১৯৫৮ সালে সুপার গ্লু বাজারে আনে ইস্টম্যান কোডাক কোম্পানি। পরবর্তীতে অবশ্য তারা ‘সুপার গ্লু’ নাম ব্যবহার শুরু করে। সুপার গ্লু কম-বেশি সবাই ব্যবহার করেছেন। কিন্তু জানেন, এই জিনিসটি বিজ্ঞানের দুর্ঘটনাবশত আবিষ্কার। বলা যায় একটি আবিষ্কারের ব্যর্থতা থেকে সুপার গ্লুর জন্ম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সুপার গ্লুর আবিষ্কার করা হয়। কিন্তু এর পূর্ণ ব্যবহার শুরু হয় আরো পরে।
মাত্র এক বর্গইঞ্চি জায়গায় সুপার গ্লুর হালকা প্রলেপ এক টনের বেশি ওজন ধরে রাখতে পারে। তার এই অসাধারণ শক্তির কারণ হলো এর মধ্যে ‘সায়ানোঅ্যাক্রিলেট’ নামের এক রাসায়নিক তরল। ভাঙা কাচ, প্লাস্টিক, কাঠ- সব জোড়া লাগাতে সুপার গ্লু বেশ কার্যকর।
বর্তমানে এর বহুল ব্যবহার দেখা যায়। কোনো জিনিস ভেঙে গেলে প্রথমেই আমরা যে জিনিসটির কথা ভেবে থাকি, তা হলো সুপার গ্লু। ভাঙা কাচ, প্লাস্টিক, কাঠ- সব জোড়া লাগাতে সুপার গ্লু বেশ কার্যকর। এর উদ্ভাবক ড. হ্যারি কুভার। তিনি যা আবিষ্কার করতে চেয়েছিলেন তা হয়নি, ভুলক্রমে হয়ে গিয়েছিল সুপার গ্লু। পরবর্তীতে সেই আরেক কাজই তাকে ইতিহাসে অমরত্ব দিয়েছে।
১৯৪২ সালের কথা। বিশ্বজুড়ে তখন চলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা। ড. হ্যারি কুভার কাজ মিত্র বাহিনীর পক্ষ কাজ করছিলেন। তিনি তাদের জন্য একটি স্বচ্ছ প্লাস্টিক গান সাইট বানানোর উদ্যোগ নেন। চাইছিলেন যা মিত্র বাহিনীর সৈন্যরা ব্যবহার করতে পারবে। কাজ করতে করতে তিনি এক ধরনের অ্যাডহেসিভ উদ্ভাবন করে ফেললেন।
ড. হ্যারি কুভার খেয়াল করলেন যে, এটা খুব দ্রুততার সঙ্গে একটি জিনিসের সঙ্গে অন্য জিনিস জোড়া লাগাতে পারে। এ সময় এর গুরুত্ব নিয়ে কোনরকম চিন্তা করেননি হ্যারি কুভার। তার প্রায় নয় বছর পর, হ্যারি কুভার তখন কাজ করতেন ইস্টম্যান কোডাক কোম্পানিতে। সেখানে জেট প্লেনের ককপিটের উপরের আচ্ছাদনের জন্য তাপ প্রতিরোধী এক্রিলেট পলিমার বানানোর এক প্রজেক্টের সুপারভাইজার ছিলেন তিনি।
সেখানের আরেক গবেষক ফ্রেড জয়নারের সঙ্গে অ্যাডহেসিভ উদ্ভাবন করেন। যা একজোড়া রিফ্রাক্টোমিটার প্রিজম জোড়া লাগানোর কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলেন যে, ওগুলো অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে একে অপরের সঙ্গে লেগে গিয়েছে। এতে কুপার তার পূর্বের অভিজ্ঞতা ফিরিয়ে এনেছিলেন এবং সফলতা পেয়ে বিষ্মিত হন।
১৯৫১ সালে ড. কুভার ইস্টম্যান কোডাক কোম্পানিতে প্লেনের ককপিটের ওপরের আবরণের জন্য তাপ প্রতিরোধী দ্রব্য তৈরি নিয়ে কাজ করতে গিয়েই পরিপূর্ণ আবিষ্কার হয়ে উঠলো সুপার গ্লু। সেই নয় বছর আগেকার আঠা আবার উদ্ভাবন করেন। এবার আর নিজের আবিষ্কৃত আঠা ‘অ্যাডহেসিভ সায়ানোঅ্যাক্রিলেট’কে অবজ্ঞা করতে পারলেন না কুপার। বরং এর বাজারজাত প্রক্রিয়া শুরু হলো। ইস্টম্যান কোডাক কোম্পানি সুপার গ্লু বাজারজাত শুরু করে।
প্রশ্ন আসে, সুপার গ্লু যে টিউবে থাকে সেটির সঙ্গে জোড়া লেগে যায় না কেন? কারণ, টিউবের ভেতর বায়ু ও পানিশূন্য অবস্থায় একে ঢুকিয়ে ভালোভাবে মুখ আটকে দেওয়া হয়। পানির সংস্পর্শ না পেলে কোন কিছু জোড়া লাগানো সম্ভব না। তাই পানি না পেয়ে সে টিউবের ভেতরের গায়ের সঙ্গে জোড়া লাগতে পারে না। বাইরে বেরিয়ে বাতাসের মধ্যে থাকা জলীয়বাষ্পের সঙ্গে মিশে সে তার কাজ শুরু করে দেয়।