হিমোগ্লোবিন উৎপাদন এর জন্য আয়রন অত্যাবশ্যকীয়।হিমোগ্লোবিন এক ধরণের প্রোটিন যা লাল রক্ত কণিকার মধ্যে থাকে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। হিমোগ্লোবিন এর মতোই আর একটি উপাদান হচ্ছে মায়োগ্লোবিন যা মাংসপেশিতে থাকে।
এই মায়োগ্লোবিন এর উৎপাদনের জন্য ও আয়রন প্রয়োজনীয়। প্রাপ্ত বয়স্ক একজন পুরুষ মানুষের জন্য দৈনিক ৮ মিলিগ্রাম আয়রন প্রয়োজন।আর মহিলাদের প্রয়োজন ১৮ মিলিগ্রাম।গর্ভবতী মহিলার দৈনিক ২৭ মিলিগ্রাম আয়রন প্রয়োজন।
শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে আয়রন ডিফিসিয়েন্সি অ্যানেমিয়া হয়।এই প্রকারের অ্যানেমিয়া হলে দুর্বল ও ক্লান্ত লাগার পাশাপাশি মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। সাধারণত শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের আয়রনের ঘাটতি জনিত অ্যানেমিয়া হয়ে থাকে। এর ফলে মহিলাদের প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি হতে পারে। প্রাণীজ আয়রন ও উদ্ভিজ আয়রন এই দুই ধরণের আয়রন পাওয়া যায়। আয়রনের ঘাটতি পূরণের জন্য এই দুই ধরণের আয়রন ই গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এবার তাহলে জেনে নেই আয়রনের উৎস গুলো কি কি?
১। কলিজা
আয়রনের সবচেয়ে ভালো উৎস হচ্ছে কলিজা। এছাড়াও এতে ভিটামিন, খনিজ লবন ও প্রোটিন থাকে।গরুর কলিজাতে আয়রনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এক স্লাইস গরুর মাংসে ৫ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।যারা কলিজা খেতে পছন্দ করেন না তারা ডিম ও লাল মাংস খেতে পারেন।আধা কাপ ডিমের কুসুমে ৩ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে এবং ৩ আউন্স লাল মাংসে ২-৩ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।
২।ডার্ক চকলেট
আপনারা সবাই জেনে খুশি হবেন যে ডার্ক চকলেট আমাদের জন্য ভালো। হ্যাঁ ডার্ক চকলেট আয়রনের একটি ভালো উৎস এবং এতে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও থাকে।
৩। ছোলা
এক কাপ ছোলাতে ৫ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে এবং এতে প্রোটিন ও থাকে। নিরামিষ ভোজীদের জন্য ছোলা আদর্শ খাদ্য। ছোলা খুবই উপাদেয় খাবার। এটা সালাদ ও পাস্তার সাথেও ব্যবহার করা যায়।
৪। কুমড়ার বীচি
এক কাপ কুমড়ার বীচিতে ২ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। সুস্বাদু কুমড়ার বীচি রান্না করে,সালাদের সাথে,সিদ্ধ করে বা ভেঁজে বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। তাই কিছু কুমড়ার বীজ বাসায় রাখুন।
৫। ডাল
আয়রনের একটি ভালো উৎস হল ডাল। এক কাপ ডালে ৬ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে এবং প্রচুর ফাইবার থাকে।এতে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কম থাকে এবং রক্তের সুগার লেভেল ঠিক রাখে।
৬। পালং শাক
এক কাপ রান্না করা পালংশাকে ৬ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, এছাড়াও এতে প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ ও ই থাকে। রান্না করা পালং শাক এর পুষ্টি উপাদান খুব সহজেই শরীর শোষণ করে নিতে পারে। বাচ্চাদের জন্য এটা খুবই ভালো।
৭। সিদ্ধ আলু
সিদ্ধ আলুতে ভিটামিন সি, বি ভিটামিন, প্রচুর পটাশিয়াম থাকার পাশাপাশি উচ্চমাত্রার আয়রন থাকে। খোসা সহ একটি সিদ্ধ আলুতে ৩ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।
এছাড়াও আরো অনেক আয়রন সমৃদ্ধ খাবার আছে, যেমন – কাজুবাদাম, কিশমিশ, টমাটো, মটরশুঁটি, শিমের বীচি ইত্যাদি।আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরে চা বা কফি খাওয়া ঠিক নয়।শরীরে আয়রন যাতে ঠিকমত শুষিত হয় তার জন্য আয়রন জাতীয় খাবারের সাথে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- কমলা, স্ট্রবেরি, ব্রকলি ইত্যাদি খেতে হবে।আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেলে যদি কারো সমস্যা হয় তাহলে আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে।সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।