সময়জ্ঞান মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জীবনের প্রতিটি স্তরেই মানুষ মূলত তার দেহঘড়ির নির্দেশ অনুসারে চলে। যাকে গবেষকেরা বলেন সার্কেডিয়ান রিদম। এটি হলো ২৪ ঘণ্টার এমন এক চক্র, যেখানে মানুষ এই ২৪ ঘণ্টায় কীভাবে কাটাবে তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার নির্দেশ, তা পাওয়া যায় দেহ থেকে। গবেষকেরা বলেন, জীবনে সফল হতে চাইলে দেহঘড়ি বোঝার পাশাপাশি এটির ওপর কারিগরি ফলানো জরুরি।
সার্কেডিয়ান রিদম মানুষের দেহঘড়ির এমন এক চক্র, যা দিনজুড়ে মানুষের শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে। তবে ব্যক্তিভেদে এই সার্কেডিয়ান রিদম ভিন্ন হয়। যেমন কারও দিনের শুরুটা হয় খুব ভোরে, আবার কারও কারও দিন শুরু হয় মধ্যদুপুরে। একদল মানুষের দুপুরের পর থেকে শরীর ক্লান্ত হয়ে আসতে থাকে, আবার একদল মানুষ গভীর রাতেই বরং বেশি চাঙা অনুভব করে। এসবই মূলত দেহঘড়ির মামলা।
সাধারণত মানুষের দেহঘড়িকে তিনটি ধরনে বিবেচনা করা যায়। একদল মানুষ রয়েছে, যারা সারা দিন খুবই প্রাণচঞ্চল থাকে। আরেক দল আবার গভীর রাত পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকতে পারে। আরেকটি শ্রেণি রয়েছে এই দুইয়ের মাঝে।
মানুষ তখনই তার কাজগুলো খুব ভালোভাবে করতে পারে, যখন সেগুলো দেহঘড়ির সঙ্গে মিলিয়ে করা হয়। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় সিঙ্ক্রোনি ইফেক্ট। একজন মানুষ যে শ্রেণি-পেশারই হোক না কেন, তার কর্মচাঞ্চল্য ও সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে দেহঘড়ির ওপর। ব্যক্তি যত বেশি তার দেহঘড়ির সঙ্গে কাজের সমন্বয় করবে, সাফল্যের হার তত বাড়বে।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, যেসব ব্যক্তি খুব ভালোভাবে তাঁদের দেহঘড়ির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেন, কর্মজীবনে তাঁরা তত বেশি কর্মতৎপর, সতর্ক এবং অনেক বেশি সময় মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন। তাঁদের স্মৃতিশক্তি অন্যদের তুলনায় যথেষ্ট ভালো। এ কারণে তাঁদের কর্মজীবনে কী কী করতে হবে, সেগুলো তাঁরা খুব ভালো মনে রাখতে পারেন। এ ছাড়া কাজের সময় তাঁদের মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয় না খুব একটা।
কেবল মনোযোগ ধরে রাখা, ধীরস্থির রাখা বা কর্মতৎপরতা বাড়ানোই নয়, এই সিঙ্ক্রোনি ইফেক্ট মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ড যেমন কাউকে প্রভাবিত করা, যুক্তিসংক্রান্ত জায়গা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে খুবই দারুণ ভূমিকা রাখে। গবেষকেরা দেখেছেন, দেহঘড়ি ঠিকঠাক মেনে চলা ব্যক্তিরা বিচক্ষণ, সংশয়বাদী ও বিশ্লেষণাত্মক হয়ে থাকেন। তাঁরা নির্ধারিত কাজগুলোতে আরও বেশি সময় ও প্রচেষ্টা দিয়ে থাকেন। যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে তাঁদের সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। ফলে এ ধরনের মানুষ যেকোনো ক্ষেত্রে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তাঁদের পক্ষপাত প্রবণতা কম এবং তাঁরা সম্ভাব্য ঝুঁকি শনাক্ত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট এগিয়ে থাকেন।
https://bangla-bnb.saturnwp.link/niyomito-sosha-khele/
তবে দেহঘড়ির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চললেই মানুষ পরিপূর্ণ সফল হয়ে উঠবেই, বিষয়টি একেবারে সে রকম নয়। যেমন একেবারে দৈনন্দিন ভিত্তিতে আমাদের যেসব কাজ করতে হয়, যেমন কারও ফোন নম্বর মনে রাখা, কারও মুখ চেনা, কোনো স্থান শনাক্ত করতে পারা, প্রিয় তরকারি রান্না করা ইত্যাদির সঙ্গে দেহঘড়ির খুব একটা সম্পর্ক নেই। তবে আমাদের শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক অনেক কাজ এই দেহঘড়ির ওপর নির্ভর করে। আবার ব্যক্তিভেদেও এই দেহঘড়ির প্রভাব ভিন্ন হতে পারে।
সায়েন্সঅ্যালার্ট থেকে সংক্ষেপে অনূদিত