টানা টানা চোখ, লাস্যময়ী ঠোঁট। চেহারায় যেন চুম্বকের আকর্ষণ। তার চোখের চাহনি, ঠোঁট ও শরীর দেখে আপনার চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ইনস্টাগ্রামে তার ১ লাখ ৯০ হাজার ফলোয়ার। নিজেকে একজন ফ্যাশন মডেল হিসেবে পরিচয় দেন। নাম নয়না অবতার, থাকেন মুম্বাইয়ে। তবে এই মডেলকে নিয়ে হঠাৎ আলোচনার কারণ কী? কত কত সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার এরই তো এর থেকে আরো অনেক বেশি ফলোয়ার রয়েছে। তাহলে হঠাৎ কী এমন হলো যে নয়না অবতার উঠে এল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে?
এই নয়না যেসে ইনফ্লুয়েন্সার নয়, তিনি হলেন ভার্চুয়াল ইনফ্লুয়েন্সার। যাকে ল্যাব অর্থাৎ গবেষণাগারে তৈরি করা হয়েছে। নয়না হলো ভারতের অন্যতম ভার্চুয়াল ইনফ্লুয়েন্সার, জনপ্রিয়তা তাকে একপ্রকার সুপারস্টার করে তুলেছে এআই। অবতার মেটা ল্যাবের (এএমএল) এআই গবেষকের একটি দল ২০২২ সালে নয়না অবতার তৈরি করেছিল। ল্যাবের সিইও এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা অভিষেক রাজদান গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘নয়নাকে গড়ে তুলতে অনেক পরিশ্রম ও গবেষণা করা হয়েছে।’
কী এই ভার্চুয়াল ইনফ্লুয়েন্সার?
ভার্চুয়াল ইনফ্লুয়েন্সার হচ্ছে কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরি এআই-ভিত্তিক চরিত্র। তাদের সেলিব্রিটির মতোই ফ্যান ফলোয়িং থাকে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বলতে পারেন এরা ‘ডিজিটাইজ়ড মানুষ’ বা ‘ডিজিটাল মানুষ’। এদের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব রয়েছে। মিউজিক ভিডিও থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিজ্ঞাপণেও দেখা যায় তাদের। নয়না অবতারও এমনই এক ভার্চুয়াল ইনফ্লুয়েন্সারদের একজন। ইনস্টাগ্রামে নয়না অবতারের সমস্ত ছবি এআই-এর মাধ্যমে এডিট এবং আপলোড করা হয়। এমনকি নয়না যখন কোনো পাবলিক ইভেন্টে যায়, তখন তোলা ছবি এডিট করে আপলোডও করা হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। ফলে সব কিছুই আসল বলে মনে হয়।
নয়নার নিজস্ব গল্প
নয়নার বয়স ২০ বছর এবং সে উত্তর প্রদেশের ঝাঁসি শহরের বাসিন্দা। সম্প্রতি অভিনেত্রী হওয়ার জন্য মুম্বাইয়ে চলে আসে। নয়না তার পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, ‘প্রতিটি মেয়ের মতো আমিও আমার স্বপ্ন পূরণ করতে এবং একজন সফল অভিনেত্রী হতে মুম্বাই আসি। আপনারা সকলে আমাকে ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউবে ফলো করতে পারেন। আমি সবেমাত্র মুম্বাইয়ে এসেছি এবং আমার আপনাদেরই সাহায্য দরকার, যাতে আমি সফল হতে পারি।’ অর্থাৎ, যে কোনো রিয়েল লাইফ অভিনেত্রী বা মডেল হতে-চাওয়া স্মল টাউন তরুণীর যেমন ব্যাকস্টোরি থাকে—গল্পের বা সিনেমার ভাষায় যাকে বলা হয় ‘আন্ডারডগ স্টোরি’ কম্পিউটার জেনারাটেড ‘ভার্চুয়াল ইনফ্লুয়েন্সার’ নয়নারও রয়েছে তেমনই এক কাহিনি। যে কাহিনি ফলোয়ারদের আকৃষ্ট করেছে। বাড়িয়েছে আগ্রহ। করে তুলেছে ক্রেজি।
‘দ্য নয়না শো’ পডকাস্ট
