২৫-৩০ বছরের মধ্যেই মানুষের হাড়ের বৃদ্ধি সম্পন্ন হয়। ৪০ থেকে ৫০ বছরে গিয়ে আমরা হাড়ের ওজন হারাতে থাকি। দেহের হাড়গুলো তখন ক্ষয় হতে শুরু করে। পুরানো হাড়গুলো দ্রুত ক্ষয় হতে থাকে, পাশাপাশি তখন দেহে নতুন হাড়ও তৈরি হয় না।
হাড়ের বিভিন্ন উপাদানকে একসঙ্গে ধরে রাখে ‘বোন ম্যাট্রিক্স’। এটা তৈরি হয় কোলাজেন প্রোটিন এবং হাইড্রোক্সিঅ্যাপাটাইট খনিজ পদার্থ দিয়ে। মানুষ যখন হাড়ের ওজন হারায়, তখন ম্যাট্রিক্স দুর্বল হয়ে পড়ে। এমনকি সামান্যতম চাপেও হাড়ে মাইক্রো ফ্র্যাকচার বা ছোট ফাটল দেখা দিতে পারে। ফলে ম্যাট্রিক্স আরও দুর্বল হয়ে যায়।
ছোট ছোট এই ভাঙনের পরিমাণ বেড়ে গেলে হতে পারে অস্টিওপ্রোসিস। এ রোগে হাড় পাতলা ভঙ্গুর ও দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে পরবর্তীতে হাড়ের ভাঙন আরও বড় ও মারাত্মক হতে পারে। বিশেষ করে মেরুদণ্ড, হিপবোন ও বাহুতে এ ধরনের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা বেশি থাকে। অস্টিওপ্রোসিসের আরেকটা প্রভাব হচ্ছে উচ্চতা হ্রাস। ২০২১ সালে অধ্যাপক হান্নান এবং তাঁর সহকর্মীরা একজন ব্যক্তির ওপর গবেষণা করেন। অস্টিওপ্রোসিসের কারণে ওই ব্যক্তির উচ্চতা প্রায় ৮ ইঞ্চি কমে গিয়েছিল।
উচ্চতা কমার আরেকটি বড় কারণ হতে পারে কার্টিলেজ বা তরুণাস্থি ডিস্কের ক্ষয়। কশেরুকার মধ্যে থাকা তরুণাস্থি আঘাজনিত কারণে ক্ষয় হতে পারে। আবার এমনিতে বয়সের কারণেও শুকিয়ে আসে বা পাতলা হয়ে যায়।
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দেহ সংকুচিত হওয়ার বিষয়ে আমাদের মাংশপেশীও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বয়স্ক ব্যক্তিদের মাংসপেশি ক্ষয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। একে বলে সারকোপেনিয়া। এর জন্য হাড়ের গঠন কাঠামো যেমন দুর্বল হয়, তেমনি হাড় ক্ষয়েরও উচ্চ আশঙ্কা থাকে। কাঁধে চারপাশে পেশি দুর্বল হয়ে পড়ায় সোজা হয়ে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যায়। ফলে উচ্চতা কমে।
বয়স বাড়লে সব প্রাণীর চলাফেরার গতি ধীরে ধীরে কমে। গতি কমায় পেশীর ক্ষয় ত্বরাণিত হতে পারে। তবে গতি কমার কারণে পেশি ক্ষয়ে যায় নাকি পেশি ক্ষয়ের কারণে গতি কমে, সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া প্যাসিফিক মেডিক্যাল সেন্টারের এপিডেমিওলজিস্ট ও পরিচালক পেগি কাউথন বলেন, ‘অস্টিওপ্রোসিসের ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য অ্যালেনড্রোনেটের মতো ওষুধ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সারকোপেনিয়ার জন্য এ ধরনের নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। শারীরিক ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার ইত্যাদি বেশ উপকারে আসে। এমনকি বৃদ্ধরাও ব্যায়ামের মাধ্যমে নিজেদের শারীরিক অবস্থা ঠিক রাখতে পারেন’
শারীরিক উচ্চতা কমার বিষয়টিকে হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। এটা স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। একাধিক গবেষণায় উচ্চতা কমার সঙ্গে শ্বাসকষ্ট এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের মতো গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্পর্ক দেখা গেছে। যদিও কীভাবে এ সম্পর্ক কাজ করে তা এখনও পরিষ্কার নয়।
তবে উচ্চতা কমার বিষয়টি যেহেতু বাস্তব এবং এর প্রভাব শরীরের জন্য ভালো নয়, তাই উচ্চতা কমতে থাকলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। এতে ভবিষ্যতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির হাত থেকে বাঁচা যেতে পারে!