আধুনিক প্রযুক্তির যুগে এবার কৃষিকাজেও আধুনিকতার ছোয়া ৷ কৃষিকাজের সুবির্ধাথে ব্যবহৃত হচ্ছে ড্রোন (Drone Use in Agriculture) ৷ এতদিন এক একর জমিতে চাষিদের কীটনাশক অথবা রাসায়নিক সার স্প্রে করতে সময় লেগে যেত প্রায় প্রায় 6 থেকে 8 ঘণ্টা ৷ এবার এই ড্রোনের মাধ্যমে মাত্র আট মিনিটেই এক একর জমিতে তারা কীটনাশক অথবা রাসায়নিক সার স্প্রে করতে পারবেন । এর ফলে সাশ্রয় হবে চাষিদের সময়, শ্রম এবং অর্থ তিনটেই ।
কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা এখনো আমাদের জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ। এক সময় আমাদের কৃষি অর্থনীতির বড় অংশ পাটের মত অর্থকরি ফসলের দ্বারা বেশি প্রভাবিত থাকলেও এখন কৃষি মূলত দেশের ক্রমবর্ধন জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা পূরণের দিকেই অধিক নিবদ্ধ রয়েছে। দেশে চলমান অর্থনৈতিক সংকটে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি এখনো মূল্যস্ফীতি তথা খাদ্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির দিকে নিবদ্ধ।
খাদ্য চাহিদা পূরণে দেশের কৃষিব্যবস্থা একটি বিপরীতমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে খাদ্যের চাহিদা বাড়লেও নানাবিধ কারণে কৃষিজমির পরিমান এবং জমির ঊর্বরতা কমছে। এহেন বাস্তবতায়, উৎপাদন বাড়াতে এবং উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে উন্নত কৃষিবীজ ও আধুনিক যান্ত্রিক কৃষি-কৌশল গ্রহণের বিকল্প নেই। বিশেষত হাওরাঞ্চলের বিশাল কৃষি ফার্মের পাশাপাশি সারাদেশে ক্ষুদ্র ও খ-িত কৃষি খামার ও বাগানে কৃষি উৎপাদনকে সহজলভ্য করে তোলার উপযোগী আধুনিক কৃষিযন্ত্র আমদানি, উদ্ভাবন ও বিপণন জোরদার করার মাধ্যমেই কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত, বেসরকারী প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগ ও কর্মপরিকল্পনা থাকা জরুরি।
নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গৃহিত এবারের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে কৃষিখাতের উৎপাদনশীলতা ও কৃষি প্রযুক্তিখাতকে অগ্রাহ্য করার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল একটি ইংরেজী দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে কৃষিবিদের বক্তব্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এবারের বাজেটে কৃষি প্রযুক্তিখাতকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধানকাটার মওসুম শুরু হওয়ার আগেই হাওরাঞ্চলে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল বা আকস্মিক বন্যার আশঙ্কার মধ্যে ধানকেটে গোলায় তুলতে কৃষকদের দুর্ভোগ ও অনাকাক্সিক্ষত ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে। কৃষকদের এ সমস্যা উত্তরণে আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা অপরিহার্য। সরকার কৃষির আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিক কৃষিব্যবস্থার কথা বললেও সরকারিভাবে তার বাস্তব প্রতিফলন খুবই অপ্রতুল। তবে ধানকাটা নিয়ে কৃষকের দুর্ভোগকে পুঁজি করে সহযোগিতার নামে রাজনৈতিক দলের ধানকাটা ও মাড়াই উৎপাদনের শেষধাপ। এর আগে জমি চাষ, বীজ বপন, চারা রোপন, সেচ, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, আগাছা দমনসহ প্রতিটি স্তরেই কৃষি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে, উৎপাদন খরচসহ কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। একই সময়ে ফসল তুলতে ও বুনতে একসাথে বিপুল সংখ্যক কৃষি শ্রমিকের অভাব পরিলক্ষিত হয়। এ বাস্তবতায় ফসলের উৎপাদন খরচ কমাতে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার বৃদ্ধি করা প্রয়েঅজন।
গত ৫ দশকে দেশের কৃষি গবেষকরা আন্তরিক প্রয়াস, মেধা, দক্ষতা ও উদ্ভাবনী প্রতিভার মধ্য দিয়ে উচ্চ ফলনশীল বীজ ও নতুন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষিতে এক ধরণের বিপ্লব সংঘটিত করতে সক্ষম হলেও কৃষি প্রযুক্তি ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য কৃষিযন্ত্র সুলভ ও সহজলভ্য করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যে ধরণের পরিককল্পনা, বিনিয়োগ ও কার্যকর উদ্যোগ দরকার তা এখনো দেখা যাচ্ছে না। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের প্রতি ইঞ্চি পতিত জমি কাজে লাগানোর কথা বলছে সরকার। ডিজিটালাইজেশনের সাথে সাথে সব ক্ষেত্রেই যখন নতুন নতুন প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগছে, তখন ফসল বোনা ও কাটার জন্য আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন কিংবা আমদানি করা প্রয়োজন। হাওর অঞ্চলে বড় যন্ত্র ব্যবহার করা হলেও ছোট ছোট জমিতে তা ব্যবহার করা যায় না।
https://bangla-bnb.saturnwp.link/%e0%a6%95%e0%a7%8b%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a6%be%e0%a6%ae-%e0%a6%95%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%aa%e0%a6%bf%e0%a6%89%e0%a6%9f%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%85/
এ প্রেক্ষিতে, বুয়েট কিংবা চীনের সহযোগিতায় কৃষির আধুনিক যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন ও আমদানি করা জরুরি। এলাকাভিত্তিক সমবায় পদ্ধতিতে আধুনিক যন্ত্র বা হারভেস্টর ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগকে অনুঘটকের দায়িত্ব পালন করতে হবে। মূল ধারার কৃষিখাত, ফলবাগান, মৎস্যচাষ, পোল্ট্রিশিল্প, ডেয়ারি ও লাইভস্টক খাতের উন্নয়নে প্রতিটি ধাপে সব ধরণের আধুনিক প্রযুক্তি ও যান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রচলন করতে হবে।