বক্সিং ডে, নাম শুনলেই হয়ত চোখে ভাসতে পারে দুই কুস্তিগিরের লড়াইয়ের কথা। ক্রীড়াজগতে বেশ জনপ্রিয় এক শব্দ বক্সিং ডে। অথচ, প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এই দিনের সঙ্গে বক্সিংয়ের কোনো সম্পর্কই নেই। বরং এই দিনে ক্রিকেট, ফুটবল, হ্যান্ডবল বা ঘোড়দৌড়ের সম্পর্কই বেশি।
বক্সিং ডে ঘিরে মানুষের আগ্রহটাও থাকে তুঙ্গে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে বড় দলগুলোর খেলা অন্তত এই দিনে রাখার চেষ্টা করে এফএ কর্তৃপক্ষ। আবার অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৫৩ বছর ধরে এই দিনে টেস্ট বা ওয়ানডে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সত্য বলতে এই বক্সিং ডের উৎপত্তি হয়েছিল মহৎ এক উদ্যোগ কেন্দ্র করে।
বক্সিং ডে কীভাবে শুরু হলো
প্রথাগতভাবে বক্সিং ডে বলতে বোঝানো হয় ক্রিসমাস বা বড়দিনের পরের দিনটিকে। ক্যালেন্ডারের তারিখ অনুযায়ী যা ২৬ ডিসেম্বর। মূলত এদিন সম্ভ্রান্ত এবং সামর্থ্যবান গৃহস্থরা বক্সে ভরে তাদের গৃহপরিচারকদের উপহার দিতেন। বক্সে ভরে দেওয়ার রীতি থেকেই নাম হয়ে যায় বক্সিং ডে।
কালের বিবর্তনে এবং খ্রিস্টান ধর্মের প্রসারের কারণে ধীরে ধীরে এর পরিধি বাড়তে থাকে। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সামর্থ্যবানেরা বক্স করে নিজ পরিচারকের বাইরে আশপাশের গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিভিন্ন উপহার ও টাকা-পয়সা বিতরণ শুরু করেন। এরপর চার্চের বাইরে রাখা বাক্সে দান বা অনুদান সংগ্রহ করা হয় গরিবদের মাঝে বিতরণের উদ্দেশ্যে। এভাবেই ২৬ ডিসেম্বর হয়ে যায় ‘বক্সিং ডে’।
বক্সিং ডে’র এমনিতেই ছুটির দিন। সেই সঙ্গে থাকে আনন্দের আবহ। আর এই আনন্দ বাড়াতে জমকালো আয়োজনে চলে খেলাধূলা। দর্শকদের আনন্দ দিতে এ দিন পুরোদমে চলে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। ইউরোপের অনেক দেশে বা অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে ঘোড়দৌড়ের পাশাপাশি রাগবি বা আইস হকি লিগেও নজর থাকে। আর ক্রিকেটে বক্সিং ডের বড় আকর্ষণ বক্সিং ডে টেস্ট।
অস্ট্রেলিয়া এবং বক্সিং ডে টেস্ট
প্রতিবছর ২৬ ডিসেম্বর বক্সিং ডেতে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত হয় বিখ্যাত বক্সিং ডে টেস্ট। অস্ট্রেলিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া সফরে থাকা দলের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এই বক্সিং ডে টেস্ট। ঐতিহাসিকভাবে বক্সিং ডেতে ভিক্টোরিয়া এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের মধ্যে শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতো। ১৯৫০ সাল থেকে পুরোপুরি জাতীয় দলও নির্ভর হয়ে যায় এই আয়োজন।
১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছর নিয়ম করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচ। মাঝে কেবল ১৯৮৯ সালে বক্সিং ডেতে টেস্ট ম্যাচের পরিবর্তে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে একটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। আর প্রতি চার বছর অন্তর অ্যাশেজের একটি ম্যাচ বক্সিং ডেতে হয়ে থাকে। যে ধারায় আগামীকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে অজিরা।
https://bangla-bnb.saturnwp.link/%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b8%e0%a6%bf-%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%9c/
নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বক্সিং ডে
অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও বক্সিং ডে পালন করে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউজিল্যান্ড। একসময় ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে নিয়ম করে বক্সিং ডে টেস্ট আয়োজন করা হতো। তবে কিউইরা আপাতত সেই প্রথা থেকে অনেকটা সরে এসেছে। এখন ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি আয়োজন করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকাও বক্সিং ডে টেস্ট শুরু করে দিয়েছে। সাধারণত এটা ডারবানের কিংসমিডের সাহারা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। আগামীকাল এই সূচিতে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবে প্রোটিয়ারা।