নয়না ইনস্টাগ্রামে ফ্যাশন সম্পর্কিত ছবি শেয়ার করেন। বিভিন্ন উৎসবে কী ধরনের পোশাক পরা উচিত, সে সম্পর্কে তিনি টিপস শেয়ার করেন। তবে এবার তার ভক্তদের জন্য একটি বিশেষ উপহার নিয়ে এসেছে নয়না। সম্প্রতি, নয়না ‘দ্য নয়না শো’ নামে একটি পডকাস্ট চালু করেছে সে। আর এই পডকাস্টটি হবে দেশের প্রথম এআই চালিত পডকাস্ট। আর এই পডকাস্টে বিনোদন জগতের কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার থাকবে। বিপণন তথা ল্যাবের গবেষকরদের মতে, ভারতের ডিজিটাল বিনোদন ব্যবসায় আগামীতে এই ভার্চুয়াল ইনফ্লুয়েন্সারদের উপর বিনিয়োগের মাত্রা বাড়বে।
পডকাস্টের অতিথি তালিকায় রয়েছে
নয়না তার পডকাস্টের মাধ্যমে বলিউড, খেলাধুলা, সঙ্গীত জগতের বিভিন্ন সেলিব্রিটির সাথে যোগাযোগ করবে। এই পডকাস্টে আপনি আপনার পছন্দের তারকাদের সাক্ষাৎকার শুনতে পাবেন। আর সবকিছুই করা হবে উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে। এই পডকাস্টের অতিথি তালিকায় রয়েছেন শোভিতা ধুলিপালা, সানিয়া মালহোত্রা, রিচা চাড্ডা, সায়ামি খের, এশা দেওল, হনসিকা মোতওয়ানি, ঋদ্ধিমা পাঠক, নার্গিস ফাকরি, কৃতিকা কামরাসহ আরো অনেকেই।
কোথায় শুনতে পাবেন?
এই পডকাস্টের লক্ষ্য হল এই সেলিব্রিটিদের লাইফ ও কেরিয়ার বিষয়ে মানুষের কাছে তুলে ধরা। তাদের সাথে আড্ডা জমানো। পডকাস্টটি নয়না এবং পপ ডায়েরিজের ইউটিউব চ্যানেলে (নয়নার ইউটিউব চ্যানেলের নাম Naina Avtr) দেখতে পাবেন। যাতে সারা বিশ্বের দর্শকের কাছে এই পডকাস্ট পৌঁছে দেওয়ার সব রকম ব্যবস্থাই করা হবে। পডকাস্টের প্রথম পর্বটি 8 ফেব্রুয়ারি প্রচারিত হয়েছ এবং নয়নার শোয়ের প্রথম অতিথি ছিলেন শোভিতা ধুলিপালা।
নয়নাই কিন্তু দেশে প্রথম নয়
নয়নাকে টেক্কা দেওয়ার জন্য কায়রা রয়েছে। ২১ বছর বয়সী কায়রার ইনস্টাগ্রামে ৯৯ হাজারের বেশি ফলোয়ার রয়েছে। কায়রার বেশিরভাগ ফলোয়ারই পুরুষ। তাদের অনেকে কায়রাকে বিয়ের প্রস্তাবও পাঠান। কারণ বেশিরভাগ পুরুষই মনে করেন কায়রা আসলে একজন রক্তমাংসের নারী। টপ সোশ্যাল ইন্ডিয়া নামে একটি সংস্থা এটি তৈরি করেছে। আর কায়রাকেই ভারতের প্রথম মেটা ইনফ্লুয়েন্সার বলা হয়। কায়রা তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খোলার ৩ মাসের মধ্য়েই ৫০ হাজার ফলোয়ার হয়ে যায়। টপ সোশ্যাল ইন্ডিয়ার বিজনেস হেড হিমাংশু গোয়াল ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কায়রাকে চালু করেছিলেন।
ভবিষ্যৎ কি?
অন্যান্য সেক্টরের পাশাপাশি এআই পরিবর্তন করে দিচ্ছে গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রিকেও। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও এআই এর ব্যবহার বিস্তার হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে। এতে বুঝা যাচ্ছে এই নয়না বা কায়রার জন্ম সৌন্দর্য শিল্পর বাণিজ্যিক স্বার্থে। তবে অনেকেই মনে করছেন এআই কখনওই মানুষের জায়গা নিতে পারবে না। মানুষ যতক্ষণ জানতে পারছে না আসল তথ্য, ততদিনই থাকতে এর গ্রহণযোগ্যতা। তারপরই হু-হু করে কমবে ফলোয়ারের সংখ্যা। আর ফলোয়ার বাড়াতে কিংবা ধরে রাখতে বোল্ড লুকই আসল হাতিয়ার তা ধারেভারে বুঝিয়ে দিচ্ছেন এআই মডেল নির্মাতারা।