টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের বৃহত্তম গ্রুপ জলমহালগুলোর অন্যতম। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা এবং তাহিরপুর উপজেলাস্থিত জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ মিঠা পানির এ হাওর বাংলাদেশের ২য় রামসার এলাকা, প্রথমটি সুন্দরবন।
টাঙ্গুয়ার হাওর
ভারতের মেঘালয়ের খাসিয়া, জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে সারি সারি হিজল-করচ শোভিত, পাখিদের কলকাকলি মুখরিত টাঙ্গুয়ার হাওর মাছ, পাখি এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর এক বিশাল অভয়াশ্রম। বর্তমানে মোট জলমহাল সংখ্যা ৫১টি এবং মোট আয়তন ৬,৯১২.২০ একর। তবে নলখাগড়া বন, হিজল করচ বনসহ বর্ষাকালে সমগ্র হাওরটির আয়তন দাড়ায় প্রায় ২০.০০০ একর। বর্ষায় এর পুরোটাই পানিতে ডুবে থাকলেও শীতে পানি কমতে থাকে। এর বড় একটা অংশ তখন শুকিয়ে যায় যায়।
টাঙ্গুয়ার হাওর (Tanguar Haor) প্রকৃতির অকৃপণ দানে সমৃদ্ধ। এ হাওর শুধু একটি জলমহাল বা মাছ প্রতিপালন, সংরক্ষণ ও আহরণেরই স্থান নয়। এটি একটি মাদার ফিশারী। হিজল করচের দৃষ্টি নন্দন সারি এ হাওরকে করেছে মোহনীয়। এ ছাড়াও নলখাগড়া, দুধিলতা, নীল শাপলা, পানিফল, শোলা, হেলঞ্চা, শতমূলি, শীতলপাটি, স্বর্ণলতা, বনতুলসী ইত্যাদি সহ দু’শ প্রজাতিরও বেশী গাছগাছালী রয়েছে এ প্রতিবেশ অঞ্চলে।
বর্তমানে এ হাওরে রয়েছে ছোট বড় ১৪১ প্রজাতির ২০৮ প্রজাতির পাখি, ১ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ৩৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির কচ্ছপ, ৭ প্রজাতির গিরগিটি এবং ২১ প্রজাতির সাপ। নলখাগড়া বন বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। শীত মৌসুমে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে ব্যাপক পাখির আগমন ও অবস্থানে মুখরিত হয় টাঙ্গুয়ার হাওর।
বিলুপ্ত প্রায় প্যালাসেস ঈগল, বৃহদাকার গ্রে-কিংষ্টর্ক, শকুন এবং বিপুল সংখ্যক অতিথি পাখি ছিল টাঙ্গুয়ার হাওরের অবিস্মরণীয় দৃশ্য। স্থানীয় জাতের পাখি পানকৌড়ি, কালেম, বৈদর, ডাহুক নানা প্রকার বালিহাঁস, গাংচিল, বক, সারস প্রভৃতির সমাহারও বিস্ময়কর। সাধারণ হিসাবে বিগত শীত মৌসুমের প্রতিটিতে ২০/২৫ লক্ষ পাখি টাঙ্গুয়ার হাওরে ছিল বলে অনুমান করা হয়।
কোন কোন স্থানে কিলোমিটারের বেশী এলাকা জুড়ে শুধু পাখিদের ভেসে থাকতে দেখা যায়। টাঙ্গুয়ার হাওর মাছ-পাখী এবং উদ্ভিদের পরস্পর নির্ভরশীল এক অনন্য ইকোসিস্টেম। মাছের অভয়াশ্রম হিসাবে এর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশী। টাংগুয়ার হাওর এর প্রধান দুটি পাখির অভয়ারণ্য হল লেউচ্ছামারা ও বেরবেড়িয়ার বিল।
টাঙ্গুয়ার হাওরের ঠিক মাঝখানটায় সুন্দর বিল হাতিরগাতা। এর চারপাশে রয়েছে বিলগুলো। শীতে হাতিরগাতার বেশিরভাগ এলাকাই শুকিয়ে যায়। কথিত আছে ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজরা শীতে শুকিয়ে যাওয়া মাঠে হাতি চড়াতে আসতেন বলেই এই নাম পেয়েছে জায়গাটি।
কিভাবে যাওয়া যায়
প্রথমে আপনাকে যেতে হবে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে। ঢাকা থেকে সড়ক পথে সুনামগঞ্জ যাওয়া যায়। সায়দাবাদ থেকে শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এনা পরিবহন, মামুন পরিবহনের নন এসি বাস যায় সুনামগঞ্জ। ভাড়া এসি ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা। সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে সাহেববাজার ঘাট পর্যন্ত রিকশায়।
বর্ষাকালে শহরের সাহেব বাড়ি নৌকা ঘাট থেকে ইঞ্জিন বোট বা স্পীড বোট যোগে সরাসরি টাঙ্গুয়া যাওয়া যায়। ইঞ্জিন বোটে ৫ ঘন্টায় এবং স্পীড বোটে ২ ঘন্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে ইঞ্জিন বোটে খরচ হয় ২,৫০০/- থেকে ৩,০০০/- টাকা পক্ষান্তরে স্পীড বোডে খরচ হয় ৭,৫০০/- থেকে ৮,০০০/- টাকা। দু-তিন দিনের জন্য নৌকা ভাড়া করলে প্রয়োজনীয় বাজারসদাই করে নেবেন।
অথবা সুনামগঞ্জ শহরের আগে শুরমা সেতু থেকে লেগুনা কিংবা মোটরবাইকে যেতে হবে তাহিরপুর কিংবা সোলেমানপুর। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে সোলেমানপুর যাওয়াই উত্তম। কারণ তাহিরপুর থেকে সোলেমানপুরের বৌলাই নদীতে এ সময়ে নাব্যতা কমে যায়।
কোথায় থাকবেন
বেসরকারী ব্যবস্থায়পনায় টাঙ্গুয়ার হাওরে রাত্রি যাপনের কোন ব্যবস্থা নেই, তবে সরকারী ব্যবস্থাপনায় ৩ কিঃ মিঃ উত্তর-পূর্বে টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পের রেস্ট হাউজে অবস্থান করা যায়। গ্রীষ্মকালে শহরের সাহেব বাড়ি খেয়া ঘাট পার হয়ে অপর পার থেকে প্রথমে মোটর সাইকেল যোগে ২ ঘন্টায় শ্রীপুর বাজার/ডাম্পের বাজার যেতে হয়। ভাড়া ২০০ টাকা। সেখান থেকে ভাড়াটে নৌকায় টাঙ্গুয়া ঘুরে আসা যায়। সেক্ষেত্রে ভাড়া বাবদ ব্যয় হতে পারে ৩০০-৪০০/- টাকা।
মেয়েরা কী করলে ৩০ মিনিট পর ক্লান্ত হয়ে যায়? অনেকেই জানেন না
এছাড়া সুনামগঞ্জে ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকার মধ্যে থাকার জন্যে হোটেল (Hotel) ভাড়া পাবেন।
হোটেল নূর-পূর্ববাজার স্টেশন রোড সুনামগঞ্জ
হোটেল সারপিনিয়া-জগন্নাথবাড়ী রোড, সুনামগঞ্জ।
হোটেল নূরানী, পুরাতন বাস স্ট্যান্ড , সুনামগঞ্জ।
হোটেল মিজান, পূর্ব বাজার-সুনামগঞ্জ।
হোটেল প্যালেস, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন রোড
সুরমা ভ্যালী আবাসিক রিসোর্ট