো সময় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ওএলইডি
‘অর্গানিক লাইট ইমিটিং ডায়ড মনিটর’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ ওএলইডি। এতে ব্যবহার করা হয় কার্বনভিত্তিক কিছু উপাদান। ইদানীং ওএলইডি ব্যবহার করে টেলিভিশনের স্ক্রিন, কম্পিউটারের মনিটর, স্মার্টফোন ও গেইমিং কনসোল তৈরি করা হচ্ছে।
সুবিধা : অন্ধকার রুমে এলসিডির চেয়ে এটিতে অনেক বেশি কন্ট্রাস্ট রেশিও পাওয়া যায়। প্লাস্টিক ও অর্গানিক বা জৈব স্তরের ওএলইডি পর্দাটি অনেক চিকন, হালকা ও নমনীয়। দ্রুত সাড়া দেওয়া ওএলইডি পর্দা এলইডির তুলনায় অনেক উজ্জ্বল। এ পর্দায় ১৭০ ডিগ্রি কৌণিকভাবে দেখা যাবে কোনো রকম বাধা ছাড়াই।
অসুবিধা : লাল ও সবুজ অর্গানিকের ওএলইডি পর্দার লাইফটাইমের তুলনায় নীল রঙের অর্গানিকের লাইফটাইম প্রায় অর্ধেক। এর উৎপাদন খরচ অনেক বেশি এবং এর বড় শত্রু পানি।
অ্যামোলেড
‘অ্যাকটিভ-ম্যাট্রিকস অরগানিক লাইট-ইমিটিং ডায়োড’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো অ্যামোলেড। এতে অর্গানিক বা জৈব পদার্থ ব্যবহার করা হয়। ২০১১ সাল থেকে ব্যবহার শুরু হওয়া এ পর্দায় অসাধারণ রং, হালকা ওজন এবং ব্যাটারির শক্তি সঞ্চয়সহ ওএলইডির অনেক গুণই রয়েছে। খুব দ্রুত জনপ্রিয় হওয়া এ পর্দাটি উচ্চ দামের বিভিন্ন স্মার্টফোন, মিডিয়া প্লেয়ার, ক্যামেরা, বিশাল পর্দার টিভি তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সুবিধা : এই ডিসপ্লেতে এলইডি থেকে কম শক্তির প্রয়োজন পড়ে। ফলে ব্যাটারি খরচ হয় কম। বিদ্যুৎশক্তি সঞ্চয়ী, দেড় গুণ বেশি লুমিনেন্স (আলোর পরিমাপক), পর্দায় দেখার মান অনেক ভালো, সাড়া দেয় দ্রুত এবং অনেক নমনীয়। এর পর্দা অনেক বেশি সংবেদনশীল।
অসুবিধা : সরাসরি সূর্যালোকে এর ডিসপ্লে দেখা কষ্টকর। এর ভেতরের অর্গানিক উপাদান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তুলনামূলক কম দীর্ঘস্থায়ী।
এ ডিসপ্লে তৈরির খরচ বেশি। নকিয়া এন৮-এর মতো ব্যয়বহুল স্মার্টফোনে এ পর্দা ব্যবহার করা হচ্ছে।
সুপার অ্যামোলেড
অ্যামোলেড ডিসপ্লের পরবর্তী সংস্করণ হলো সুপার অ্যামোলেড। স্যামসাং এ প্রযুক্তির উদ্ভাবক। গ্যালাক্সি ডিভাইসগুলোতে এ ডিসপ্লে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সুবিধা : এ ডিসপ্লেটি সবচেয়ে হালকা। এটি অ্যামোলেডের চেয়ে বেশি উজ্জ্বল, শক্তি সঞ্চয়ী এবং স্পর্শ করলে সাড়া দেয় দ্রুত।
অসুবিধা : এলসিডির চেয়ে চিকন এবং উজ্জ্বল হলেও এর রেজুলেশনের মান বেশ খারাপ।
রেটিনা ডিসপ্লে
স্মার্টফোনের ডিসপ্লের সর্বাধুনিক সংস্করণ ‘রেটিনা ডিসপ্লে’। অ্যাপলের আইফোন, আইপ্যাড, আইপড, ম্যাকবুক এয়ারে ব্যবহার করা হয়েছে এই পর্দা।
