কম বয়স থেকে অনেকেরই ধনী হওয়ার আশা থাকে। ধনী হবার কথা শুনলে সবার মনই যেন লাফিয়ে ওঠে, মনে জন্মায় লোভ। কিভাবে ধনী হওয়া যায়, কত তাড়াতাড়ি ধনী হওয়া যায় এসব ঘুরপাক খায় মনের ভেতর। খাবেই না কেন, সবারই তো ইচ্ছা হয় বিলাসী জীবনযাপন করতে, একটু সুখে থাকতে। কিন্তু সবাই তো আর ধনী হতে পারে না, কেউ চেষ্টা করে সফল হয় কেউবা বৃথা চেষ্টা করে যায়।
সঠিক উপায় জানা না থাকায় ধনী হওয়ার সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারে না তারা। এক্ষেত্রে একটি সহজ উপায় হলো ক্রমাগত অর্থ সঞ্চয় করা। এতে উপার্জন যাই থাকুক না কেন, এক পর্যায়ে ধনী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে বিজনেস ইনসাইডার। টাকা-পয়সা সঞ্চয় করা অনেকের কাছেই কঠিন বিষয়। অল্প বয়সে তরুণেরা এ কাজটি সাধারণত করতে পারে না। আর এ কারণে তারা অবসরের সময় ধনী হওয়ার সুযোগটি হারায়।
অল্পবয়স থেকে সঞ্চয় শুরু করলে তা যে কোনো মানুষকেই অবসরের সময় ধনী করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে সঞ্চয়ের অভ্যাসটি গড়ে তোলাই সবচেয়ে বড় বিষয়।একজন যদি তার উপার্জন শুরুর সময়েই প্রতি সপ্তাহে কিংবা মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করতে পারে তাহলে তা এক পর্যায়ে বড় অংকের টাকায় রূপান্তরিত হবে। এ বিষয়টির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনি কত তাড়াতাড়ি এ সঞ্চয় শুরু করলেন। এক্ষেত্রে দেরি করার অর্থ হলো আপনি ধনী হওয়ার সুযোগটি হারালেন।
এ বিষেয়ে একজন ফাইন্যান্সিয়াল প্ল্যানার ফার্নুস টোরাবি বলেন, ‘মানুষ প্রায়ই বিভ্রান্ত হয়ে যায় যখন তারা চিন্তা করে প্রতিদিন তার কত টাকা দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাস্তবতা হলো, কত টাকা আপনি সঞ্চয় করছেন তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো আপনি তরুণ থাকতে কত তাড়াতাড়ি টাকা সঞ্চয় শুরু করলেন এবং তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেন।’ তিনি পরামর্শ দেন, অল্প করে হলেও অর্থ সঞ্চয় করে রাখার। আর এ অর্থ থেকেই আপনি এক পর্যায়ে বিপুল অর্থ পেয়ে যাবেন।
আপনি যদি প্রতিদিন ১০ টাকা করেও সঞ্চয় করেন তাহলে ৩২ বছর পরে তা বড় অংকের টাকায় রূপান্তরিত হবে। এ অর্থ দিয়ে আপনি পরবর্তীতে নিজের অবসরের ব্যয় নির্বাহ করতে পারবেন। এছাড়া আরেকটি বিষয় হলো, যখন আপনার হাতে অর্থ রয়েছে তখন তা খরচ না করে কিছুটা বাড়তি সঞ্চয় করা। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আপনি নিজের উপার্জন কমে যাওয়ার সময়টিতে সংকট মেটাতে পারবেন। অর্থ সঞ্চয়ের এ উপায়টি আপনার নিজের হাতে না রেখে স্বয়ংক্রিয় করে নেয়া যেতে পারে। এজন্য আপনার হাতে টাকা আসার আগেই ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তা নির্দিষ্ট সঞ্চয় অ্যাকাউন্টে সরিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
ধনী ও সফল হওয়ার জন্য সুধু সঞ্চয় করলেই হবে না নয়। অল্প বয়সে ধনী হলে চাই কঠিন অধ্যবসায়। কেননা ধনী হওয়া মটেও সহজ বিষয় না। অধ্যবসয়ের পাশাপাশি কিছু কৌশল অবলম্বন করলে ধনী হওয়ার পাশাপাশি জীবনে সফলতাও আসবে। আর এই ১৫ টি উপায় নিয়েই আজকের লেখা সাজিয়েছি যা সঠিকভাবে অবলম্বন করলে আপনিও কম বয়সে ধনীর তালিকায় নাম লেখাতে পারবেন।
১। গভীর আসক্তি: যে কাজটাই করছেন, সেই কাজের প্রতি আপনার আসক্তি থাকতে হবে। সহজ করে বলতে গেলে, নিজের কাজের প্রতি আপনার ভালোবাসা থাকতে হবে, কাজটাকে উপভোগ করতে হবে। আপনি যে কাজই করুন না কেন, তা যদি কঠোর পরিশ্রমের সঙ্গে করেন, তাতে আজ নয়তো কাল সফলতা আসবেই।
২। একই মানসিকতার মানুষের সান্নিধ্যে থাকুন: আপনার চারপাশে সবসময়ই বিভিন্ন ধরনের ঘোরাফেরা করে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাঁরা নিজেদের লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন নন। নির্দিষ্ট কোনও গতিতে তাঁদের জীবনটা চলে না। এই ধরনের মানুষকে এড়িয়ে চলুন। যাঁদের নিজেদের লক্ষ্য স্থির, যাঁরা সাফল্যকে ছুঁতে দৃঢ় প্রত্যয়ী, তাঁদের সঙ্গে মিশুন, কথা বলুন। আপনিও সাফল্যকে ছুঁতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হবেন। দ্রুত সফলতা অর্জনের জন্যে এ পথের কোন বিকল্প নেই।
৩। একদিক লক্ষ্য করে ছুটে চলবেন না: অনেকেই রয়েছেন যারা সরকারী চাকুরীর পেছনে হন্যে হয়ে ছুটতে থাকেন বা একদিক লক্ষ্য করে তা না পাওয়া পর্যন্ত তার পেছনে ছুটে চলেন। এই কাজটি করবেন না। একদিক লক্ষ্য করে ছুটতে যাবেন না। একটি স্থানে নিজেকে কিছুটা সেট করে নিয়ে নিজের স্বপ্নের পেছনে ছুটতে পারেন। অর্থাৎ কোনো একটি চাকুরীতে ঢুকে নিয়ে তবে সরকারী বা তার চাইতে বড় কোনো স্থানের চাকরী খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যান।
৪। ‘শো অফ’ করার কোন প্রয়োজন নেই: শো অফ করা আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পরেছে। নিজের জিনিশ অন্যের কাছে জাহির করতে ব্যস্ত আমরা। যেটা মোটেও শোভিনীয় নয়। আপনার যা রয়েছে, তা অন্যের কাছে জাহির করার চেষ্টা করবেন না। আপনি সত্যিই যদি কিছু অর্জন করতে পারেন, আপনার মধ্যে গুণ থাকলে, মানুষ এমনিতেই আপনাকে মান্য করবে। পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই।
৫। আত্মবিনিয়োগ করুন: আত্মবিনিয়োগ অর্থ আপনি যে কাজটি করছেন, তাতে মনপ্রাণ ঢেলে দেয়া। কাজে মনপ্রান ঢেলে দিলে আমাদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকে। আর কোন কাজ আত্মবিশ্বাসের সাথে করলে মন দিয়ে করলে সেই কাজ ভালো ভাবে সম্পাদন হয় এবং সেই কাজে সাফল্য আসেই। কথায় বলে, ফলের আশা করবেন না, কাজ করে যান। কিন্তু বাস্তব বলছে, আপনি যদি সত্যিই কাজের মধ্যে নিজেকে সঁপে দেন, তাহলে ফলও পাবেন হাতেনাতে।
৬। লক্ষ্যের ব্যাপারে স্পষ্ট হোন: সফলতা পাওয়ার আগে সবার আগে প্রয়োজন নিজের লক্ষ্যকে স্থির করা। নিজের লক্ষ্যই যদি আপনার কাছে অস্পষ্ট হয়, তাহলে তো তাকে ছোঁয়া কখনই সম্ভব নয়। লক্ষ্য ছাড়া সাফল্যের শীর্ষচূড়ায় পৌঁছানো সম্ভব নয়। লক্ষ্যই হচ্ছে সাফল্যের সিঁড়ি সরূপ। লক্ষ্যই সাফল্যের ভিত্তি স্থাপন তৈরী করে দেয়। বলা যেতে পারে সাফল্যের নীল নকশা। তাই সাফল্যের স্বর্ণশিখড়ে নিজেকে আবিষ্কার করতে হলে নিজের লক্ষ্যর ব্যাপারে স্পষ্ট হতে হবে।
৭। প্রতিটি অর্থের হিসেব রাখুন: কোথায়, কখন, কি কারণে কতোটা অর্থ ব্যয় করছেন তার প্রত্যেকটির হিসাব রাখুন। বেহিসেবি অর্থ ব্যয় করে কখনোই ধনী হওয়া সম্ভব নয়। হয়তো মানুসগ আপনাকে কিপটে বলতে পারেন। কিন্তু তারপরও নিজের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে একটু টিটকারি হজম করে নিন।
৮। অর্থ উপার্জনের উপায় খুঁজুন: শুধুমাত্র একটি চাকুরীর আশায় বসে থেকে ভাববেন না আপনি ধনী হয়ে যাবেন। একটি কাজের জন্য বসে থাকলে আপনার টাকার পরিমাণ কখনই বৃদ্ধি পাবে না। আর টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি না পেলে ধনী হওয়া সম্ভব নয়। তাই চাকরির পাশাপাশি অন্য কিছু করুন। ছোটোখাটো কোনো ব্যবসা খোলার চেষ্টা করুন। নিজের উপার্জনের মাধ্যম বাড়িয়ে নিন ২৫ বছরের পর থেকেই।
৯। সঞ্চয় করুন: সঞ্চয় আপনার জীবনের যেকোন সময় অনেক গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আপনি মিতব্যয়ী হওয়ার চেষ্টা করুন, তা আপনার পক্ষেই লাভজনক। সঞ্চয় করাটা অভ্যাসে পরিণত করুন। খুব অল্প বয়সে ধনী হতে পারবেন।
১০। আর্থিক পরিকল্পনা করুন: আর্থিক পরিকল্পনা ব্যবসার ক্ষেত্রে খুবিই গুরুত্বপূর্ণ। পরিকল্পনা ছাড়া আর যাই হোক ব্যবসা হয়না। এবং সকল ক্ষেত্রেই পরিকল্পনার বিকল্প আর কিছুওই নাই। যে কোন ব্যবসায়ে ‘অর্থায়ন’ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনি যদি ছোটো ব্যবসায়ী হন, তা অত্যন্ত জরুরী। আয়ের উৎসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ব্যয় করুন। তার একটি হিসাব রাখুন। বেহিসাবি মানুষ জীবনে উন্নতি সাধন করতে পারে না। তাই নিজের জন্য একটি আর্থিক পরিকল্পনা করুন।
১১। অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার পেছনে অর্থ ব্যয় বন্ধ করুন: অতিরিক্ত এবং অযথা জিনিস কেনার অভ্যাস দূর করে ফেলুন একেবারেই। অনেকেরই দামী মোবাইল বা অন্যান্য অনেক কিছুর শখ থাকে। কিন্তু সেটা পড়ে করলেও চলবে। কেননা ধনী ব্যক্তিরা টাকার অপচয় করে না। তারা বরং টাকা বাচিয়ে কোন প্রয়োজনীয় কাজে সেই টাকা বিনিয়োগ করে এবং বেলাশেষে সেই টাকার অংক দিগুণ হয়। আর ধনী হতে হলে এই গুনে গুণান্বিত হওয়া অত্যন্ত জরুরী। তাই এখন একটু কষ্ট করে এই অযথা জিনিসগুলো ত্যাগ করে দিলে তা আপনার ভবিষ্যতটাকেই উন্নত করবে।
১২। একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করুন: ২৫/৩০/৩৫/৪০ বছর এভাবে করে একটি একটি করে প্ল্যান করে তা পূরণের চেষ্টা করুন। যেমন ২৫ বছর বয়সে এতো বেতনের চাকুরী এবং সেখান থেকে এতো টাকা সঞ্চয়ের লক্ষ্য, ৩০ বছর বয়সে এতো বেতনের চাকুরী বা ব্যবসা শুরু এবং এতো টাকা সঞ্চয়ের লক্ষ্য এভাবে প্ল্যান করে তা পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যান। তাহলে আপনার একটা লক্ষ্য তৈরী হবে এবং যার সিঁড়ি বেয়ে আপনি সফলতার করিডরে পৌঁছে যেতে পারবেন।
১৩। ধার বা লোণ না করার চেষ্টা করুন: যদি প্রতি মাসেই আপনার ধার বা লোণ করে মাস পার করতে হয় তাহলে আপনি কখনোই নিজের উপার্জনের কিছুই রাখতে পারবেন না। ফলে আপনার অর্থের সংখ্যা বৃদ্ধিতে প্রভাব পড়বে। ফলে আপনি পিছিয়ে পড়বেন তাই। ধার বা লোন নেয়া থেকে বিরত থাকুন। মাস শেষে যদি কষ্টও হয় তাহলে একেবারে বিপদে না পড়লে ধার বা লোণ করার অভ্যাস গড়ে তুলবেন না। কারণ এটি এক ধরণের পিছুটানের মতোই কাজ করে। যেটা আপনাকে ধনি হওয়ার পথ থেকে বিচ্যুত করবে।
১৪। বুদ্ধি খাটিয়ে ইনভেস্ট করুন: বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বুদ্ধিই হলো মূল মূলধন। কেননা চিন্তা ভাবনা না করে বোকার মত ভুল জায়গায় বিনিয়োগ করলে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে এইটাই স্বাভাবিক। তাই কোথায় কোন ব্যবসায় ইনভেস্ট করলে লভ্যাংশের কিছু অংশ আপনার অ্যাকাউন্টে জমা হবে সে ব্যাপারে নিজেকে তৈরি করে নিন। নিজের বুদ্ধি এবং জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ইনভেস্ট করার চেষ্টা করুন এবং এমন স্থানে করুন যাতে আপনাকে লসের মুখে পরতে না হয়।
১৫। ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করুন: আপনি যদি চাকুরিজীবী হন, তাহলে সময় বার করে ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করতে পারেন। কেননা চাকরী করে কম বয়সে বেশী অর্থ উপার্জন করা সম্ভব নয় কেননা চাকরীতে পরিমিত টাকা পাওয়া যায়। তাই ছোটখাটো ব্যাবসা শুরু করা উচিৎ আর সেই ব্যবসটা প্ল্যান করে করতে হবে। প্রথমেই যে ব্যবসা থেকে ভালো ফল পাবেন, তা নয়। তবে ধৈর্য্যের সঙ্গে ব্যবসায় আত্মবিনিয়োগ করুন, সফলতা আসবেই। তথ্যসূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ।