কথায় আছে, সময় গেলে সাধন হবে না। কথাটি আসলেই সঠিক। তাই সময়ের কাজ সময়ে করতে সময় ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই।
আসলে সময় ব্যবস্থাপনার হলো বেশ কিছু গুণ ও অভ্যাসে সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ দক্ষতা, যা আমাদের ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনের কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
কেন সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়ানো উচিত
শিক্ষার্থী কিংবা চাকরিজীবী, সবারই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ব ও চাপ বাড়তে থাকে। যদি সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা আয়ত্ত করা না যায়, তাহলে দেখা যাবে কোনো কাজই ভালোমতো হচ্ছে না। এমনকি পরিবারকেও পর্যাপ্ত সময় দেওয়া যাচ্ছে না।
ফলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হতে পারে। শিক্ষাজীবনে ফলাফল বিপর্যয় হতে পারে। আর কর্মক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে না পারায় ক্যারিয়ারে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না–ও আসতে পারে। সর্বোপরি পারিবারিক জীবন, শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবন হতে পারে অসফল।
অন্যদিকে, ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রেও একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হয়। যদি কোনো কারণে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব না হয়, তাহলে ব্যবসাতে দেখা দেয় মন্দা। তাই পারিবারিক ও কর্মজীবনে ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং সফলতা অর্জন করতে সময় ব্যবস্থাপনা দক্ষতাটির গুরুত্ব অপরিসীম।
সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়ানোর উপায়—
১.
সঠিকভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ করা
স্মার্ট (SMART) মেথডে লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।
Specific = সুনির্দিষ্ট
Measurable = পরিমাপযোগ্য
Attainable = অর্জনযোগ্য
Relevant = প্রাসঙ্গিক
Timely = সময়ের কাজ সময়ে
২.
কাজের অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি
আপনার কাজগুলোকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চার ভাগে ভাগ করুন।
Important and urgent (গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি): এই কাজগুলো এখনই করে ফেলুন।
Important but not urgent (গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু খুব জরুরি নয়): এই কাজটি আরেকটু পর করতে পারেন।
Urgent but not important (জরুরি কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়): আগে সিদ্ধান্ত নিন কাজটি করবেন কি না। যদি করতে চান, তাহলে তাৎক্ষণিক করে ফেলুন।
Not urgent and not important (জরুরি নয় এবং গুরুত্বপূর্ণও নয়): এ কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকুন।
৩.
ডিজিটাল ক্যালেন্ডার বা নোটবুক ব্যবহার
সময় ব্যবস্থাপনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ টুলস হতে পারে ডিজিটাল ক্যালেন্ডার বা ডিজিটাল নোটবুকের ব্যবহার। বর্তমানে বিভিন্ন অ্যাপ ও ডিজিটাল ডিভাইসে ক্যালেন্ডার বা নোট লিখে রাখার ব্যবস্থা আছে। যেখানে প্রতিদিন বিভিন্ন সময় কাজের তালিকা তৈরি করে রাখা যায়।
ক্যালেন্ডার বা নোট ব্যবহারের আরেকটা উপকারী দিক হলো অনেক সময় কাজের চাপ বেশি থাকলে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজের কথা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি তা ক্যালেন্ডার বা নোটবুকে লিপিবদ্ধ থাকে, তাহলে সেটি ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
৪.
সময়সীমা নির্দিষ্টকরণ এবং লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ
প্রতিটি কাজ সুসম্পন্ন করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে নিন। কাজের ডেডলাইন না থাকলে কম সময়ে বেশি কাজ করা সম্ভব হয় না এবং কাজের মধ্যে খামখেয়ালিপনা ও ঢিলেমি ভাব দেখা যায়।
বড় কাজের ক্ষেত্রে একটি সর্বোপরি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা থাকতে পারে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে পুরো কাজটি যেন ভালোভাবে সুসম্পন্ন হয়, তার জন্য কাজটিকে ছোট ছোট স্বল্পমেয়াদি অংশে ভাগ করে তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করলে পুরো বড় কাজটি নির্ধারিত সময়ে সুসম্পন্ন করার সম্ভাবনা বাড়ে।
৫.
কাজের মধ্যে বিরতি নেওয়া
যখন আপনি টানা কাজ করতে থাকবেন, তখন আপনার মধ্যে ক্লান্তিভাব ও বিষণ্নতা চলে আসতে পারে। তাই কাজের মধ্যে কিছুক্ষণ বিরতি নিতে পারেন। এই বিরতিতে চা-কফি পান করতে পারেন। অথবা কারও সঙ্গে একটু কথা বলে নিতে পারেন। তবে অতি দীর্ঘ সময় বিরতি নেওয়া ঠিক হবে না, তা আবার সময় অপচয় পর্যায়ে পড়ে যায়।
৬.