সুবিধা : এই পর্দার পিক্সেল এত সূক্ষ্ম যে খালি চোখে তা চিহ্নিত করা যায় না। তাই একে ‘রেটিনা ডিসপ্লে’ বলা হয়।
অসুবিধা : অতিরিক্ত উজ্জ্বলতা এবং রঙের তারতম্যের জন্য রেটিনা ডিসপ্লে হলুদ দেখা যায়। বেশি ঘনত্বের জন্য অধিকসংখ্যক এলইডি ব্যবহার করায় ফোনের চার্জ শেষ হয় যায় দ্রুত। ডিভাইসের বেশি মেমোরি স্পেস দখলে রাখে এই ডিসপ্লে।
হ্যাপটিক টাচ স্ক্রিন
হ্যাপটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে ব্ল্যাকবেরি ও নকিয়ার টাচ স্মার্টফোনে। প্রথমদিকে এই পর্দা ব্যবহার করা হতো বিমানে। এখন পর্যন্ত চতুর্থ প্রজন্মের হ্যাপটিক টাচ স্ক্রিন বের হয়েছে। সর্বশেষ চতুর্থ প্রজন্মেরটি এসেছে ২০১৩ সালের মে মাসে। এখন পর্যন্ত টেলি-অপারেটর, ভিডিও গেইমস, পার্সোন্যাল কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনে ব্যবহার করা হয়েছে এই পর্দা। সামনে চেষ্টা করা হচ্ছে এটিকে আরো অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করার জন্য।
সুবিধা : মোবাইলে হ্যাপটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় ‘কম্পন সুবিধা’র জন্য। এতে হাতের স্পর্শে মোবাইলে ‘ভাইব্রেশন’ বা কম্পন পেতে সুবিধা হয়।
অসুবিধা : এই পর্দার জন্য মোবাইলের ভিজুয়্যাল সেন্সর অনেক সময় ওভারলোড হয়ে পড়ে।
গরিলা গ্লাস
গরিলা গ্লাস হলো অ্যালকালি-অ্যালোমিনোসিলিকেট যৌগের তৈরি এক ধরনের মজবুত ও শক্তিশালী ডিসপ্লে। বর্তমানে মটোরোলা, স্যামসাং এবং নকিয়ার মতো বিখ্যাত নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের স্মার্টফোনে পর্দাটি ব্যবহার করছে। এই গ্লাস তৈরির উপাদানগুলো প্রক্রিয়াজাত করে পুনরায় ব্যবহার করা যায়।
বাংলাদেশে গরিলা গ্লাস ব্যবহার করা সেটগুলো হচ্ছে ‘ওয়ালটন এইচ২’, ‘ওয়ালটন প্রিমো এক্স১’, ‘ওয়ালটন প্রিমো এক্স১ ২’, ‘ওয়ালটন আর২’ এবং ‘সিম্ফনির এক্সপ্লোরার জেও২’ প্রভৃতি।
https://bangla-bnb.saturnwp.link/%e0%a6%a8%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%a8-%e0%a6%ac%e0%a6%9b%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%85%e0%a6%aa%e0%a7%8b-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a6%ab%e0%a7%8b%e0%a6%a8/
সুবিধা : এটি স্মার্টফোনের পর্দাকে আঁচড় ও দাগ থেকে সুরক্ষা দেয়। গরিলা গ্লাস ৩-এ ব্যবহার করা হয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া। ফলে মোবাইলে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম জীবাণুর জন্ম হবে।
অসুবিধা : এই ডিসপ্লে অপেক্ষাকৃত দামি।