উচ্চ রক্তচাপ বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটা সাধারণ কিন্তু মারত্মক সমস্যা। চল্লিশোর্ধ্ব বয়সের অনেকেই উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। উচ্চ রক্তচাপ মোটেও হেলাফেলার নয়। এর কারণে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো মারণঘাতী ব্যাধি এসে আপনার জীবনকে সংশয়ে ফেলতে পারে।
তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
লবণ কম খান
বেশি লবণ খাওয়া উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারণ। অ্যামেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, প্রতিদিন ১.৫ গ্রামের বেশি সোডিয়াম গ্রহণ করা উচিত নয়। তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ বলছে, খাবার থেকে সোডিয়াম কমানোর ফলে রক্তচাপ দ্রুত কমে।
খাবার লবণ কিংবা বিট লবণের মূল উপাদান সোডিয়াম। তাই লবণ খাওয়ার প্রবণতা কমান।
ওজন কমান
ওজন বেশি হলে হৃদযন্ত্রের ওপর চাপ বাড়ে, ফলে রক্তচাপ বাড়তে পারে। হার্ভাড টিএইচ স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষকরা দেখিয়েছেন, প্রতি ১ কেজি ওজন কমানোর ফলে রক্তচাপ প্রায় ১ মিমি-এইচজি কমানো সম্ভব।
প্রতিদিন ব্যায়াম করুন
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট মাঝারি ধরনের ব্যায়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। নিয়মিত হাঁটা, সাইক্লিং বা সাঁতার এই ব্যায়ামের মধ্যে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিকের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত ব্যায়াম রক্তচাপ ৫ থেকে ৮ মিমি-এইচজি পর্যন্ত কমাতে পারে।
পটাসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খান
পটাসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। কলা, টমেটো, পালং শাকের মতো খাবারে প্রচুর পরিমাণ পটাসিয়াম থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাসিয়াম গ্রহণ করলে রক্তচাপ কমানো সম্ভব।
মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন
মানসিক চাপ বাড়লে রক্তচাপ বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত মেডিটেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য মতে, মেডিটেশন এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বলছে, যাঁরা বেশি মাত্রায় অ্যালকোহল গ্রহণ করেন, তাঁদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে। তাই অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। সম্ভব হলে অ্যালকোহল গ্রহণ ত্যাগ করুন।
ধূমপান ছেড়ে দিন
ধূমপান উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম প্রধান কারণ। প্রতিটি সিগারেট রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ধূমপান ছাড়ার পর ধীরে ধীরে রক্তচাপ কমতে শুরু করে এবং এক বছরের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
ক্যাফেইন সীমিত করুন
ক্যাফেইন সাময়িকভাবে রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে পারে, বিশেষ করে যাদের ক্যাফেইনের প্রতি সংবেদনশীলতা বেশি। তাই ক্যাফেইনের মাত্রা কমিয়ে রাখা ভালো। মায়ো ক্লিনিক বলছে, ক্যাফেইন গ্রহণের পর রক্তচাপ ১০ মিমি-এইচজি পর্যন্ত বাড়তে পারে। ক্যাফেন উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য বেশ ক্ষতিকর। চা ও কফিতে উচ্চ মাত্রায় ক্যাফেইন থাকে। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগিদের চা-কফি এড়িয়ে চলা উচিৎ।
ডার্ক চকলেট খেতে পারেন
বিট্রিশ মেডিকেল জার্নালের একটি গবেষণা বলছে, অল্প পরিমাণ ডার্ক চকলেট রক্তচাপ কমতে সাহায্য করে। এতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তনালীকে প্রসারিত করে রক্তচাপ কমায়। তাই প্রতিদিন অল্প পরিমাণ ডার্ক চকলেট খেতে পারেন।
পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা
পর্যাপ্ত এবং গভীর ঘুম রক্তচাপ কম রাখতে সাহায্য করে। ঘুমের অভাবে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন পরিচালিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এই টিপসগুলো মেনে চললে রোগিরা দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফল পেতে পারেন। সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা