বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে স্থবির হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এরই মধ্যে স্থগিত করা হয়েছে দুটি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার কার্যক্রম। আর একটি বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশও দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে।
বিসিএস পরীক্ষা ছাড়াও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষা ও সিভিল সার্ভিসভুক্ত অর্ধবার্ষিক বিভাগীয় পরীক্ষাও স্থগিত রেখেছে পিএসসি। এতে চাকরিপ্রার্থীদের অপেক্ষা যেমন বাড়ছে তেমনি ভুগছেন সরকারি চাকরিজীবীরাও।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের কারণে পিএসসির সদস্যদের মধ্যেও একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তাঁদের কারও কারও ধারণা, অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো পিএসসিতেও বড় পরিবর্তন আসবে। এ জন্য পরিস্থিতি বুঝে পিএসসির কার্যক্রম শুরু করার পক্ষপাতী তাঁরা।
স্থগিত হওয়া বিসিএসের কার্যক্রম কবে থেকে শুরু হবে, তা এখনো জানেন না পিএসসির কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, স্থগিত থাকা বিসিএসের কার্যক্রম শুরু করতে প্রয়োজন অন্তর্বর্তী সরকারের সবুজসংকেত।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিএসসির একাধিক সদস্য জানান, পিএসসির কার্যক্রম নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। এ জন্য সবকিছু আটকে আছে। এর বাইরে প্রায় প্রতিদিনই নানা দাবিতে সভা-সমাবেশ করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। এতেও স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
জানা যায়, কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশে যখন আন্দোলন বড় হতে থাকে, তখন ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলছিল। কিছু প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হলেও আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনায় গত ২৫ আগস্ট ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত করে পিএসসি। একই দিন স্থগিত করা হয় ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার কার্যক্রম। গত ২৮ আগস্ট থেকে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। এ পরীক্ষার সময়সূচিও প্রকাশ করেছিল পিএসসি। ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০ হাজার ৬৩৮ জন প্রার্থী। এসব প্রার্থীই লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
এ ছাড়া ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ক্যাডারভুক্ত ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের অর্ধবার্ষিক বিভাগীয় পরীক্ষা স্থগিত করে পিএসসি। আর দীর্ঘদিন ধরে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফলও আটকে আছে।
৪৪তম বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৭১০ জন কর্মকর্তা নেওয়ার কথা রয়েছে। ৪৫তম বিসিএসের মাধ্যমে ২ হাজার ৩০৯ জন কর্মকর্তা নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জন। আর ৪৬তম বিসিএসে ৩ হাজার ১৪০ জন ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
জনপ্রশাসনের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি পদ শূন্য রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রথম শ্রেণির পদ ৪৩ হাজার ৩৩৬টি এবং দ্বিতীয় শ্রেণির ৪০ হাজার ৫৬১টি। বাকিগুলো তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি।
বিসিএসের কার্যক্রম স্থগিত থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁরা বলছেন, এসব বিসিএসের আশায় অনেকে অন্যান্য চাকরিতেও যোগ দেননি। আবার অনেকের চাকরির বয়সও শেষ হয়ে গেছে। এতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত ১০ জন চাকরিপ্রার্থী আজকের পত্রিকাকে জানান, এসব বিসিএসের কার্যক্রম স্থগিত থাকায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন তাঁরা। অনেকে এসব বিসিএসের আশায় অন্য চাকরির পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করেননি। এতে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন তাঁরা।
পাকিস্তানি ব্যান্ড ‘জাল’ এর কনসার্টের টিকেট যেভাবে পাওয়া যাবে
বিভাগীয় পরীক্ষা স্থগিত থাকায় চাকরিতে পিছিয়ে পড়ছেন বলে জানান একাধিক সরকারি চাকরিজীবী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের একাধিক সদস্য জানান, বিভাগীয় পরীক্ষায় পিছিয়ে যাওয়ায় তাঁরা পদোন্নতিতে পিছিয়ে পড়ছেন। একই সুরে কথা বলেন বিসিএস অন্যান্য ক্যাডারের সদস্যরাও।