পৃথিবীতে সম্ভবত এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যার মানসিক চাপ নেই। নেই কোনো দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বলা হয়, যদি ধর্মসম্মত ও পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করা হয় তাহলে বিষন্নতা দেখা দেয় না, এ ছাড়া বিষন্নতা ভাব এলেও তা সহজে দূর হয়ে যাবে। কোরআন মাজিদে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি লাভের বেশকিছু নির্দেশনা এসেছে। যেগুলো পালন করলে সব ধরনের টেনশন ও দুশ্চিন্তা থেকে পরিত্রাণ মিলবে। এর কয়েকটি হলো
বিশ্বাসের বিশুদ্ধতা : অধিকাংশ দুঃখ, কষ্ট ও দুশ্চিন্তার কারণ মন্দ ধারণা ও বিশ্বাস। মানুষের সব কথা ও কর্ম ওই সময় সঠিক ও আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় যখন তার বিশ্বাস সহিহ-শুদ্ধ হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক উম্মতের ভেতর কোনো না কোনো রাসুল পাঠিয়েছি এই পথনির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুতকে পরিহার করো।’ সুরা নাহল : ৩৬
তাকওয়া : তাকওয়া অর্থ আল্লাহর ভয়। এটা এমন একটি গুণ, যা সমস্ত আমলের প্রাণশক্তি। তাকওয়া অর্জনকারী ব্যক্তির অন্তর আখেরাতের ফিকিরে পেরেশান থাকে। আল্লাহতায়ালা আখেরাতের সফরের পাথেয় হিসেবে তাকওয়া হাসিলের নির্দেশ দিয়েছেন। ‘নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে- আল্লাহর ভয়।’ সুরা বাকারা : ৯৭
যে অন্তরে সর্বদা আল্লাহর ভয় থাকবে, সে আখেরাতের চিন্তা ও প্রস্তুতি গ্রহণে ব্যতিব্যস্ত থাকবে। যার এ গুণ হাসিল করার সৌভাগ্য অর্জন হয়ে যাবে, সে দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে খুব সহজেই নিষ্কৃতি পেয়ে যাবে। আল্লাহতায়ালা তাকওয়া অর্জনকারী ব্যক্তির জন্য বিষয়টি এমন সহজ করে রেখেছেন, যা সে উপলব্ধিও করতে পারবে না। ‘যদি সে সব জনপদবাসী ইমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত তবে আমি তাদের জন্য আকাশম-লী ও পৃথিবী উভয় দিক থেকে বরকতের দরজাসমূহ খুলে দিতাম।’ সুরা আরাফ : ৯৬
জিকির : জিকিরকে আল্লাহ অন্তরের প্রশান্তির মাধ্যম নির্ধারণ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এরা সেই সব লোক যারা ইমান এনেছে এবং যাদের অন্তর আল্লাহর জিকিরে প্রশান্তি লাভ করে। স্মরণ রেখ! আল্লাহর জিকিরই সেই জিনিস, যার দ্বারা অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়।’ সুরা রাদ : ২৮
আয়াতে অন্তরের প্রশান্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে, সেটা আল্লাহর জিকিরের মধ্যেই রয়েছে। দুশ্চিন্তা দূর করার ক্ষেত্রে আল্লাহর জিকিরের থেকে কার্যকর আর কোনো ওষুধ নেই। যত নবী-রাসুল পৃথিবীতে এসেছেন তারা কোনো না কোনো বিপদ-মসিবতে পড়েছেন। সেই ক্ষেত্রে তারা বিপদ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর জিকির একটি উত্তম কার্যকর পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। হজরত ইউনুস (আ.) সমুদ্রের তলদেশে মাছের পেট থেকে আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছেন।
নেক আমল : কোরআন মাজিদের বিভিন্ন জায়গায় ভালো কাজের নির্দেশ এবং নেক আমলের প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। ‘যে ব্যক্তিই মুমিন থাকা অবস্থায় সৎকর্ম করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, আমি অবশ্যই তাকে উত্তম জীবনযাপন করাব এবং তাদের তাদের উৎকৃষ্ট কর্ম অনুযায়ী তাদের প্রতিদান অবশ্যই প্রদান করব।’ সুরা নাহল : ৯৭
নামাজের গুরুত্ব : নামাজ মুমিনের মেরাজস্বরূপ, চোখের শীতলতা, অন্তরের প্রশান্তি। সর্বপ্রকার পেরেশানি ও দুশ্চিন্তা দূর করার উত্তম মাধ্যম। ‘হে ইমানদারগণ! ‘হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য লাভ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ সুরা বাকারা : ১৫৩
নেয়ামতের স্বীকার : পেরেশানি দূর করার জন্য মানুষকে আল্লাহর অসীম নেয়ামতের কথা স্বীকার করা এবং এর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা জরুরি। যে নেয়ামতের ব্যাপারে বেশি অঙ্গীকার রয়েছে। এর ফলাফল এই দাঁড়ায় সর্বপ্রকার পেরেশানি নিজে নিজে দূর হয়ে যায় অথবা লাঘব হয়ে যায়। কোরআনের বর্ণনা এমন ‘এবং সেই সময়টাও স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেছিলেন, তোমরা সত্যিকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে, আমি তোমাদের আরও বাড়িয়ে দেব, আর যদি অকৃজ্ঞতা করো, তবে নিশ্চিত জেনে রেখো, আমার শাস্তি অতি কঠিন।’ সুরা ইবরাহিম : ৭
সবর : সবর বা ধৈর্যধারণ-পেরেশানি ও দুঃখ-কষ্ট উপশম করার অন্যতম মাধ্যম। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য লাভ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ সুরা বাকারা : ১৫৩
ইসলামি স্কলারদের মতে, কোরআন-সুন্নাহর শিক্ষা মহান আল্লাহর আদেশ-নিষেধ যত্নের সঙ্গে পালন করা। সর্বদা মানুষের প্রতি ইতিবাচক ধারণা পোষণ করা এবং মানবকল্যাণে ব্রত থাকার
https://bangla-bnb.saturnwp.link/dupurer-vath-ghum/
চেষ্টা করা। এর পাশাপাশি দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে ধর্মীয় বই-পুস্তব পড়ার অভ্যাস করা। বিজ্ঞজনরা অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, যে যত ধর্মমুখী তার জীবন তত বিষন্নতামুক্ত।