ইন্টারনেট জগতে ক্যাটফিশিং বেশ কয়েক বছর ধরে হয়ে থাকলেও সম্প্রতি এটি অপরাধ হিসেবে ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে গোপনে আরেকজনের ছবি ও ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়ে সেসব দিয়ে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণা করাকেই ইংরেজিতে বলা হয়ে থাকে ক্যাটফিশিং। সাধারণত বিয়ে সংক্রান্ত ওয়েবসাইটসহ পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে এটি ব্যাপকমাত্রায় ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় আর্থিক মুনাফার টোপ গিলে এর মাধ্যমে ভু্ক্তভোগী হন অনেকে।
এর আগে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদক জেনিফার মিরেন্স বলেন, তার মেসেঞ্জারে অপরিচিত এক ব্যক্তি একদিন দাবি করেন যে, প্রাপ্ত বয়স্কদের চ্যাট রুমে তাদের অন্তরঙ্গ কথাবার্তা হয়েছে এবং সেই ব্যক্তি জেনিফারের প্রেমে পড়ে গেছেন। তখন প্রতিবেদক ধারণা করেন যে কেউ হয়ত তার ভুয়া আইডি খুলে এ কাজ করেছেন। এরপর বিষয়টি প্রমাণে অনুসন্ধানে নামেন তিনি নিজেই।
অনুসন্ধানে নেমে জেনিফার জানতে পারেন তার মত হাজারো নারী-পুরুষের অ্যাকাউন্টের মত ভুয়া অ্যাকাউন্ট প্রতিদিনই তৈরি করা হচ্ছে।
প্রাথমিক পর্যায় প্রায় চার বছর আগে, অন্যের অ্যাকাউন্টের ছবি ও তথ্য নিয়ে ভুয়া অ্যাকাউন্ট বানানো আইনের দৃষ্টিতে সুস্পষ্ট অপরাধ হিসেবে গণ্য হতো না।
অনুসন্ধানে নেমে বোঙ্গি মেসিমাঙ্গা এবং জো রিচার্ডস নামে দুইজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে পরিচিত হন জেনিফার। এই দুইজনই অনলাইনে ‘ক্যাটফিশিং’ এর শিকার হয়েছিলেন। মেসিমাঙ্গা হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করেন, ইনস্টাগ্রামে কেউ একজন তার নাম ও ছবি ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট চালাচ্ছেন। তিনি দেখতে পান অ্যাকাউন্টের নাম তার, সেখান ব্যবহার করা প্রোফাইল ছবি তার, ব্যক্তিগত তথ্য সব তারই। তবে অ্যাকাউন্টটির নিয়ন্ত্রণ আরেক জনের কাছে। তখনই তিনি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন এবং সহায়তা চান।
আর জো রিচার্ডসের নাম-ছবি ব্যবহার করে ভুয়া টিনডার প্রোফাইল চালাচ্ছিল কেউ একজন। তিনিও পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। তখন লন্ডনের পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘ক্যাটফিশিং’ আইনত অপরাধ না হলেও ভুক্তভোগীরা প্রতারণার মামলা করতে পারবেন।
এমন প্রতারণা থেকে বাঁচতে কী করবেন
ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড যেন কখনই সহজ না হয়। স্পেশাল ক্যারেক্টার, ডিজিট, ক্যারেক্টার মিলিয়ে পাসওয়ার্ড বেশ শক্তিশালী ও দুর্বোধ্য রাখতে হবে। প্রায়ই ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড পাল্টাতে হবে। একই পাসওয়ার্ড দীর্ঘদিন ব্যবহার না করা নিরাপদ হবে।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, ই-মেইল, অ্যামাজন, টুইটারের মতো পরিষেবা ব্যবহার করার সময়ে সব সময় সাইন আপ নোটিফিকেশন চালু রাখতে হবে। তাহলে আপনি ছাড়া অন্য কেউ যদি আপনার এই সব অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে চায়, তাহলে আপনার কাছে সঙ্গে সঙ্গে নোটিফিকেশন চলে আসবে।
পাবলিক ওয়াই-ফাই থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করা এড়িয়ে চলাই ভালো হয়। কারণ, বেশিরভাগ পাবলিক ওয়াইফাইতেই হ্যাকাররা ওঁত পেতে বসে থাকে। লোভনীয় ই-মেইল দেখলে বুঝেশুনে এগুবেন। বিশেষ করে পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়া মেইলগুলো না খুলে ডিলিট করে দেয়া উচিত।
যখন আপনি নিশ্চিত যে ক্যাটফিশিংয়ের শিকার হয়েছেন তখন সময় নষ্ট না করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হবে। আইনের দৃষ্টিতে ক্যাটফিশিং গুরুত্বর অপরাধ না হলেও সব দেশেই এমন কাজকে প্রতারণা হিসেবে গণ্য করে এর বিরুদ্ধে পুলিশের সাইবার ইউনিট কাজ করে।