অতীতের অজানা ঘটনা অনুমানে মানুষের ক্ষমতা ভবিষ্যত অনুমানের চেয়ে ভালো, এমনই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টমাউথ ইউনিভার্সিটি’র গবেষকদের পরিচালিত নতুন এ গবেষণা প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার কমিউনিকেশনস’-এ। এতে দেখা গেছে, আমরা যখন কোনো গল্পের রহস্য উন্মোচিত হতে দেখি, যেমনটা সিনেমা বা টিভি শো’র বেলায় ঘটে, সেক্ষেত্রে ওই দৃশ্য উন্মোচিত হওয়ার আগেই কী ঘটেছে, তা আমরা তুলনামূলক ভালো অনুমান করতে পারি।
এর আগের এক গবেষণায় উঠে এসেছিল, ভবিষ্যৎ ও অতীত অনুমান করার ক্ষেত্রে মানুষের সক্ষমতা উভয় ক্ষেত্রেই সমান।
তবে, সেইসব গবেষণায় খুবই সহজ উদাহরণ যেমন সংখ্যা বা আকৃতির ক্রম ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে বাস্তব জীবনের বিভিন্ন ঘটনায় দেখা জটিল অবস্থার প্রতিফলন নেই।
আরও পড়ুনঃ ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে যা যা করবেন
বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখতে ডার্টমাউথের মনস্তাত্ত্বিক এবং মস্তিষ্ক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জেরেমি ম্যানিংয়ের নেতৃত্বে গবেষকরা পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন, মানুষ দৈনন্দিন জীবনে ঘটা বিভিন্ন পরিস্থিতির বিপরীতে কেমন আচরণ করে থাকে।
এই গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের সিবিএস-এর ‘হোয়াই উইমেন কিল’ এবং নেটফ্লিক্সের ‘দ্য চেয়ার’ টিভি শো দুটির কয়েকটি দৃশ্য দেখতে হয়েছে।
প্রতিটি দৃশ্য দেখার পর, তাদেরকে হয় গল্পের শুরুর দিকে কী ঘটেছে, অথবা এর পরবর্তীতে কী ঘটতে যাচ্ছে, এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়।
এর ফলাফলে দেখা যায়, লোকজন ভবিষ্যতের তুলনায় অতীতের সম্ভাব্য ঘটনা অনুমানে পারদর্শী।
গবেষকরা এর একটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন, তা হল শোগুলো’র বিভিন্ন চরিত্র নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার তুলনায় অতীত অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রায়শই কথা বলে থাকে।
বাস্তব জীবনেও, মানুষ একই কাজ করে থাকে, যেখানে আমাদের কথাবার্তায় বেশিরভাগ সময় এমন বিষয়গুলোর দিকে মনযোগ থাকে, যা এরইমধ্যে ঘটে গেছে। একইভাবে গবেষণায় অংশ নেওয়া লোকজন ভবিষ্যতের চেয়ে অতীত নিয়ে বেশি তথ্য পেয়েছিলেন।
এ প্যাটার্ন আরও বিস্তৃত পরিসরে কাজ করে কি না, তা দেখতে গবেষকরা কোটিরও বেশি বই, ছবি, টিভি শো ও অন্যান্য সূত্র বিশ্লেষণ করেছেন। এতে তারা খুঁজে পেয়েছেন, কাল্পনিক চরিত্র বা সত্যিকারের মানুষ উভয় ক্ষেত্রেই ভবিষ্যতের চেয়ে অতীত নিয়ে কথা বলার প্রবণতা বেশি।
ভবিষ্যতের তুলনায় মানুষের অতীত নিয়ে কথা বলার প্রবণতা দেড় গুণ বেশি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এ প্যাটার্ন ‘সাইকোলজিকাল অ্যারো অফ টাইম’ বা ‘সময়ের মনস্তাত্ত্বিক তীর’ নামে পরিচিত। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, আমরা নিজেদের ভবিষ্যতের চেয়ে অতীত সম্পর্কে বেশি জানি। এ গবেষণার প্রধান লেখক শিনমিং শু’র ব্যাখ্যা অনুসারে, জ্ঞানের এ অসমতা মানব প্রকৃতির অংশ।
“আমাদের স্মৃতি অতীত সম্পর্কে মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা শুধুই অনুমান করতে পারি,” বলেন তিনি। “আমরা কীভাবে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করি, সেক্ষেত্রেও এ জ্ঞানের ভিন্নতা প্রভাব ফেলে।”