কাজ জমিয়ে রাখার অভ্যাস পরিত্যাগ করা
অনেকেই আছেন, আলসেমি করে বা অবহেলাজনিত কারণে সময়ের কাজ সময়ে না করে কাজ জমিয়ে রাখেন। পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, তাঁরা নির্ধারিত সময়ে তাঁদের কাজ শেষ করতে পারেন না। তাই সবার উচিত সময়ের কাজ সময়ে শেষ করার মানসিকতা তৈরি করা। কাজ জমিয়ে রাখার অভ্যাস পরিত্যাগ করা। বর্তমান সময়কে গুরুত্ব দিতে হবে এবং বসে না থেকে এখনই কাজ শুরু করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
৭.
আগে থাকতেই পরিকল্পনা তৈরি করে রাখা
প্রতিটি দিন শুরু করার সময় আপনার কাছে যেন সুনির্দিষ্ট কাজের পরিকল্পনা থাকে যে আজ সারা দিনে কী কী কাজ করতে হবে। প্রক্রিয়াটিকে আপনার অভ্যাসে পরিণত করুন। পাশাপাশি পরবর্তী দিনের কাজের তালিকা তৈরি করে রাখুন, যেন পরের দিন সকালে ভাবতে না হয় যে আপনাকে ওই দিন কী কী কাজ করতে হবে।
তবে শতভাগ কাজের তালিকা যে আপনি আগেই তৈরি করে ফেলতে পারবেন, ব্যাপারটা সব সময় এমন না–ও হতে পারে। অনেক সময় তাৎক্ষণিকভাবে আপনার কাছে নতুন কাজ চলে আসতে পারে এবং আপনার নির্ধারিত কাজের তালিকার বাইরেও সেই কাজটি করার প্রয়োজন পড়তে পারে। ব্যাপারটি মাথায় রাখবেন।
যখন আপনি একটি নির্দিষ্ট দিনের কাজের তালিকা তৈরি করেন, তখন সেখানে জরুরি কাজের জন্য কিছু সময় বরাদ্দ রাখতে পারেন। যদি জরুরি কাজ না থাকে, তাহলে আপনি ওই সময় কী কাজ করবেন, সেটিরও একটি বিকল্প ভাবনা ভেবে রাখতে পারেন। সময় ব্যবস্থাপনার কিছু সুফল আছে।
মানসিক চাপ কম থাকা
যখন আপনি সঠিকভাবে সময় ব্যবস্থাপনা করবেন, তখন আপনি আপনার পুরো কাজটি লিপিবদ্ধ করবেন এবং কাজের একটি শিডিউল তৈরি করবেন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার পুরো কাজের কতটুকু সুসম্পন্ন হয়েছে এবং কতটুকু বাকি আছে। তখন আপনার পুরো কাজের মান ভালো হবে এবং আপনি প্রয়োজনমতো আপনার শিডিউল নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। তখন আপনার মানসিক চাপ কমবে।
নতুন সুযোগ তৈরি করা
চাকরিজীবী কিংবা উদ্যোক্তা, সবার জন্যই সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা নতুন সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিটি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানই চায় এমন কর্মীদের নিয়োগ দিতে, যাঁরা সঠিকভাবে সময় ব্যবস্থাপনা করে কম সময়ে প্রতিষ্ঠান জন্য বেশি কাজ করতে পারেন এবং প্রতিষ্ঠান উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেন।
আপনি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে আপনি সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা জানেন, সে ক্ষেত্রে আপনার চাকরি হওয়ার এবং চাকরিতে উন্নতি করার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।
অন্যদিকে, আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা হন, সে ক্ষেত্রে সঠিক সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আপনি আপনার পুরো উদ্যোগটিকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারবেন এবং আপনার উদ্যোগটিকে সাফল্যমণ্ডিত করতে পারবেন। তাই সফল হতে ও নতুন সুযোগ খুঁজে নিতে সময়ের সদ্ব্যবহার শিখুন।
নিজের জন্য বেশি সময় পাওয়া
যখন আপনি সঠিকভাবে সময় ব্যবস্থাপনা করতে পারবেন এবং গুছিয়ে নিজের কাজগুলো করবেন, তখন নিজের জন্য ব্যক্তিগত সময় বেশি পারেন এবং নিজের শখগুলো পূরণ করার জন্যও বা পরিবারের সঙ্গে কাটানোর জন্য বেশি সময় বের করতে পারবেন। তখন আপনার কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভালো একটি ভারসাম্য বজায় থাকবে।
https://bangla-bnb.saturnwp.link/blogging/
দ্রুত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারা
যাঁরা সঠিকভাবে সময় ব্যবস্থাপনা করতে পারেন, তাঁরা তুলনামূলকভাবে কম সময়ে তাঁদের কাজগুলো সুসম্পন্ন করতে পারেন এবং দ্রুত তাঁদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন।