ধরুন হঠাৎ পেট ব্যথায় কাবু হয়ে গেলেন, কিন্তু বুঝতে পারছেন না কোন ডাক্তারের কাছে গেলে সঠিক পরামর্শ পাওয়া যাবে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা প্রায়ই পড়ি। যেহেতু শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের রোগের জন্য বিভিন্ন ডিগ্রি নেওয়া ডাক্তার আছেন, সেহেতু বিষয়টি নিয়ে অনেকের প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। চিকিৎসা সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে শুরুতেই ভাবতে হবে যে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ডাক্তার খুঁজছেন নাকি বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য খুঁজছেন।
যদি হঠাৎ করে প্রচণ্ড পেট ব্যথা, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি, হঠাৎ জ্ঞান হারানো, কোনও অঙ্গ অবশ হয়ে পড়া, প্রচুর বমি বা ডায়রিয়া, আঘাত পাওয়া বা শরীরের হাড় ভাঙা, বমি, বিষক্রিয়া ইত্যাদি হয়, তাহলে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে হবে শুরুতেই। এসব পরিস্থিতিতে দ্রুত হাসপাতালের জরুরি বিভাগের শরণাপন্ন হতে হবে। পরবর্তীতে চেকআপের প্রয়োজন হলে নির্দিষ্ট বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাওয়া যেতে পারে।
এছাড়াও একটা বিষয় জানাতে চাই, দেশের বাইরে কেউ অসুস্থ হলে প্রথমেই সাধারণ ডাক্তারের (জেনারেল ফিজিশিয়ান) এর পরামর্শ নিয়ে থাকেন। তিনি প্রাথমিক উপসর্গ এবং অবস্থা দেখে সেই রোগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পাঠান বা রেফার্ড করে থাকেন। যদিও আমাদের দেশে এই রেফারেল পদ্ধতি সেভাবে নেই বললেই চলে।
বিশেষায়িত চিকিৎসার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন ডাক্তারের কাছে যাবেন চিকিৎসা নিতে। জেনে নিন কোন পরিস্থিতিতে কোন ডাক্তার আপনাকে সাহায্য করতে পারবেন-
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ- মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হলেন একজন ডাক্তার যিনি যেকোনো রোগের প্রাথমিক অবস্থা নির্ণয় ও চিকিৎসা করে থাকেন। তবে স্থায়ীভাবে নির্দিষ্ট বিভাগের রোগী হলে সে বিভাগে রেফার্ড করে থাকেন।
ইউরোলজি ও কিডনি বিশেষজ্ঞ- একজন ইউরোলজি ও কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মানুষের মূত্র সংবহনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করে থাকেন। যেমন মূত্রনালীর রোগ, প্রসাবে ইনফেকশন, মূত্রথলি বা কিডনিতে পাথর, মূত্রনালী ও মূত্রথলিতে প্রদাহ, প্রসাবে জ্বালাপোড়া ইত্যাদি। এ সকল রোগের জন্য ইউরোলজি বিশেষজ্ঞের কাছে চিকিৎসার জন্য যাওয়া যেতে পারে।
বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ- অ্যাজমা বা হাঁপানি, শ্বাসকষ্টজনিত বুকে ব্যথা, নিউমোনিয়া ও দীর্ঘদিন যাবত কাশি, ফুসফুসে পানি জমা ইত্যাদি ছাড়াও ফুসফুসের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য রোগের জন্য এই ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য যাওয়া যেতে পারে।
নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ- নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞকে মেডিক্যালের ভাষায় ইএনটি স্পেশালিস্ট ডাক্তার বলা হয়। নাকের পলিপাস, নাকের মাংস বৃদ্ধি হওয়া, কানে কম শোনা, কান দিয়ে পানি পড়া, গলা ও মুখে ঘা ইত্যাদি অর্থাৎ নাক, কান ও গলা সম্পর্কিত রোগের জন্য এই বিভাগের ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন।
গ্যাস্ট্রোলজি, হেপাটোলজি বা লিভার বা যকৃৎ বিশেষজ্ঞ- জন্ডিস, গ্যাসের সমস্যা, হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস, লিভার সিরোসিস, খাদ্যনালি/ পাকস্থলীতে ক্ষত বা ঘা, ক্ষুধামন্দা বা খাবারের অরুচি, লিভারে চর্বি ও পেটের সকল ধরনের পীড়াদায়ক রোগের ক্ষেত্রে এই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন।
স্ত্রীরোগ বা প্রসূতি বিশেষজ্ঞ- যাকে মেডিক্যালের ভাষায় গাইনোকোলজিস্ট বলা হয়ে থাকে। মেয়েদের সকল প্রকার রোগের চিকিৎসায় এ ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন। যেমন অনিয়মিত ঋতুস্রাব, জরায়ু সমস্যা ও জরায়ু টিউমার, স্তনে সমস্যা, বন্ধ্যাত্ব ও বাচ্চা ধারণে অক্ষমতা, গর্ভবতী অবস্থায় সেবা ও ডেলিভারি ইত্যাদির জন্য।
পেডিয়াট্রিশিয়ান বা শিশু বিশেষজ্ঞ- শিশুদের যেকোনো রোগের ক্ষেত্রে শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে আপনার শিশুকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে পারেন।
নেওনাটলজিস্ট- একজন বাচ্চার বয়স যদি ৪ সপ্তাহ অর্থাৎ ১ মাসের কম হয় তবে তাকে নবজাতক বলা হয়ে থাকে। এই অবস্থায় কোনো সমস্যা দেখা দিলে নবজাতক বিশেষজ্ঞের কাছে বাচ্চাকে নিয়ে যেতে পারেন।
কার্ডিওলজিস্ট বা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ- হার্ট বা হৃৎপিণ্ডের যেকোনো সমস্যার জন্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হবে। যেমন হার্ট অ্যাটাক, বুকে ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন), হার্ট ফেইলিওর, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি।
চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ- যাকে মেডিক্যালের ভাষায় বলা হয় ডার্মাটোলজিস্ট। মূলত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা ত্বক, নখ এবং চুলের সমস্যার রোগীদের দেখে থাকেন। যেমন চুলকানি এক্সিমা, ব্রণ, মেসতাসহ ত্বকের কালো দাগ, সকল ধরনের অ্যালার্জি সমস্যা, মহিলাদের ত্বকে অস্বাভাবিক ছাপ (যেমন মুখে অবাঞ্ছিত লোম, দাগ)। এই সমস্যাগুলো ছাড়াও যদি চামড়া সম্পর্কিত কোন রোগ হয় অথবা যৌনাঙ্গে কোন রোগ হয়, তাহলে চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন।
এন্ডোক্রিনোলজিস্ট- যদি কারোর ডায়াবেটিস, হরমোন সংক্রান্ত সমস্যা, থাইরয়েড রোগ থাকে তবে একজন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডাক্তারকে দেখাতে পারেন।
নিউরোলজিস্ট বা নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ- স্ট্রোক, মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরা, মাইগ্রেন, মুখ বেঁকে যাওয়া, হাত-পা ঝিন ঝিন করা ও অবশ হয়ে যাওয়া, হাত-পা কাঁপা, ঘাড়, কোমর ও মেরুদণ্ডের ব্যথা, হাত ও পায়ের শক্তি কমে যাওয়া, খিঁচুনি/ মৃগী রোগ, হাত ও পা এর মাংসপেশী শুকিয়ে যাওয়া এবং শরীরের যেকোনো অঙ্গের প্যারালাইসিস ইত্যাদি সমস্যার জন্য এই ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন।
হেমাটোলজিস্ট বা রক্ত বিশেষজ্ঞ- রক্ত ও অস্থিমজ্জা সম্পর্কিত রোগের জন্য এই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন।
সাইকিয়াট্রিস্ট বা সাইকোলজিস্ট বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ- বিভিন্ন মানসিক সমস্যার চিকিৎসা ও পরামর্শ নেওয়্যার ক্ষেত্রে এই চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন।
অনকোলজিস্ট- কারোর ক্যানসার ধরা পড়লে তাদের জন্য আলাদা বিশেষজ্ঞ রয়েছেন যাদের বলা হয়ে থাকে অনকোলজিস্ট বা ক্যানসার বিশেষজ্ঞ।
সার্জারি বিশেষজ্ঞ- যিনি অপারেশনের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করেন তাকে সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলা হয়। যেমন পিত্তথলির অপারেশন, অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশন, পাইলস ও ফিস্টুলা অপারেশন, সিজারিয়ান অপারেশন, কিডনিতে পাথর এমন সকল সমস্যার জন্য সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে হয়।
অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ- হাড় সম্পর্কিত রোগের জন্য যেমন পা ভাঙা, হাড় জোড়া, হাড় ক্ষয়, হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা এছাড়াও হাঁটুতে ব্যথা, পঙ্গুত্ব, বাত ব্যথাসহ শরীরের হাড়ের সব ধরনের চিকিৎসার জন্য এই ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে যেতে পারেন।