ভ্রমণ সবাই পছন্দ করে থাকি। আর এই ভ্রমণ যদি সত্যি দেশের বাইরে হয়, তাহলে অবশ্যই থাকতে হবে ভ্রমণ পরিকল্পনা। আসুন জেনে নেই বিদেশ ভ্রমণের আগে-পরের প্রয়োজনীয় কিছু নির্দেশনা-
ভ্রমণকৃত দেশ
ক. প্রথমেই দেখতে হবে আপনি যে দেশে যাবেন, সে দেশের ভিসা আছে কিনা? কিংবা আপনার ভিসা লাগবে কিনা? যদি আপনার পাসপোর্টে ভিসা থাকে তাহলে কোনো কথাই নেই। যদি ভিসা না থাকে অবশ্যই সে দেশের ভিসা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে পাসপোর্টটি আপটুডেট আছে কিনা? পাসপোর্টে ন্যূনতম ছয় মাসের মেয়াদ থাকতে হবে।
খ. যে দেশে যাবেন সে দেশে কোনো ট্রাভেল অ্যাডভাইজরি বা ট্রাভেল অ্যালার্ট আছে কিনা? তা জেনে নিতে হবে। এটি সে দেশের অ্যাম্বাসি থেকে অথবা অ্যাম্বাসির ওয়েব সাইট থেকে জানতে পারবেন। প্রতিটি মানুষের ট্রাভেল অ্যালার্ট জেনেই সে দেশে ভ্রমণ করা উচিত।
গ. বিশ্বের অনেক দেশেই বিশেষত অন অ্যারাইভাল কান্ট্রিগুলোতে নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা থাকে। যেমন- ইয়োলো ফিবার ভ্যাক্সিন, ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট কার্ড, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ইত্যাদি। ভ্রমণের আগে অবশ্যই অ্যারাইভাল চেক লিস্ট জেনে নিতে হবে।
ঘ. আপনি যে দেশে যাবেন সে দেশে অবশ্যই একোমোডেশন বা হোটেল বুকিং থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন অফিসার হোটেল কনফার্মেশন পেপার চাইবে। এটি অবশ্যই সাথে রাখতে হবে।
ঙ. যেই দেশে যাবেন সে দেশে আমাদের দেশের যে অ্যাম্বাসি বা কনসুলেট অফিস আছে। সেখানে গিয়ে নিজের নাম রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। আল্লাহ না করুক যদি কোনো বিপদ হয় তাহলে আমাদের দেশের কনসুলেট অফিস বা সে দেশের সরকার খুব সহজেই সাহায্য করতে পারবে।
নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য
ক. অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় ৩ ঘণ্টা আগে এয়ারপোর্টে উপস্থিত থাকতে হবে। যাতে সময়ের মধ্যেই আপনার ইমিগ্রেশন, বোডিং পাস ও প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিতে পারেন।
খ. একটি ট্রাভেল গাইড বুক বা একজন ট্রাভেল অ্যাটেনডেন্ট সঙ্গে রাখতে পারেন। যাতে খুব সহজেই দর্শনীয় বা প্রয়োজনীয় লোকেশন চিনে নিতে পারেন।
গ. অবশ্যই পাসপোর্টের কালার ফটোকপি সংরক্ষণ করতে হবে। এ সংরক্ষণ সাথে রেখেই করতে পারেন বা ই-মেইলে রাখার মাধ্যমে। যদি মূল্যবান পাসপোর্টটি চুরি বা হারিয়ে গেলে কাছে রাখা সংরক্ষিত কপিটি দিয়ে ভ্রমণ শেষ করে অন্তত দেশে ফিরতে পারবেন। তাছাড়া সাধারণ ডায়েরি অন্তর্ভুক্তিকরণ, হোটেল ও নতুন পাসপোর্ট বানাতে সংরক্ষিত কপিটি দরকার হবে।
ঘ. ভ্রমণের আগে সুস্থতার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। যদি ডাক্তারি পরামর্শ বা প্রয়োজনীয় মেডিসিনের দরকার পরে তবে তা অবশ্যই রাখতে হবে। তাছাড়া এমনিতেই খাবার স্যালাইন, নাপা এক্সট্রা, ডিসপ্রিন ও ভমিটিং ট্যাবলেট সাথে রাখতে হবে। তবে ট্রাভেল ইন্সুরেন্স থাকা ভালো। ইউরোপের প্রতিটি দেশে ট্রাভেল ইন্সুরেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
টাকা সংক্রান্ত
ক. যে দেশে যাবেন সে দেশের কারেন্সি বা ডলার নিতে হবে। কোনো মানি এক্সচেঞ্জার বা ব্যাংক থেকে এ কারেন্সিগুলো পাবেন। বর্তমানে সার্কভুক্ত দেশের জন্য ৫০০০ ডলার ও নন সার্কভুক্ত দেশের জন্য ৭০০০ ডলার অর্থাৎ সর্বসাকুল্যে ১২০০০ ডলার বাৎসরিক ট্রাভেল কোটায় নিতে পারবেন।
খ. ডেবিট কার্ডগুলো কাজ করবে কিনা? তা আপনাকে জেনে নিতে হবে। তবে যেগুলো ইন্টারন্যাশনাল কার্ড যেমন- ভিসা কার্ড, মাস্টার কার্ড, অ্যামেক্স কার্ডগুলো সব দেশে কাজ করে। তবে সব জায়গায় ডেবিট কার্ড গ্রহণযোগ্য নয়। এ জন্য লোকাল কারেন্সি সাথে রাখতে হবে।
ইলেকট্রনিক্স সংক্রান্ত
ক. অবশ্যই একটি পাওয়ার ব্যাংক বা মোবাইল চার্জার রাখতে হবে। এটি খুবই প্রয়োজনীয় জিনিস। অনেক সময় দেশের বাইরে মিলমতো চার্জার পাওয়া যায় না।
খ. স্মার্ট ফোনে অবশ্যই ইন্টারন্যাশনাল রোমিং চালু রাখতে পারেন। যা সবার সাথে যোগাযোগ রাখতে সাহায্য করবে। ইন্টারনেট বিশ্বে এটি খুবই ভালো পদ্ধতি ভ্রমণকারীর জন্য।
গ. যদি কোনো পছন্দনীয় ট্রাভেল অ্যাপস থাকে তা ব্যবহার করতে পারেন। যা ট্রাভেলকে আরো স্মার্ট করে তুলবে।
লাগেজ ও প্যাকেজিং
ক. দৈনিক পরার কাপড় একাধিক সেট নিবেন। যাতে একটি হারিয়ে গেলে অন্যটি দিয়ে কাজ চালাতে পারেন। এটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
খ. প্রতিটি এয়ারলাইন্সে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ লাগেজ বহন করতে পারবেন, তবে সাধারণত ট্রলি লাগেজে সর্বোচ্চ ২৩ কেজি ও হ্যান্ড লাগেজে সর্বোচ্চ ৭ কেজি পর্যন্ত নিতে পারবেন। সেটি মাথায় রেখে লাগেজ গোছাতে হবে। নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি হলে ভাড়া গুনতে হতে পারে।
গ. ভ্রমণের সময় সাথে হালকা খাবার রাখুন, যা আপনাকে দেবে বাড়তি এনার্জি। তাছাড়া যতক্ষণ পর্যন্ত ভালো কোনো রেস্টুরেন্ট না পাচ্ছেন, এটা দিয়ে কাজ চালাতে পারবেন।
ভ্রমণ থেকে ফিরে
ক. ভ্রমণ থেকে ফিরে ব্যাংক ও ডেবিট কার্ড ইস্টেটমেন্ট চেক করে নিতে পারেন। যা অনেকেই করেন না। এটি একজন স্মার্ট ট্রাভেলারের জন্য শোভনীয় নয়।
খ. যদি স্মার্ট ফোনে কোনো ট্রাভেল অ্যাপস বা ট্রাভেল প্যাকেজ চালু থাকে তা বন্ধ করে নিবেন।
গ. যদি ভ্রমণের সময় ই-মেইল চেক করতে না পেরে থাকেন। তবে এসেই সবাইকে প্রয়োজনীয় ই-মেইলের উত্তর পাঠান।
ঘ. শরীরের যত্ন নিন। কারণ শরীরের ওপর অনেক ধকল গিয়েছে। সুতরাং শরীরকে সময় দিন।
ঙ. উঠানো ছবিগুলোকে ফিল্টার করে নিন। প্রয়োজনে ছবির পাশে নাম, লোকেশন ও তারিখ লিখে রাখুন। আর সংরক্ষণ করুন আপনার ফেসবুক ফোল্ডারে।
চ. ট্রাভেল ইন্সুরেন্স থাকার পরেও যদি কোনো সার্ভিস না পেয়ে থাকেন, ইন্সুরেন্স ক্লেইম করুন ভ্রমণ থেকে ফিরেই।
ছ. বন্ধুদের সাথে ভ্রমণের কথা শেয়ার করুন। প্রয়োজনে কাউকে কৃতজ্ঞতার কথা জানান। যিনি হয়ত এ ভ্রমণে কোনো না কোনোভাবে সাহায্য করেছেন।
জ. পরিকল্পনা করুন পরবর্তী কোনো ভ্রমণের জন্য।